lord shiva mahamrityunjaya

ব্যুরো নিউজ ৩ নভেম্বর ২০২৫ : মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র, যাহা বহুক্ষেত্রে “মুক্তি মন্ত্র” নামে পরিচিত, বৈদিক পরম্পরায় এক মহৎ স্থান অধিকার করিয়া আছে। ইহার শক্তিশালী স্পন্দন ও আধ্যাত্মিক অনুরণনের কারণে এই পবিত্র স্তোত্রটি সুরক্ষা, আরোগ্য এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির নিমিত্ত এক প্রার্থনা স্বরূপ। আসুন, আমরা এই পবিত্র মন্ত্রের উৎস, তাৎপর্য এবং ইহার গভীর উপকারিতা বিষয়ে আলোচনা করি।

 

মন্ত্রের উৎস ও নেপথ্য কথা

মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রের উৎপত্তিস্থল হইল ঋগ্বেদ ( ঋগ বেদ ) । এই মন্ত্র হিন্দু ত্রিমূর্তির সংহারক ও পুনর্জন্মদাতা ভগবান শিবকে উদ্দেশ্য করিয়া রচিত। কিংবদন্তী অনুসারে, ঋষি মার্কণ্ডেয় স্বল্পায়ু লইয়া জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। তাঁহার পিতামাতা তাঁহাকে মৃত্যুভয় হইতে রক্ষা করিবার নিমিত্ত এই মন্ত্রটি দ্বারা আশীর্বাদ করিয়াছিলেন। Markandeya যখন অবিচল ভক্তিভরে এই মন্ত্র জপ করিতেছিলেন, তখন ভগবান শিব স্বয়ং আবির্ভূত হইয়া তাঁহাকে রক্ষা করেন এবং চিরঞ্জীবী হইবার বর প্রদান করেন।

সেই অমর মন্ত্রটি হইল:

“ওঁ ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্। উর্বারুকমিব বন্ধনান্ মৃত্যোর্মুক্ষীয় মাঽমৃতাৎ।।”

সনাতন ধর্মের মহাজাগতিক সংহতি : বিষ্ণুর অবতার ও নবগ্রহ

মহামন্ত্রের নিগূঢ় অর্থ

এই মন্ত্রের প্রতিটি শব্দে এক গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য লুক্কায়িত আছে:

  • “ওঁ ত্র্যম্বকং”: ত্রিনয়নধারী ভগবান শিবকে প্রণাম।
  • “যজামহে”: আমরা তাঁহার পূজা ও অর্চনা করি।
  • “সুগন্ধিং”: যিনি সুগন্ধযুক্ত, অর্থাৎ যিনি শুভ ও পবিত্রতার প্রতীক।
  • “পুষ্টিবর্ধনম্”: যিনি শক্তি ও কল্যাণের পোষক বা বর্ধনকারী।
  • “উর্বারুকমিব বন্ধনান্”: শশা যেমন সহজে বৃন্ত হইতে মুক্তি পায়, তেমনিভাবে…
  • “মৃত্যোর্মুক্ষীয় মাঽমৃতাৎ”: …আমাদেরও মৃত্যুর বন্ধন হইতে মুক্ত করুন এবং অমৃতত্ব (মোক্ষ) প্রদান করুন।

অর্থাৎ, এই মন্ত্রে ত্রিনয়নধারী শিবের নিকট আরোগ্য, পুষ্টি ও দীর্ঘায়ু লাভের জন্য প্রার্থনা জানানো হয় এবং কামনা করা হয় যেন পক্ক শশা যেমন বৃন্ত হইতে মুক্তি পায়, সেইরূপ সহজে যেন মানুষ মৃত্যুর হাত হইতে মুক্তি লাভ করিয়া অমরত্ব অর্থাৎ মোক্ষ প্রাপ্ত হয়।

 

জপের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য ও ফলশ্রুতি

এই পবিত্র মন্ত্র নিয়মিত জপ করিলে মানব জীবনে বহু প্রকার কল্যাণ সাধিত হয়।

  • নৈরাশ্য হইতে সুরক্ষা: মন্ত্র জপের মাধ্যমে ভগবান শিবের দিব্য শক্তিকে আহ্বান করা হয়, যাহা শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক সকল প্রকার অমঙ্গল ও নৈরাশ্য হইতে রক্ষাকারী এক বর্ম সৃষ্টি করে।
  • আরোগ্য ও নবজীবন লাভ: এই মন্ত্রের স্পন্দন সমগ্র সত্তায় সামগ্রিক আরোগ্য সৃষ্টি করে, মানসিক স্বচ্ছতা ও শারীরিক প্রাণবন্ততা বৃদ্ধি করে বলিয়া বিশ্বাস করা হয়।
  • আধ্যাত্মিক মুক্তি: এই মন্ত্র জীবনের ও মৃত্যুর চক্র হইতে মুক্তি প্রার্থনা করে, যাহা আত্মাকে মোক্ষ (পরম শান্তি) লাভে সাহায্য করে।
  • শান্তি ও ইতিবাচকতা: নিয়মিত জপ মনকে গভীর শান্তি প্রদান করে, মানসিক চাপ ও উদ্বেগ হ্রাস করিতে সহায়তা করে।

 

Brahma ; সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার সীমিত উপাসনা: এক বিস্ময়কর রহস্য !

কখন ও কিরূপে জপ করিবেন

সনাতন প্রথা অনুসারে, এই মন্ত্র প্রত্যুষে অথবা মহাশিবরাত্রির পবিত্র সময়ে জপ করা বিধেয়। ভক্তরা শান্ত স্থানে বসিয়া, শব্দ স্পন্দনে মনোযোগ দিয়া, শুভ ফল লাভের নিমিত্ত সাধারণত ১০৮ বার মন্ত্রটি পুনরাবৃত্তি করেন। রুদ্রাক্ষের মালা ব্যবহার করিয়া জপ করিলে মন্ত্রের কার্যকারিতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।

 

চিরায়ত প্রাসঙ্গিকতা

মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র ধর্মীয় সীমানা অতিক্রম করিয়া গিয়াছে। যে-কেহ ভক্তি ও বিশ্বাস সহকারে ইহা জপ করে, তাহাদের সকলকে এই মন্ত্র সান্ত্বনা ও শক্তি প্রদান করে। এই দ্রুত পরিবর্তনশীল জগতে, এই প্রাচীন প্রার্থনাটি মানবাত্মা ও পরমেশ্বরের মধ্যে চিরন্তন সংযোগের কথা স্মরণ করাইয়া দেয় এবং শান্তি, আরোগ্য ও চরম মুক্তির পথে আমাদের পরিচালিত করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর