ব্যুরো নিউজ ১৪ অক্টোবর ২০২৫ : শক্তি, সাহস এবং অমরত্বের প্রতীক হনুমানজি। কিন্তু তাঁর এই অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার উৎস কী? হিন্দু ধর্মগ্রন্থ এবং পুরাণ অনুযায়ী, হনুমানের সমস্ত শক্তির মূলে রয়েছে তাঁর হৃদয়ে রামের নিরন্তর উপস্থিতি। শুধু মন্ত্র জপ নয়, রামের নাম তাঁর অস্তিত্বের স্পন্দন, যা তাঁকে চিরঞ্জীবী করে তুলেছে এবং সমস্ত ভয় থেকে মুক্তি দিয়েছে।
রাম নামই এক সহস্র নামের সমান: পদ্ম পুরাণের মহিমা
রাম নামের অপার শক্তি সম্পর্কে পদ্ম পুরাণ-এ বলা হয়েছে:
“শ্রীরাম রাম নাম সহস্র নামের সমান (শ্রীরাম রাম নাম তত্তুল্যং সহস্রনাম)”—হনুমানের কাছে এটি কোনো সাধারণ শ্লোক নয়, এটি তাঁর সত্তার সঙ্গে ধর্ম, সাহস এবং মহাজাগতিক ঐক্যের জীবন্ত স্পন্দন। তাঁর ভক্তি এই ভেতরের স্পন্দন থেকে অবিচ্ছেদ্য। পণ্ডিতদের মতে, রাবণকে জয় করার মতো রামের বিজয় প্রতীকীভাবে মানুষের ভেতরের ভয়, ক্রোধ এবং অহংকার জয় করারই নামান্তর। হনুমানের অবিরাম রাম-স্মরণই তাঁর আধ্যাত্মিক সাধনা।
হৃদয়ই রামের চিরন্তন মন্দির: সাহস ও প্রজ্ঞার উৎস
রামচরিতমানস-এ হনুমানজির হৃদয়কে রামের চিরন্তন আবাসস্থল বা পবিত্র মন্দির রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি কেবল একটি প্রতীকী ধারণা নয়, এটি আধ্যাত্মিক এবং দার্শনিক সত্য। হৃদয়কে চেতনার কেন্দ্র বলে মনে করা হয়। হনুমানজি রামকে সেখানে স্থান দিয়ে প্রমাণ করেছেন, প্রকৃত ভক্তি বাইরের আনুষ্ঠানিকতার চেয়ে হৃদয়ের গভীরে বাস করে। লঙ্কা পার হওয়া, রাবণের মুখোমুখি হওয়া—তাঁর প্রতিটি বীরত্বপূর্ণ কাজ তাঁর এই ভেতরের মন্দির থেকেই উৎসারিত।
রামের সান্নিধ্যে চিরঞ্জীবী হনুমান
হনুমানজি ‘ চিরঞ্জীবী ‘ বা অমর ভাবে পূজিত হন কারণ রাম সর্বদা তাঁর হৃদয়ে বাস করেন। আনন্দ রামায়ণ-এর মতো ধর্মগ্রন্থে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, রামের এই নিরন্তর স্মরণ তাঁকে কালজয়ী করে রেখেছে। তাঁর অমরত্ব ভেতরের ঐশ্বরিক সংযোগের ফল, যা প্রমাণ করে যে ঈশ্বরকে হৃদয়ে ধারণ করে বাঁচলে সময় এবং নশ্বরতাকে অতিক্রম করা যায়।
Hanumanji : কেন হনুমান হিন্দু পুরাণে সর্ব শক্তিমান ? সাতটি আধ্যাত্মিক কারণ
সঙ্কটমোচন রূপে ভক্তের রক্ষাকর্তা
হনুমানজিকে সঙ্কট মোচন বা বাধা দূরকারী বলা হয়। হনুমান চালিসায় উল্লেখ আছে:
অর্থাৎ, হনুমানকে স্মরণ করলে সকল সঙ্কট দূর হয় এবং সমস্ত কষ্ট মুছে যায়। এই সুরক্ষা আসে কারণ তাঁর হৃদয়ে রাম অবস্থান করেন। এই ভেতরের ঐশ্বরিক উপস্থিতি হনুমানকে ঐশ্বরিক শক্তির একটি জীবন্ত মাধ্যমে পরিণত করেছে, যা তাঁর শরণাপন্নদের সাহস, সুরক্ষা এবং শক্তি প্রদান করে। হনুমানের জীবন এই শাশ্বত সত্যটি শেখায় যে, সত্যিকারের শক্তি ও ভক্তি কেবল বাহ্যিক কর্ম থেকে নয়, বরং ঈশ্বরকে হৃদয়ে ধারণ করার মধ্য দিয়েই জন্ম নেয়।