ব্যুরো নিউজ ১২ জুন : জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হল শ্রী জগন্নাথ দেবের পবিত্র স্নানযাত্রা উৎসব। বুধবার পুরীর মন্দির নগরী জুড়ে ছিল এক অভূতপূর্ব আধ্যাত্মিক উন্মাদনা। ওড়িশা ও ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত হাজার হাজার ভক্ত এই বিশেষ স্নানলীলার সাক্ষী হতে ভিড় জমিয়েছিলেন। এই স্নানযাত্রা বার্ষিক রথযাত্রা উৎসবের এক গুরুত্বপূর্ণ সূচনা পর্ব।
ঐতিহ্যবাহী স্নান ও গজানন বেশ
সকাল থেকেই শ্রী জগন্নাথ দেব, ভগবান বলভদ্র, দেবী সুভদ্রা এবং সুদর্শনকে ঐতিহ্যবাহী ‘পাহান্ডি’ প্রক্রিয়ায় গর্ভগৃহ থেকে স্নান মণ্ডপে নিয়ে আসা হয়। স্নানবেদী বা ‘স্নান মণ্ডপ’ ভক্তদের ভিড়ে পরিপূর্ণ ছিল। পুরোহিতরা ১০৮ কলস সুগন্ধি ও পবিত্র জলে বিগ্রহদের মহাভিষেক সম্পন্ন করেন। এই জল মন্দিরের ভেতরে অবস্থিত ‘সুনাকুয়া’ (সোনালী কুয়া) থেকে সংগ্রহ করা হয়। এই পবিত্র জলে ভেষজ উপাদান মেশানো থাকে বলেও বিশ্বাস করা হয়। স্নান সম্পন্ন হওয়ার পর, দেব-দেবীগণকে ‘গজানন বেশ’ বা ‘হাতি বেশ’-এ সজ্জিত করা হয়। ভগবান জগন্নাথ এই হাতি বেশ ধারণ করেন মূলত তার মহারাষ্ট্রীয় ভক্তদের খুশি করার জন্য, যারা গণেশকে পূজা করেন।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব
স্কন্দ পুরাণ অনুসারে, রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন, যিনি ১২ শতকে কাঠের বিগ্রহগুলি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তিনিই প্রথম এই স্নানযাত্রার প্রবর্তন করেন। এটি ভগবান জগন্নাথের জন্মবার্ষিকী হিসেবেও পালিত হয় এবং ভক্তদের কাছে এটি এক পাপমোচনকারী তিথি হিসেবে বিবেচিত। এই দিনটি জগন্নাথ সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ এই দিনে বিগ্রহদের জনসাধারণের সামনে পবিত্র স্নান করানো হয়।
অনাসর পর্ব এবং রথযাত্রার প্রস্তুতি
ধারণা করা হয়, এই পবিত্র স্নানের পর দেব-দেবীগণ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১৫ দিনের জন্য ‘অনাসর’ বা নিভৃতবাসে চলে যান। এই সময়টিকে ‘অনাসর কালা’ বলা হয়, এবং এই সময়ে ভক্তরা দেব-দেবীর দর্শন পান না। এই সময়কালে দৈতাপতিরা (বিশেষ পুরোহিত যারা আদিবাসী উপাসকদের বংশধর) দেব-দেবীর সেবা করেন এবং তাদের আরোগ্য লাভের জন্য বিশেষ ‘পাঁচন’ বা ভেষজ ঔষধ প্রয়োগ করা হয়। এই সময়ে দেব-দেবীর প্রলেপ ও রং করার কাজও চলে। অনাসর পর্ব শেষ হওয়ার পর ‘নেত্রোৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে দেব-দেবীর নবযৌবন রূপ প্রকাশিত হয় এবং রথযাত্রার ঠিক আগের দিন ভক্তরা তাদের প্রথম দর্শন পান। এরপরই শুরু হয় বিশ্বখ্যাত রথযাত্রা উৎসব।
নিরাপত্তা ও জনসমাগম
এই বৃহৎ উৎসবে নিরাপত্তা ও ভিড় ব্যবস্থাপনার জন্য মন্দির প্রশাসন এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছিল। হাজার হাজার ভক্তের আগমনে পুরীর বাতাস জুড়ে এক অসাধারণ ভক্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল, যা ভগবান জগন্নাথের প্রতি ভক্তদের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসারই প্রকাশ। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি বুধবার পুরীতে ভগবান জগন্নাথের পাহান্ডি আচার এবং স্নান উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন । বার্ষিক রথযাত্রা উৎসবের আগে এই গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি চিহ্নিত হল।