rabindranath tagore residence vandalised Bangladesh

ব্যুরো নিউজ ১২ জুন : বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে অবস্থিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক ভিটে ‘কাছারিবাড়ি’তে স্থানীয় জনতার হাতে ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা দুই বাংলাতেই তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু ভারতের নন, বাংলাদেশেরও গর্ব; তাঁর সাহিত্য, সঙ্গীত ও সমাজভাবনা দুই বাংলার অস্তিত্বে মিশে আছে। সেই রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত স্থানে এমন বর্বর আচরণ নিঃসন্দেহে নিন্দনীয় ও লজ্জাজনক।

কারণ ও ঘটনাপ্রবাহ
 গত ৮ জুন রবিবার, এক পর্যটক পরিবার নিয়ে শাহজাদপুরের কাছারিবাড়ি দর্শনে গিয়েছিলেন। সেখানে গেটের কর্মীদের সঙ্গে তার পার্কিং ফি সংক্রান্ত বচসা হয়। অভিযোগ ওঠে, তাকে অফিসঘরে আটকে রেখে মারধর করা হয়। এর জেরে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিবাদে নামে। মানববন্ধন কর্মসূচির পরে উত্তেজিত জনতা কাছারিবাড়ির অডিটোরিয়ামে হামলা চালায়, ভাঙচুর করে এবং এক পরিচালকের উপর শারীরিক হেনস্থা করে। বিজেপির অভিযোগ, এই হামলা জামাত-ই-ইসলামী এবং হেফাজতে ইসলামের মতো মৌলবাদী সংগঠনগুলির দ্বারা পূর্বপরিকল্পিত ছিল। পাঁচ দিন ধরে এই হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে, যার উদ্দেশ্য ছিল ‘বাংলার সভ্যতা ও সংস্কৃতির ভিত্তি এবং স্তম্ভ’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বিশ্বকে একটি ‘বড় বার্তা’ দেওয়া।

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে

বিজেপির নিন্দা ও আন্তর্জাতিক আবেদন
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিজেপি বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। দলের সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিজেপি সাংসদ ও জাতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোনো সাধারণ ব্যক্তিত্ব নন। যখন তার বাড়িতে হামলা হয়েছে, তার চিন্তাভাবনার ওপর হামলা হয়েছে, আমরা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আবেদন জানাচ্ছি। এটি অন্তর্ভুক্তিতে বিশ্বাসী বিজেপি দলের আবেদন। আমরা একটি বৈশ্বিক আহ্বান জানাচ্ছি যে সকল দেশ যারা নৈতিকতা, সৃজনশীলতা, সংস্কৃতির মূল্য দেয়, তাদের সবাই একত্রিত হয়ে বাংলাদেশে আজ যা ঘটেছে তার নিন্দা করা উচিত।” তিনি জোর দিয়ে বলেন যে তারা কোনো আন্তর্জাতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেন না, তবে এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিষয়, তাই বিজেপি এটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব ও সংবেদনশীলতার সাথে দেখছে।

ধ্বংসের প্রতীক ও মৌলবাদের ছায়া
 ঘটনার পর থেকে কাছারিবাড়ি সাময়িকভাবে দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এই ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে, যারা পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে। তবে এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি পার্কিং বিবাদের ফলাফল নয়, বরং এটি বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং মৌলবাদী শক্তির উত্থানের এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শাহজাদপুরের কাছারিবাড়িতে বসেই ‘চোখের বালি’, ‘চতুরঙ্গ’, ‘ঘরে বাইরে’-এর মতো কালজয়ী উপন্যাস রচনা করেছিলেন। তার অনেক কবিতা ও চিঠিপত্রেও শাহজাদপুরের জীবনের ছাপ স্পষ্ট। সেই ঐতিহাসিক বাড়িতে এই ধরনের হামলা বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপর সরাসরি আঘাত।

আলিপুরদুয়ারের জনসভায় মোদীর বার্তা : ‘নির্মম সরকার’কে উপড়ে ফেলে ‘অপারেশন পশ্চিমবঙ্গ’র ডাক!

বাংলাদেশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
 এই ঘটনায় বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব দফতরের তদন্ত কমিটি গঠনকে স্বাগত জানালেও, তাদের উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। একটি আন্তর্জাতিক মানের হেরিটেজ সাইটে সঠিক নিরাপত্তা ও পর্যটন ব্যবস্থাপনা না থাকাটাই বড় ব্যর্থতা। আরও আশ্চর্যের বিষয়, এত বড় ঘটনার পরেও দেশের শীর্ষ পর্যায় থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক নিন্দা এখনও পর্যন্ত শোনা যায়নি, এবং বাংলাদেশে বসবাসকারী বাঙালি সাহিত্যিক-শিল্পী মহলও এই বিষয়ে খুব জোরালোভাবে মুখ খুলছেন না। রবীন্দ্রনাথ কোনো একটি দেশের কবি নন; তিনি বাংলার কবি, বাঙালির কবি। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা, ভারতেরও জাতীয় গৌরব। তার প্রতি এমন অবমাননা আসলে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির উপরই আঘাত। এই হামলার আমরা কড়া নিন্দা জানাই এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে অবিলম্বে দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করার এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিকে সম্মান সহকারে সুরক্ষিত রাখার অনুরোধ জানাই।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর