ব্যুরো নিউজ ১১ জুন : পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারকারী কমরেড জ্যোতি বসুর ( হ্যাঁ, সেই ৮০ পেরোনো অবিচল নেতা ) জীবনী নিয়ে এবার নাকি বায়োপিক হচ্ছে! সিপিআইএম (CPIM) দলের ফান্ডে তৈরি হচ্ছে এই সিনেমা। একটানা ৮৫৪১ দিন বা প্রায় সাড়ে ২৩ বছর ধরে যিনি বাংলাকে কার্যত ‘একাই সামলেছেন’, তাঁর এই দীর্ঘ রাজত্ব নিয়ে বায়োপিক মানে তো শুধু ইতিহাস নয়, এ যেন এক অলিখিত ‘একনায়কত্বের’ গাথা! প্রশ্ন একটাই, পর্দায় কি সেই অবিচল ‘কমান্ডার’-এর আসল চিত্রই ফুটে উঠবে, নাকি লাল রং আরও গাঢ় হবে?
পার্টির ফান্ডে পার্টি বায়োপিক: ‘লাল’ টাকার নতুন উপযোগিতা?
শোনা যাচ্ছে নাকি সম্পূর্ণ পার্টির ফান্ডেই তৈরি হচ্ছে এই ‘ঐতিহাসিক’ বায়োপিক। আগামী বছরের শুরু থেকেই প্রি-প্রোডাকশনের কাজ শুরু হবে। জ্যোতি বসু রিসার্চ সেন্টারের ব্যানারে এই উদ্যোগ। কমরেড রবীন দেবের মতে, জ্যোতি বসু নাকি শুধু কমিউনিস্ট আন্দোলনের পথিকৃতই নন, ভারতের গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলনেরও এক কিংবদন্তি! বুঝুন তাহলে, ৮৫৪১ দিনের অবিচল ক্ষমতা নাকি গণতন্ত্রের প্রতীক! হয়তো কমরেডদের কাছে ‘গণতন্ত্র’ মানে একটানা একই দলের শাসন। আর এই বায়োপিক নিঃসন্দেহে ভারতীয় রাজনীতির এই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তিত্বের নানা জানা-অজানা ‘শৌর্য’ (এবং কিছু অজানা ‘অত্যাচার’) তুলে ধরবে। রবিন দেব মশাই বলছেন, এই কাজটা শিল্প-সংস্কৃতি জগতের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে করাবেন, যারা “বিষয়টিকে সমৃদ্ধ করুক।” হ্যাঁ, সমৃদ্ধ তো হবেই! ইতিহাস কিছুটা ‘পালিশ’ করে নতুন করে উপস্থাপন করা আর কী!
ভারতীয় সেনা অভিযানের অজানা কাহিনী নিয়ে আসছেন রণদীপ হুডা, ‘অপারেশন কুকরি’
কাস্টিং কমরেড: নাসিরুদ্দিন বনাম ঋত্ত্বিক – কে হবেন ‘একনায়ক’-এর মুখ?
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো কাস্টিং নিয়ে জট। নাসিরুদ্দিন শাহ নাকি জ্যোতি বসুর ভূমিকায় অভিনয় করতে আগ্রহী। যদি সত্যিই উনি করেন, তাহলে সেই ‘চিরশান্ত’ মুখচ্ছবিতে কতখানি ‘চাপা শাসন’ ফুটে উঠবে, সেটাই দেখার বিষয়। আবার অভিনেত্রী ঊষশী চক্রবর্তী ঋত্ত্বিক চক্রবর্তীকে নাম ভূমিকায় দেখতে চান। ঋত্ত্বিক যদি মুখভার করে আড়াই দশক ধরে বাংলার মসনদে বসার অভিব্যক্তি তুলে ধরতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই!
তবে শুধু কমরেড জ্যোতি বসু নন, ছবিতে নাকি আরও কিছু ‘গুরুত্বপূর্ণ’ মহিলা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে, যেমন মণিকুন্তলা সেন, ইলা মিত্র এবং পরবর্তীকালের বৃন্দা কারাট। হ্যাঁ, কমরেডদের একচ্ছত্র পুরুষতান্ত্রিকতার মাঝে কিছু মহিলা মুখ দেখানোটা তো দরকার। হরেকৃষ্ণ কোঙার আর প্রমোদ দাশগুপ্তের মতো ‘দাপুটে’ নেতাদের চরিত্রও নাকি থাকবে। কে জানে, এই ছবিতে হরেকৃষ্ণ কোঙারকে হয়তো চন্দন সেনের মতো কেউ ‘চাষি নির্যাতন’-এর দৃশ্যেও দেখতে পাওয়া যেতে পারে, যদি সেটা ‘ঐতিহাসিক সত্য’ তুলে ধরার সাহস থাকে! পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বা রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতারাও যদি সুযোগ পান, তাহলে তো কথাই নেই। হয়তো কিছু নিরীহ, ‘নির্যাতিত’ সাধারণ মানুষের ভূমিকাতেও তাঁদের দেখা যেতে পারে!
‘মিথ’ ভাঙা হবে, নাকি নতুন ‘মিথ’ তৈরি হবে?
অভিনেতা বাদশা মৈত্র এই উদ্যোগকে ‘খুব ভালো এবং প্রশংসনীয়’ বলেছেন। তিনি মনে করেন, জ্যোতি বসুর যে ‘মাপের’ মানুষ বা তাঁর যে পরিচিতি, তা গোটা বিশ্বের মানুষ দেখবেন। অবশ্যই দেখবেন, বিশেষ করে যারা কমিউনিজমের অন্ধকার দিক সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন! বাদশা মৈত্র আরও বলছেন, “জ্যোতি বসু নিয়ে তো অনেক মিথ রয়েছে। আজকের প্রজন্ম প্রায় কিছুই জানেন না।” এই ‘মিথ’গুলো কি ভাঙা হবে নাকি নতুন করে আরও কিছু ‘মিথ’ তৈরি করা হবে, সেটাই দেখার! তিনি মনে করেন, জ্যোতি বসুর মূল্যায়ন তাঁর রাজনীতিতে আসার সময় থেকে শুরু হওয়া উচিত, যখন ‘বাম সরকার ক্ষমতায় আসার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না’। হ্যাঁ, সেই সময় তিনি ‘ত্যাগ’ করেছিলেন নিজের উজ্জ্বল কেরিয়ার, পারিবারিক স্বচ্ছলতা এবং সুখের-আরামের নিশ্চিত জীবন – শুধু বাংলার মানুষের উপর দীর্ঘ ‘শাসন’ প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
প্রবীণ নাগরিকদের জন্য কেন্দ্রের ঐতিহাসিক ঘোষণা: ১৫ জুন থেকে সারাদেশে বিনামূল্যে ভ্রমণের সুবিধা
দেবদূত ঘোষের মতে, কাস্টিং বাংলার গণ্ডিতে আটকে না থেকে থিয়েটার, টেলিভিশন এবং সিনেমার অভিনেতাদের মধ্যে থেকে হওয়া উচিত। তিনি ‘ইন্টারেস্টিং এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ’ দেখার অপেক্ষায় আছেন। আশা করি, এই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কাজটিতে কেবল ৩৪ বছরের ‘বামফ্রন্ট শাসনের স্বর্ণযুগ’ দেখানো হবে না, বরং সেই সময়ের ‘ভ্রান্ত নীতি’, ‘উন্নয়নের অভাব’ এবং ‘গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ’-এর মতো ‘উজ্জ্বল দিকগুলিও’ তুলে ধরা হবে। তাহলেই এই বায়োপিকটি সত্যিই ‘ইন্টারেস্টিং’ হয়ে উঠবে এবং মনোরঞ্জনের উপযোগী হয়ে উঠবে !