ব্যুরো নিউজ ২৯ অক্টোবর ২০২৫ : রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বুধবার হরিয়ানার অম্বালায় বায়ুসেনা ঘাঁটিতে (Ambala Air Force Station) রাফালে যুদ্ধবিমানে চড়ে দ্বিতীয়বার ভারতীয় বায়ুসেনার (IAF) যুদ্ধবিমানে উড়ানের মাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। তাঁর এই উড়ান ভারতীয় বায়ুসেনার অপারেশনাল প্রস্তুতি এবং ক্রমবর্ধমান আকাশ শক্তির প্রতি আস্থার প্রতীক।
‘অপারেশন সিন্দূর’-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী রাফালে যুদ্ধবিমানটিতেই তিনি এই উড়ান সম্পন্ন করেন, যা গত ২২শে এপ্রিল পাহালগাম সন্ত্রাসবাদী হামলার জবাবে ভারত দ্বারা শুরু করা হয়েছিল।
বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এ. পি. সিং সহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। উড়ানের আগে রাষ্ট্রপতি মুর্মু এয়ার বেসে গার্ড অফ অনার পরিদর্শন করেন। ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলটের পোশাকে সজ্জিত রাষ্ট্রপতি যখন উড়ানের জন্য প্রস্তুত হলেন, তখন তিনি হাত নেড়ে বিদায় জানান।
দ্বিতীয়বার যুদ্ধবিমানে দেশের রাষ্ট্রপ্রধান
ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক রাষ্ট্রপতি মুর্মুর এটি ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমানে দ্বিতীয় উড়ান। এর আগে, ২০২৩ সালের ৮ই এপ্রিল তিনি আসামের তেজপুর বায়ুসেনা ঘাঁটিতে সুখোই-৩০ এমকেআই (Sukhoi-30 MKI) যুদ্ধবিমানে চড়েছিলেন। এর ফলে তিনি তৃতীয় রাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে যুদ্ধবিমানের সর্টি নেওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
পূর্বে সর্টি নেওয়া রাষ্ট্রপতিগণ:
- ডঃ এ.পি.জে. আবদুল কালাম: ৮ই জুন, ২০০৬ (সুখোই-৩০ এমকেআই, লোহেগাঁও)
- শ্রীমতী প্রতিভা পাতিল: ২৫শে নভেম্বর, ২০০৯ (সুখোই-৩০ এমকেআই, লোহেগাঁও)
Operation Sindoor : ভারতীয় রাফালের ‘ভৌতিক’ রণকৌশলে চীন-পাকিস্তানের অপপ্রচার ফাঁস !
রাফালের শক্তি ও ইতিহাস
ফরাসি বিমান প্রস্তুতকারক সংস্থা দাসোঁ এভিয়েশন (Dassault Aviation)-এর তৈরি রাফালে যুদ্ধবিমানগুলি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে অম্বালার বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ভারতীয় বিমানবাহিনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়।
- ‘গোল্ডেন অ্যারোস’: ২০২০ সালের ২৭শে জুলাই ফ্রান্স থেকে প্রথম যে পাঁচটি রাফালে বিমান আসে, সেগুলিকে ১৭ নম্বর স্কোয়াড্রন ‘গোল্ডেন অ্যারোস’ (Golden Arrows)-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
- গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন: রাশিয়ার সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমান (যা ১৯৯৭ সালের জুনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল) এর পর এই রাফালেই হলো ২২ বছরের মধ্যে ভারতীয় বিমানবাহিনীতে যুক্ত হওয়া প্রথম আমদানিকৃত যুদ্ধবিমান।
স্কোয়াড্রন লিডার শিবাঙ্গী সিংয়ের সাথে সাক্ষাৎ
বুধবার রাফালে সর্টির সময় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু স্কোয়াড্রন লিডার শিবাঙ্গী সিংয়ের সাথে সাক্ষাৎ করেন। শিবাঙ্গী সিং হলেন রাফালে ওড়ানো প্রথম ভারতীয় মহিলা পাইলট।
- মিথ্যা প্রচার খণ্ডন: ‘অপারেশন সিন্দূর’-এর সময় পাকিস্তান ভিত্তিহীন মিথ্যা প্রচার করে যে শিবাঙ্গী সিংকে সিয়ালকোটের কাছে বিমান ভূপাতিত হওয়ার পর আটক করা হয়েছে। এই মিথ্যা খবর ভারতীয় বায়ুসেনা (IAF) দ্রুত খারিজ করে দেয় এবং অভিনন্দন অনুষ্ঠানে তাঁর ছবি প্রকাশ করে।
- নতুন মাইলফলক: সাম্প্রতিক সময়ে, গত ৯ই অক্টোবর তাম্বারাম বায়ুসেনা ঘাঁটির ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টরস স্কুলে ১৫৯তম কোয়ালিফাইড ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর কোর্সের (QFIC) সমাপনী অনুষ্ঠানে শিবাঙ্গী সিংকে কোয়ালিফাইড ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর (QFI) ব্যাজ দ্বারা ভূষিত করা হয়। এই স্বীকৃতি তাঁর দক্ষতা এবং ভারতীয় বিমানবাহিনীতে মহিলাদের ক্রমবর্ধমান ভূমিকার পরিচয় বহন করে।
স্কোয়াড্রন লিডার শিবাঙ্গী সিং অম্বালার ‘গোল্ডেন অ্যারোস’ স্কোয়াড্রনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং ‘অপারেশন সিন্দূর’-এর সময় পাকিস্তানের বিমান উস্কানিতে কার্যকরীভাবে জবাব দিতে সহায়তা করেছিলেন। তাঁর দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব তরুণ উচ্চাকাঙ্ক্ষীদের, বিশেষত মহিলাদের, সশস্ত্র বাহিনীর কমব্যাট ভূমিকায় যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করে।
সর্টির বিবরণ
বুধবারের এই রাফালে উড়ানে রাষ্ট্রপতির বিমানটি চালান গ্রুপ ক্যাপ্টেন অমিত গেহানি, যিনি ১৭ নম্বর স্কোয়াড্রন ‘গোল্ডেন অ্যারোস’-এর কমান্ডিং অফিসার। রাষ্ট্রপতিকে এসকর্ট করে ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অমর প্রীত সিং অন্য একটি বিমানে উড়ান করেন। সমগ্র উড়ানটি প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট স্থায়ী হয়।



















