India to inherit British Empire

শুদ্ধাত্মা , ১৯ জুলাই ২০২৫ : যে ব্রিটিশরা একসময় ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করতো, সেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের হৃদপিণ্ড লন্ডনেই এখন ভারতীয়দের জয়জয়কার! সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ব্যারেট লন্ডন’-এর এক চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট অনুযায়ী, লন্ডনের রিয়েল এস্টেট বাজারে সম্পত্তির মালিকানার দৌড়ে ভারতীয়রা সবাইকে ছাড়িয়ে শীর্ষে অবস্থান করছেন। এই খবরটি কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতীয়দের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং কঠোর পরিশ্রমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নিজেদের মেধা, উদ্যোগ আর বিনিয়োগের মাধ্যমে ভারতীয় প্রজন্ম বিদেশের মাটিতেও নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করছে, যা সত্যিই গর্বের বিষয়। এই প্রবণতা শুধু সম্পত্তি ক্রয়ে সীমাবদ্ধ নয়, ব্রিটেনের ঐতিহ্যবাহী কিছু শিল্প সংস্থার মালিকানাতেও এখন ভারতীয়দের পদচিহ্ন স্পষ্ট।

১. লন্ডনে সম্পত্তির মালিকানায় ভারতীয়দের জয়জয়কার: এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন

‘ব্যারেট লন্ডন’-এর রিপোর্ট স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে যে, লন্ডনে সম্পত্তির মালিকানার দিক থেকে ভারতীয়রা এখন শীর্ষে। এর মধ্যে রয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক, অনাবাসী ভারতীয় (NRI), বিদেশি বিনিয়োগকারী, ছাত্র-ছাত্রী এবং পড়াশোনার জন্য লন্ডনে আসা পরিবারগুলো। এই প্রবণতা কেবল একটি অর্থনৈতিক পরিবর্তন নয়, বরং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে এটি অনেক ভারতীয়ের কাছে গভীর গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই খবরটি ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে এবং অনেকেই একে ‘কর্মফল’ বা ‘আইনি উপায়ে উপনিবেশকরণ’ হিসাবে অভিহিত করে কৌতুকপূর্ণ ও তীক্ষ্ণ মন্তব্য করছেন।

Operation Sindoor : ভারতীয় রাফালের ‘ভৌতিক’ রণকৌশলে চীন-পাকিস্তানের অপপ্রচার ফাঁস !

২. লন্ডনে ভারতীয় বিনিয়োগের মূল চালিকাশক্তি

ভারতীয়দের এই সাফল্যের পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ কাজ করছে:

  • শিক্ষার সুযোগ: লন্ডনের বিশ্বমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতীয় পরিবারগুলোকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষার সুবিধার জন্য লন্ডনে সম্পত্তি ক্রয় করেন। পড়াশোনা শেষেও এই সম্পত্তিগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য একটি স্থিতিশীল আয়ের উৎস অথবা বসবাসের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
  • স্থিতিশীল বাজার: লন্ডনের রিয়েল এস্টেট বাজার তার স্থিতিশীলতা এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণ করেছে। ভারতের মতো দেশগুলোর বিনিয়োগকারীরা মূলধন বৃদ্ধি এবং নিয়মিত ভাড়া আয়ের জন্য এই বাজারে বিনিয়োগে অত্যন্ত আগ্রহী।
  • মজবুত আইনি কাঠামো: যুক্তরাজ্যের সুদৃঢ় আইনি কাঠামো এবং সম্পত্তির আইন ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরণের আস্থা তৈরি করেছে, যা তাদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা প্রদান করে।
  • সাংস্কৃতিক সংযোগ: ভারত এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সংযোগ, এবং ব্রিটেনে বিপুল সংখ্যক ভারতীয় প্রবাসীর উপস্থিতি বিনিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে তুলেছে।

৩. বিনিয়োগের ধরন ও আর্থিক চিত্র

ব্যারেট লন্ডন-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয় ক্রেতারা সাধারণত £290,000 থেকে £450,000 (প্রায় ৩ থেকে ৪.৭ কোটি টাকা) মূল্যের এক থেকে তিন বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট এবং হাউস কিনতে আগ্রহী। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, উচ্চ-সম্পদশালী বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত পরিবার পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের ভারতীয়রা লন্ডনের সম্পত্তি বাজারে সক্রিয়ভাবে বিনিয়োগ করছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, ক্রয়কৃত সম্পত্তির প্রায় ৩০% বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে করা হয়, যা থেকে ভাড়া বাবদ নিয়মিত আয় আসে।

৪. অর্থনৈতিক প্রভাবের নতুন মাত্রা: ব্রিটিশ সংস্থাগুলিতে ভারতীয় মালিকানা

ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ভারত থেকে একসময় বিপুল পরিমাণে সোনা, সিল্ক, কৃষি রসদ এবং কাঁচা মাল ইউরোপকে সমৃদ্ধির পথে চালিত করেছিল, যা শিল্প বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করতে সহায়ক হয়েছিল। আজ ঠিক তার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। ব্রিটেনের কিছু ঐতিহ্যবাহী যান নির্মাতা সংস্থা এখন ভারতীয় মালিকানাধীন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • BSA (Birmingham Small Arms): এক ঐতিহ্যবাহী অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, যাদের মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডটি এখন মাহিন্দ্রা ক্লাসিক লেজেন্ডস (Mahindra Classic Legends)-এর অধীনে। সাম্প্রতিক BSA নির্মিত ৬৫০ সিসির গোল্ডস্টার মোটরসাইকেল ভারতে পাওয়া যাচ্ছে ক্রয়ের জন্যে !
  • Triumph Motorcycles: এই বিখ্যাত ব্র্যান্ডটি এখন উৎপাদন এবং বাজার সম্প্রসারণের জন্য বাজাজ (Bajaj)-এর উপর নির্ভরশীল। এদের স্পীড ৪০০ মোটরসাইকেলটি এখন ভারতেই নির্মিত !
  • Norton Motorcycles: বিপ্লবী চে গুয়েভারা দ্বারা ব্যবহৃত এই ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ মোটরসাইকেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ভারতের টিভিএস শিল্পগোষ্ঠী (TVS Group)-এর মালিকানাধীন। নর্টনের কিছু বাহন টিভিএস ভারতীয়দের জন্যে নির্মাণ করতে চলেছে , ৪৫০- ৬৫০ সিসি শ্রেণিতে !

এগুলো শুধুমাত্র কয়েকটি উদাহরণ। শুধু তাই নয়, টোরি দলের নেতা এবং প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক নিজেও ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পগোষ্ঠী ইনফোসিস (Infosys)-এর জামাই এবং একজন গর্বিত হিন্দু  , যা এইসময়ে দু’দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্কের গভীরতাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। এই পরিবর্তনগুলি বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের ক্রমবর্ধমান শক্তি এবং ব্রিটেনের সাথে ঐতিহাসিক সম্পর্কের একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

Refugee : সাহিত্য এবং চলচ্চিত্রের থেকে বহুদূরে কঠিন বাস্তবের পরিণতির শিকার পাক হিন্দু দম্পতি, আন্তর্জাতিক সীমান্তে !

৫. বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতীয়দের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং দক্ষিণ এশীয়দের সামগ্রিক সক্ষমতা

লন্ডনের রিয়েল এস্টেট বাজারে ভারতীয়দের এই অগ্রণী অবস্থান এবং ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ শিল্প সংস্থাগুলির মালিকানায় ভারতীয়দের প্রবেশ বিশ্ব অর্থনীতিতে তাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত। এই সাফল্য কেবল আর্থিক দিক থেকে নয়, এটি কঠোর পরিশ্রম, মেধা এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি মজবুত ভিত্তি তৈরির আকাঙ্ক্ষার ফল। এই প্রবণতা ভারতীয় প্রজন্মের বিদেশের মাটিতে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করার ক্ষমতাকে তুলে ধরে, যা সত্যিই গর্বের বিষয়।

রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, ভারতীয়দের পরেই ইংরেজ এবং পাকিস্তানিরা লন্ডনে সম্পত্তির মালিকানার দিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন। এই তথ্য শুধু ভারতীয়দের নয়, সামগ্রিকভাবে দক্ষিণ এশীয়দের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতাকেও তুলে ধরে। তবে পাকিস্তানের প্রভাবশালীদের ভীরে আজ সন্ত্রাসবাদ ব্রিটিশ সমাজের নিকটে ।

উপসংহার: এক পরিবর্তিত বিশ্ব প্রেক্ষাপট

লন্ডনের রিয়েল এস্টেট বাজারে ভারতীয়দের এই জয়যাত্রা এবং ব্রিটিশ শিল্পক্ষেত্রে তাদের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি বিশ্ব অর্থনীতির গতিশীলতা এবং ভারতীয় প্রবাসীদের বহুমুখী ক্ষমতাকে প্রতিফলিত করে। এটি কেবল একটি আর্থিক সাফল্য নয়, বরং বিদেশের মাটিতে নিজেদের সংস্কৃতি এবং পরিচয়কে আরও শক্তিশালী করার এক ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। একসময় যারা শাসক ছিল, তাদেরই এককালের প্রজাদের দ্বারা এখন শাসিত। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রাজধানীতে ভারতীয়দের সম্পত্তি ও শিল্পে এগিয়ে থাকা, নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন এবং এক পরিবর্তিত বিশ্ব প্রেক্ষাপটের শক্তিশালী ইঙ্গিত।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর