ব্যুরো নিউজ ১১ আগস্ট ২০২৫ : লোকসভা নির্বাচনে ‘ভোট চুরি’ এবং বিহারে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR) প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আজ সংসদ থেকে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে মিছিল করার সময় পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন বিরোধী জোটের একাধিক নেতা। এদের মধ্যে রয়েছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব, শিবসেনার সঞ্জয় রাউত এবং তৃণমূলের সাগরিকা ঘোষ। এই প্রতিবাদ ঘিরে দিল্লির রাজপথে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
পুলিশি বাধার মুখে বিরোধী নেতারা
এদিন সংসদ ভবনের মকর দ্বার থেকে প্রায় ৩০০ বিরোধী সাংসদ মিছিল শুরু করেন। তারা নির্বাচন কমিশনকে “জেগে ওঠার” আহ্বান জানান। মিছিলটি সংসদ থেকে নির্বাচন কমিশনের অফিসের দিকে যাওয়ার পথে পুলিশ তাদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়। এই সময় সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবকে একটি ব্যারিকেড টপকে যেতে দেখা যায়। এই সময় পুলিশি পদক্ষেপের প্রতিবাদে তিনি এবং অন্যান্য সাংসদরা সেখানেই বসে পড়েন। পরে পুলিশ তাদের আটক করে।
রাহুল ও প্রিয়াঙ্কার বক্তব্য
পুলিশ ভ্যানে আটক থাকা অবস্থায় রাহুল গান্ধী সাংবাদিকদের বলেন, “ভোট চুরির সত্যটা দেশের সামনে চলে এসেছে। এই লড়াই রাজনৈতিক নয়, সংবিধান বাঁচানোর লড়াই।” তিনি আরও বলেন যে, “এই লড়াই একজন ব্যক্তি, একটি ভোটের জন্য, তাই আমাদের একটি স্বচ্ছ ভোটার তালিকা দরকার।”
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেছেন, “মোদি সরকার ভীত, তারা কাপুরুষ।”
প্রতিবাদে অজ্ঞান মহুয়া মৈত্র
পুলিশি বাধা ও ধস্তাধস্তির মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্র অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং জ্ঞান হারান। রাহুল গান্ধীকে তাকে সুস্থ করার চেষ্টা করতে দেখা যায়। এই প্রতিবাদে আরেক তৃণমূল সাংসদ মিতালী বাগ এবং কংগ্রেস সাংসদ সঞ্জনা জাটভও অসুস্থ হয়ে পড়েন। সঞ্জনা জাটভকে আরএমএল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর আগে, তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র ও সুস্মিতা দেবকে ব্যারিকেড টপকে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়।
শশী থারুরের আবেদন
কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে ওঠা প্রশ্নগুলির সুরাহা করার আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের গণতন্ত্র এত মূল্যবান যে এটিকে নকল ভোট, একাধিক ঠিকানা বা ভুয়া ভোটের সন্দেহে দুর্বল হতে দেওয়া যায় না।”
‘ভোট চুরি’র অভিযোগ ও অনলাইন প্রচারাভিযান
গত ৭ই আগস্ট রাহুল গান্ধী ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলেন। তিনি বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল লোকসভা আসনে কীভাবে কারচুপি করা হয়েছে, তার বিস্তারিত প্রমাণ পেশ করেন। তার দাবি, এই আসনে এক লক্ষেরও বেশি ভুয়া ভোটার রয়েছে। এরপর কংগ্রেস ‘ভোট চুরি’র বিরুদ্ধে জনসমর্থন সংগ্রহের জন্য একটি অনলাইন প্রচারাভিযান শুরু করে এবং ‘votechori.in/ecdemand’ পোর্টালে অথবা একটি মিসড কল দিয়ে এই আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানায়। যদিও ২০২৪ লোক সভা নির্বাচনে ইন্ডিজোটের ফলাফল ভালোই এবং কর্ণাটকে সেই সময়ও কংগ্রেসের নিজের সরকার ছিল !
প্রশ্ন থেকে যায়
এত কিছু সত্ত্বেও প্রশ্ন থেকে যায় যে মৃত ভোটার এবং জাল ভোটার বাদ পড়লে ইন্ডিজোটের অন্তর্ভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলির আপত্তি কিসে? এমনিতেই দুর্নীতি এবং তোষণ এই দলগুলির ঘোষিত নীতি – তারপরেও আবার এদের মধ্যে থেকে বাঙালি, অবাঙালি, মারাঠি, উত্তর ভারতীয় সমীকরণ ভেসে ওঠে – তারপরেও কেন একত্রিত হয়ে ভারতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন? প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে যে বহু দলীয় গণতন্ত্রের মর্যাদা আর থাকছে কিনা যখন এক অংশের রাজনৈতিক প্রত্যাশী সরাসরি নির্বাচন বিধির বিরোধিতা করছে এবং নানা রাজ্যে রাষ্ট্র বিরোধী বিচ্ছিনতাবাদের জন্ম দিচ্ছে !