ব্যুরো নিউজ, ২৭ ফেব্রুয়ারি:আফগানিস্তান ক্রিকেট সম্প্রতি এক নতুন শক্তির পরিচয় দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। এশিয়ার এই দলটি একের পর এক বড় দলের বিরুদ্ধে জয় পেয়ে নিজেকে একটি শক্তিশালী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আফগানিস্তানের খেলার ধরন, লড়াকু মনোভাব এবং নতুন নতুন প্রতিভা বের হয়ে আসা দেশের ক্রিকেটের উন্নতির দিকে ইঙ্গিত দেয়। সেই প্রতিভারই অন্যতম নাম হলো ইব্রাহিম জ়াদরান, যিনি বুধবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন। যদিও ইব্রাহিম জ়াদরানকে ‘নতুন’ বললে ভুল হবে, কারণ গত দুই বছর ধরেই তার প্রতিভা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভারতের মাটিতে এক দিনের বিশ্বকাপে একাধিক স্মরণীয় ইনিংস রয়েছে তার। তবে আফগানিস্তানের জন্য এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কোনো বড় ট্রফি আসেনি। তবে দেশের পরিস্থিতি, যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিবেশ এবং খেলার জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকার সত্ত্বেও এই দেশ থেকে একের পর এক ক্রিকেট তারকা উঠে আসা সত্যিই প্রশংসনীয়।
আফগানিস্তানের কাছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ডের হারের ইতিহাসঃ ক্রিকেটে নয়া মোড়
কোথায় জন্ম?
জ়াদরান আফগানিস্তানের খোস্ত এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন, একটি এমন জায়গা যেখানে গৃহযুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, জঙ্গি হামলা সাধারণ ঘটনা। তবে তার পরিবার ভালো জীবনযাপনের আশায় কাবুলে চলে আসে, আর সেখানে রাস্তায় রাস্তায় স্থানীয় বাচ্চাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে বেড়ে ওঠেন তিনি। ক্রিকেট তার জন্য ছিল এক প্রকার অবলম্বন, এবং তার প্রতিভা স্থানীয় পর্যায় থেকেই নজরে পড়ে।২০১৭ সালে লিস্ট এ ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকেই জ়াদরান পিছন ফিরে তাকাননি। সে বছরই অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ পান এবং দুই বছর পর আফগানিস্তান জাতীয় দলে খেলার সুযোগ আসে। ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ২৪০ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। পরবর্তীতে জ়িম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে এক দিনের ক্রিকেটে তার প্রথম শতরান আসে এবং শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তার দ্বিতীয় শতরানটি ছিল ১৬২ রান।
আফগানিস্তানের হয়ে ২০২৩ সালের এক দিনের বিশ্বকাপে তার অসাধারণ পারফরম্যান্স ছিল স্মরণীয়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ জেতানো ৮৭ রান আজও তার সমর্থকদের মুখে মুখে ঘোরে। সেই ম্যাচে পুরস্কার পাওয়ার পর জ়াদরান আফগান জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছিলেন, “এটা তাদের জন্যই।”এছাড়া, সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শতরান করেন, যা তাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। তার ব্যাটিংয়ের মেজাজ, আগ্রাসী খেলা এবং বিভিন্ন শটের বৈচিত্র্য তাকে আধুনিক ক্রিকেটে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আইপিএলে কবে শেষ হবে মহেন্দ্র সিং ধোনির অভিযান? উত্তর নিজেই দিলেন তিনি অদ্ভুত কায়দায়
বুধবার, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৭ রানে তিন উইকেট হারানোর পর, তার বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ম্যাচের মোড় পাল্টে দেয় আফগানিস্তান। ইংল্যান্ডের বোলাররা অবাক হয়ে যান, যখন তিনি তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক বিশাল শট মারেন। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর, সবাই বুঝতে পারে, আফগানিস্তানের ক্রিকেটে প্রতিভা কোনোদিন চাপা থাকে না।ইব্রাহিম জ়াদরান তার জেদ, লড়াই এবং অসাধারণ ক্রিকেট দক্ষতা দিয়ে আফগানিস্তানকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তার ভবিষ্যত উজ্জ্বল এবং আফগান ক্রিকেটের জন্য আরও অনেক বড় সাফল্যের আশা জাগাচ্ছেন তিনি।