ব্যুরো নিউজ ১১ জুন : ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চলেছে ‘প্রজেক্ট বিষ্ণু’-এর অধীনে তৈরি অত্যাধুনিক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO) এবং ভারতীয় প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির যৌথ প্রচেষ্টার ফল। এটি এশিয়ার ক্ষমতা ভারসাম্যে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
মূল বিষয়বস্তু – শব্দের আটগুন গতি , অপ্রতিরোধ্য !!!
১. হাইপারসনিক প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত: ‘এক্সটেন্ডেড ট্র্যাজেক্টরি-লং ডিউরেশন হাইপারসনিক ক্রুজ মিসাইল’ (ET-LDHCM) নামের এই ক্ষেপণাস্ত্রটি শব্দের চেয়ে আটগুণ বেশি গতিতে (প্রায় ১১,০০০ কিমি/ঘণ্টা বা ম্যাক ৮) উড়তে সক্ষম। এর ফলে এটি প্রতি সেকেন্ডে তিন কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। এই গতিতে বর্তমান রাডার এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা এটিকে আটকানো প্রায় অসম্ভব।
২. দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এক মাইলফলক: এই ক্ষেপণাস্ত্রটি সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছে, যা ভারতের আত্মনির্ভরতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। DRDO এবং ভারতীয় বেসরকারি প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির সহযোগিতায় হায়দ্রাবাদের ডঃ এ.পি.জে. আব্দুল কালাম মিসাইল কমপ্লেক্সে এটি ডিজাইন ও তৈরি করা হয়েছে।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
৩. কৌশলগত গুরুত্ব ও সক্ষমতা: ET-LDHCM ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ১,৫০০ কিলোমিটারের বেশি এবং এটি ১,০০০-২,০০০ কেজি ওজনের প্রচলিত বা পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম। এর উন্নত স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিন বায়ুমণ্ডল থেকে বাতাস টেনে জ্বালানি পোড়ায়, যা এটিকে দীর্ঘ সময় ধরে হাইপারসনিক গতি বজায় রাখতে সাহায্য করে। DRDO ইতিমধ্যেই এই ইঞ্জিনের ১,০০০ সেকেন্ডের সফল ভূমি পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে।
৪. অতুলনীয় নমনীয়তা ও নির্ভুলতা: ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো এটি পূর্বাভাসযোগ্য পথে চলে না। ET-LDHCM নিম্ন উচ্চতায় উড়তে পারে, মাঝ-আকাশে দিক পরিবর্তন করতে পারে এবং ২,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করার জন্য তাপ-প্রতিরোধী উপকরণ দিয়ে তৈরি। এর বহুমুখিতা এটিকে স্থল, আকাশ বা সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণের সুযোগ করে দেয়, যা ভারতীয় সামরিক বাহিনীর কৌশলগত বিকল্পগুলিকে বাড়িয়ে তোলে। এটি শত্রুর কৌশলগত কমান্ড সেন্টার, রাডার স্থাপনা বা নৌ জাহাজগুলিকে নির্ভুলভাবে লক্ষ্য করতে পারে।
৫. বিশ্ব মঞ্চে ভারতের অবস্থান: এই ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষার মাধ্যমে ভারত যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং রাশিয়ার মতো হাতেগোনা কয়েকটি দেশের সারিতে যোগ দেবে, যারা হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করেছে।
৬. ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: সামরিক প্রয়োগ ছাড়াও, হাইপারসনিক প্রযুক্তি মহাকাশ উন্নয়ন, দুর্যোগ ত্রাণ এবং স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে ভারতের সক্ষমতা বাড়াতে পারে। এই কর্মসূচির ফলে ভারতীয় MSME ( ক্ষুদ্র শিল্প ) ক্ষেত্রগুলিতে নতুন সুযোগ তৈরি হবে এবং হাজার হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উপসংহার
‘প্রজেক্ট বিষ্ণু’-এর অধীনে এই অত্যাধুনিক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় একটি নতুন যুগের সূচনা করবে। এটি কেবল দেশের সামরিক সক্ষমতা বাড়াবে না, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের কৌশলগত অবস্থানকেও আরও শক্তিশালী করবে।