ব্যুরো নিউজ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : নবরাত্রির শুভ সূচনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কর্তৃক ঘোষিত নতুন প্রজন্মের জিএসটি (GST) সংস্কার বা ‘জিএসটি ২.০’ কার্যকর হয়েছে। কেন্দ্র সরকার এই উদ্যোগকে ‘জিএসটি সাশ্রয় উৎসব’ হিসেবে তুলে ধরলেও বিরোধী দল কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস এর তীব্র সমালোচনা করেছে। জিএসটি নিয়ে মোদী সরকারের এই পদক্ষেপকে সাধারণ মানুষে স্বাগত জানিয়েছে ।
মানুষের চাহিদা: সাশ্রয় ও আত্মনির্ভরতা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেন, এই নতুন জিএসটি কাঠামোয় করের হার ৫% এবং ১৮%—এই দুটি প্রধান স্ল্যাবে সীমিত করা হয়েছে। এর ফলে দুধ, মাখন, ঘি, এবং আইসক্রিমের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সস্তা হবে। তিনি বলেন, পূর্বে ১২% করের অধীনে থাকা প্রায় ৯৯% পণ্য এখন ৫% স্ল্যাবের আওতায় এসেছে।
দিল্লির বাসিন্দা রবি শঙ্কর কুমার এবং সাহিল এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যার নাগরিক নরসিংহ পাঠক বলেন, এটি গাড়ি এবং মোটরসাইকেলের দাম কমানোর পাশাপাশি ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসের মতো ওষুধের দামও কমিয়ে দেবে, যা সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আলিগড়ের একজন কৃষক জানান, ট্রাক্টরের মতো কৃষি সরঞ্জামের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকদের দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা হবে। প্রধানমন্ত্রী এই সংস্কারকে ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেন এবং বলেন যে এর ফলে বাড়ি, গাড়ি, এবং ইলেকট্রনিক সামগ্রী কেনা আরও সাশ্রয়ী হবে।
বিরোধীদের নেতিবাচক কটূক্তি : ‘গব্বর সিং ট্যাক্স’ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষতি
যদিও সরকার এই সংস্কারকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে, কংগ্রেস নেতা ইমরান মাসুদ অভিযোগ করেছেন যে এই পরিবর্তন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সর্বনাশ করবে যদিও তার বক্তব্যের সমর্থনে কোনও যুক্তি পেশ করেনি। তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভাষণের সমালোচনা করে বলেন, তিনি জিএসটি সংস্কারের বদলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এইচ-১বি ভিসার ওপর আরোপিত বিপুল ফি নিয়ে কথা বলবেন বলে আশা করেছিলেন।
কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনাতে এই সংস্কারকে ‘গব্বর সিং ট্যাক্স’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, মোদী সরকারকে এই ‘ত্রুটিপূর্ণ’ কর ব্যবস্থার জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। তিনি প্রশ্ন তোলেন, অর্থ মন্ত্রীর ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রীর নতুন করে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার কী প্রয়োজন ছিল। শ্রীনাতে বলেন, “এই জিএসটি আপনাদের সরকারই এনেছিল, আর এখন আপনারা এমনভাবে কথা বলছেন যেন তা অন্য কোনো সরকার এনেছিল। ”
অপপ্রচারের তোপ: ‘কৃতিত্ব রাজ্য সরকারের’
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিএসটি ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। পুজো উদ্বোধনে গিয়ে তিনি বলেন, “জিএসটির কৃতিত্ব রাজ্য সরকারের। ভাষণ দেওয়া ছাড়া কেন্দ্রের কোনও কৃতিত্ব বা অবদান নেই।” এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠে আসে যে ভারতবর্ষে শুধু পশ্চিমবঙ্গে আলাদা জিএসটি নীতি আরোপিত হয় কিনা ? যেখানে রাজ্য সরকারের কৃতিত্ব থাকে ?
তিনি আরও অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের প্রাপ্য অর্থ আটকে রেখেছে, যা রাজ্যের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন। জবাবে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যথাযথ ব্যয়ের হিসাব জমা দিলেই বকেয়া অর্থ প্রদান করা হবে।