great calcutta killings

সৌরভ রায় চৌধুরী, ২৩শে আগস্ট ২০২৫ : ১৬ই আগস্ট, ১৯৪৬-এ কলকাতা এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী হয়েছিল, যা ইতিহাসে ‘গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং’ বা ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’ নামে পরিচিত। মুসলিম লীগের ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ ঘোষণার পর মাত্র তিন দিনের সহিংসতায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। এই দাঙ্গার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন মুসলিম লীগের নেতা হোসেন শহীদ সুরাবর্দি এবং অন্যদিকে হিন্দু প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন স্থানীয় মাংস বিক্রেতা গোপাল মুখার্জি, যিনি গোপাল পাঁঠা নামে অধিক পরিচিত।

 

প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের ডাক ও দাঙ্গার সূত্রপাত

১৯৪৬ সালে ব্রিটিশ ক্যাবিনেট মিশন ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তরের যে পরিকল্পনা দেয়, তাতে মুসলিম লীগের পাকিস্তান দাবি সরাসরি মেনে নেওয়া হয়নি। এর প্রতিবাদে মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৬ই আগস্টকে ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’ হিসেবে ঘোষণা করেন। ওই দিন বেঙ্গল প্রভিন্সের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সুরাবর্দি কলকাতায় সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। মুসলিম লীগের কর্মীরা বিশাল মিছিল নিয়ে ময়দানের দিকে আসতে শুরু করে। এই মিছিলগুলোই বিভিন্ন এলাকায় হিন্দু দোকানপাট, বাড়ি ও মন্দিরে আক্রমণ শুরু করে। লুঠপাট, অগ্নিসংযোগ এবং নির্বিচার হত্যাকাণ্ড দ্রুতই গোটা শহরে ছড়িয়ে পড়ে।

পুলিশ এবং প্রশাসন দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন ওঠে। এই পরিস্থিতিতে হিন্দুরা নিজেদের অসহায় অবস্থায় দেখতে পায়।

Hanumanji West Bengal : পশ্চিমবাংলায় বজরংবলী পূজার উৎস ও ইতিহাস: একটি বিশদ প্রতিবেদন


গোপাল পাঁঠা: প্রতিরোধ না প্রতি-আক্রমণ?

দাঙ্গার প্রথম দু’দিন মুসলিমদের আক্রমণে হিন্দুদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৭ই আগস্টের পর পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। এই সময়েই উত্তর ও মধ্য কলকাতার বোবাজার ও মালঙ্গা লেনে হিন্দু প্রতিরোধের নেতৃত্ব দেন গোপাল মুখার্জি। তিনি স্থানীয় পাঁঠার মাংস বিক্রেতা হিসাবে পরিচিত ছিলেন। বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, তার নেতৃত্বে প্রায় ৮০০ যুবক একত্রিত হয়। এদের হাতে লাঠি, ছোরা এবং কিছু পুরোনো বন্দুক ছিল।
গোপাল পাঁঠার এই বাহিনী বিভিন্ন হিন্দু মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তোলে। অনেক ঐতিহাসিক তাকে একজন রক্ষাকর্তা হিসেবে দেখেন, যিনি চরম পরিস্থিতিতে নিজেদের সম্প্রদায়ের জীবন ও সম্মান রক্ষার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। বিশেষ করে মারোয়াড়ি ব্যবসায়ীরা তার এই প্রতিরোধে আর্থিক সাহায্য দিয়েছিলেন। অন্যদিকে, কিছু ইতিহাসবিদ, যেমন সুরঞ্জন দাস, গোপাল মুখার্জির ভূমিকাকে স্থানীয় মাস্তানের ভূমিকার সাথে তুলনা করে সমালোচনা করেন। তাদের মতে, এরা দাঙ্গাকে আরও হিংস্র করে তুলেছিল এবং প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়ে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
গোপাল মুখার্জি নিজে পরবর্তীকালে সাংবাদিক অ্যান্ড্রু হোয়াইটহেড-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি মহাত্মা গান্ধীর অনুরোধ সত্ত্বেও অস্ত্র সমর্পণ করতে রাজি হননি, কারণ তার বিশ্বাস ছিল, দাঙ্গার সময় আত্মরক্ষা করাই ছিল একমাত্র উপায়।


Manifesto : ‘ইশতেহার’ ভাষার উৎস, ব্যুৎপত্তি এবং বাংলায় ব্যবহারের ইতিহাস

দাঙ্গার ভয়াবহ পরিণতি

তিন দিনের এই দাঙ্গায় সরকারি হিসেবে প্রায় ৪ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল, তবে বেসরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ছিল এর চেয়ে অনেক বেশি। প্রায় ১ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়। এই ঘটনা ভারত ভাগের প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করে এবং এর ফলে দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর