ব্যুরো নিউজ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : হিন্দু পুরাণ অনুসারে, ভগবান গণেশের বিবাহ এক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ আখ্যান। কথিত আছে, যখন অন্যান্য দেবতারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছিলেন, তখন গণেশ কিছুটা হতাশ বোধ করছিলেন। তার হস্তীমুখ এবং স্থূল দেহ দেখে কোনো উপযুক্ত কনে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, যা অন্যান্য দেবতাদের মধ্যে কৌতুকের জন্ম দেয়। এতে গণেশ বিচলিত হয়ে পড়লে, সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা তাকে সান্ত্বনা দেন এবং এর একটি সমাধানও খুঁজে বের করেন। তিনি গণেশকে তার দুই কন্যা, রিদ্ধি (সমৃদ্ধি) এবং সিদ্ধি (আধ্যাত্মিক ক্ষমতা/সাফল্য)-কে স্ত্রী রূপে দান করেন। এই বিবাহ শুধু একটি পারিবারিক বন্ধন ছিল না, এটি মানবজীবনে পার্থিব এবং আধ্যাত্মিক সাফল্যের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার প্রতীক।
কে এই রিদ্ধি এবং সিদ্ধি?
রিদ্ধি পার্থিব জীবনে সমৃদ্ধি, প্রাচুর্য এবং বৃদ্ধির প্রতীক। তিনি ধন-সম্পদ, উর্বরতা এবং জাগতিক সুখের প্রতিনিধিত্ব করেন। অন্যদিকে, সিদ্ধি আধ্যাত্মিক জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং উচ্চতর পথের প্রতীক। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে প্রকৃত সাফল্য কেবল বাহ্যিক নয়, বরং অভ্যন্তরীণও বটে। এই দুই বোন একসাথে মানব আকাঙ্ক্ষার পূর্ণতাকে মূর্ত করে তোলেন: জাগতিক আনন্দ এবং আধ্যাত্মিক প্রজ্ঞা।
সনাতন ধর্মের মহাজাগতিক সংহতি : বিষ্ণুর অবতার ও নবগ্রহ
কেন গণেশ দুই বোনকে বিবাহ করেছিলেন?
গণেশের রিদ্ধি এবং সিদ্ধিকে বিবাহ করা শুধুমাত্র একটি পৌরাণিক গল্প নয়, এটি একটি শক্তিশালী রূপক। কোনো নতুন কাজ শুরুর আগে যেমন গণেশের পূজা করা হয়, তেমনি তার সমৃদ্ধি (রিদ্ধি) এবং সাফল্য (সিদ্ধি)-কে বিবাহ করার এই কাহিনী শিক্ষা দেয় যে, প্রকৃত সাফল্যের জন্য জাগতিক সমৃদ্ধি এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানের উভয়ই প্রয়োজন। এই মিলন সনাতন ধর্মের সুষম প্রকৃতিকেও প্রদর্শন করে। শুধু ধন-সম্পদের উপর ভিত্তি করে জীবন চালালে লোভের জন্ম হয়, আবার শুধু জ্ঞান থাকলে জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে। এই দুই বোনকে বিবাহ করে গণেশ যেন এই দুটি পথের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেছেন।
সন্তোষী মায়ের জন্ম
এই ঐশ্বরিক পরিবারের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হলো গণেশের কন্যা, সন্তোষী মা। কথিত আছে, তার জন্ম হয়েছিল গণেশের দুই পুত্র, শুভ এবং লাভ (মঙ্গল এবং লাভ)-এর ইচ্ছা থেকে, যারা একজন বোন চেয়েছিল। সন্তোষী মা সন্তুষ্টি এবং তৃপ্তির প্রতীক, যা পার্থিব সমৃদ্ধি, আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং অভ্যন্তরীণ শান্তির চক্রকে সম্পূর্ণ করে তোলে।
Brahma ; সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার সীমিত উপাসনা: এক বিস্ময়কর রহস্য !
দুই বোনের বিবাহের গভীর অর্থ
প্রথম দর্শনে গণেশের দুই বোনকে বিবাহ করা অস্বাভাবিক মনে হতে পারে, কিন্তু এর গভীর বার্তা হলো সমৃদ্ধি এবং প্রজ্ঞার পারস্পরিক সংযোগ। এই দুটি একে অপরের প্রতিপক্ষ নয়, বরং সঙ্গী। যেমন দিন ছাড়া রাতের অস্তিত্ব হয় না, তেমনি একটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং অর্থপূর্ণ জীবনের জন্য সমৃদ্ধি এবং প্রজ্ঞাকে একসাথে চলতে হবে। তাই, এই বিবাহ পক্ষপাতিত্ব বা পছন্দের বিষয় নয়, বরং পূর্ণতার বিষয়। রিদ্ধি এবং সিদ্ধি একসাথে নিশ্চিত করে যে একজন ভক্তের জীবন ধন-সম্পদ এবং উচ্চতর চেতনার উভয় দ্বারাই আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়, যাতে কোনো ভারসাম্যহীনতা না থাকে।
রিদ্ধি এবং সিদ্ধির ঐশ্বরিক ভারসাম্য
গণেশের রিদ্ধি ও সিদ্ধির সঙ্গে বিবাহের গল্পটি কেবল একটি পৌরাণিক কাহিনী নয়, এটি একটি গভীর জীবন দর্শন। এটি আমাদের শেখায় যে, সাফল্যকে কেবল জাগতিক সমৃদ্ধি দিয়ে পরিমাপ করা যায় না, আবার স্থায়িত্ব ছাড়া প্রজ্ঞাও বিকশিত হতে পারে না। এই দুই বোনের সঙ্গে মিলিত হয়ে গণেশ আদর্শ পথটি প্রদর্শন করেন, যেখানে সমৃদ্ধি জ্ঞানকে সমর্থন করে এবং জ্ঞান সমৃদ্ধিকে পরিচালিত করে। এই দিব্য কাহিনী আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ভারসাম্যই জীবনের প্রকৃত সম্পদ। যেমন রিদ্ধি ও সিদ্ধি ছাড়া গণেশ অসম্পূর্ণ, তেমনি পার্থিব সাফল্য এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানের মধ্যে ভারসাম্য ছাড়া আমরাও অসম্পূর্ণ।