ব্যুরো নিউজ ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : ফ্রান্সে রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হয়েছে। সোমবার ফরাসি প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বায়রু পার্লামেন্টে আনা অনাস্থা ভোটে হেরে গিয়ে তার সরকারের পতন ঘটিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে মাত্র ১২ মাসের মধ্যে ফ্রান্স চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী পেতে চলেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর দ্বারা নিযুক্ত বায়রুর বিরুদ্ধে ৩৬৪-১৯৪ ভোটের বিশাল ব্যবধানে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়।
আশ্চর্যজনকভাবে, বায়রু নিজেই দেশের অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলার জন্য এই অনাস্থা ভোটের ডাক দিয়েছিলেন। ভোটের আগে তিনি সংসদ সদস্যদের প্রতি তার ঋণ কমানোর পরিকল্পনাকে সমর্থন করার অনুরোধ জানান। ফরাসি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে দেওয়া তার বক্তব্যে তিনি সতর্ক করেন যে, ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ফ্রান্সের উপর ঋণের বোঝা ভয়ংকর পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা দেশকে বিদেশি ঋণদাতাদের কাছে দুর্বল করে তুলবে। তিনি বলেন, “আপনারা এই সরকারকে ফেলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, কিন্তু বাস্তবতা মুছে ফেলার ক্ষমতা আপনাদের নেই।”
রাজনৈতিক অস্থিরতার মূল কারণ
এই রাজনৈতিক অস্থিরতার মূল কারণ হলো গত জুন মাসে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের সিদ্ধান্ত। ম্যাক্রোঁ আশা করেছিলেন যে এই নির্বাচনের মাধ্যমে তার মধ্য-ডানপন্থী জোট পার্লামেন্টে শক্তিশালী সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে। কিন্তু তার এই জুয়া উল্টো ফল দেয়। ফলস্বরূপ, ফরাসি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো রাজনৈতিক জোটের সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়াই একটি বিভক্ত পার্লামেন্ট গঠিত হয়।
Nepal : নেপালে সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা, দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে ১৯ জনের মৃত্যু
এরপর থেকে ম্যাক্রোঁ একটি কার্যকর সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছাড়া সরকার পরিচালনা করতে বাধ্য হচ্ছেন। গত ১২ মাসে তিনি তিনজন প্রধানমন্ত্রীকে পরিবর্তন করেছেন: গ্যাব্রিয়েল অ্যাতাল, যিনি মাত্র আট মাস প্রধানমন্ত্রী ছিলেন; এরপর আসেন মিশেল বার্নিয়ার, যিনি ফ্রান্সের আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী ছিলেন; এবং সর্বশেষ ছিলেন ফ্রাঁসোয়া বায়রু, যিনিও আস্থা ভোটে হেরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন।
Nepal : নেপালে সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, তীব্র বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা
বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়া এবং পরবর্তী পদক্ষেপ
আস্থা ভোটে পরাজয়ের পর বামপন্থী দল “ফ্রান্স আনবাউড”-এর প্রধান মাথিল্ড পানোঁ প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা এমন আরেকজন প্রধানমন্ত্রী চাই না যিনি একই নীতি অনুসরণ করবেন। এখন আসল প্রশ্ন হলো সেই প্রেসিডেন্টের বিদায়, যিনি জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান করতে অস্বীকার করছেন।”
ফ্রান্সের বর্তমান জনঋণ ৩.৩৫ ট্রিলিয়ন ইউরো, যা জিডিপির ১১৪%। বায়রু ২০২৬ সালের মধ্যে ৪৪ বিলিয়ন ইউরো খরচ কমানোর পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু বিরোধী দলগুলো তার নীতিকে কঠোর এবং ভুল সময়ের বলে মনে করে। ডানপন্থী নেতা মেরিন লে পেন আবারও ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন, এই আশায় যে তার দল এবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে।
ম্যাক্রোঁ মঙ্গলবার বায়রুর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করবেন এবং কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন একজন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ম্যাক্রোঁ যদিও পররাষ্ট্রনীতি এবং সামরিক বাহিনীর দায়িত্বে থাকবেন, কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা ক্রমশ পার্লামেন্টের হাতে চলে যাচ্ছে। নতুন সরকারও দুর্বল হতে পারে এবং যেকোনো মুহূর্তে পতনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।