micronations ambassador arrested

ব্যুরো নিউজ ২৪ জুলাই ২০২৫ : উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে একটি চাঞ্চল্যকর এবং অদ্ভুত ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, যেখানে একজন ব্যক্তি ‘ওয়েস্ট আর্কটিকা’ (পশ্চিম আর্কটিকা) নামক একটি অস্তিত্বহীন দেশের অবৈধ ‘দূতাবাস’ পরিচালনা করছিল। অভিযুক্ত হর্ষবর্ধন জৈন  -কে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF) গ্রেফতার করেছে। সে বেশ কয়েকটি কাল্পনিক এবং স্বঘোষিত ‘মাইক্রোনেশন’ সত্তার কূটনীতিক হিসাবে নিজেকে জাহির করছিল। এই ঘটনাটি ‘মাইক্রোনেশন’ (অতিক্ষুদ্র দেশ) কী এবং এর সঙ্গে জড়িত প্রতারণার বিপদ সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছে।

গ্রেফতার এবং প্রতারণার পদ্ধতি

২২শে জুলাই, ২০২৫-এ STF-এর নয়ডা ইউনিট গাজিয়াবাদের কবি নগরের KB-45-এ একটি ভাড়া বাড়িতে অভিযান চালায় এবং হর্ষবর্ধন জৈন-কে গ্রেফতার করে। সে এই বাড়ি থেকেই স্বঘোষিত “ওয়েস্ট আর্কটিকা দূতাবাস” চালাচ্ছিল। হর্ষবর্ধন মিথ্যাভাবে নিজেকে ওয়েস্ট আর্কটিকা, সেবোর্গা, পলভিয়া এবং লোডোনিয়ার মতো তথাকথিত দেশের কনসাল বা রাষ্ট্রদূত বলে দাবি করত। এমনকি সে তার ভুয়া দাবিকে সমর্থন করার জন্য নকল কূটনৈতিক নম্বর প্লেট লাগানো গাড়িতে ঘুরে বেড়াত।

Operation Sindoor : ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ভাঙল লস্করের মেরুদণ্ড ,সংসদ ও মুম্বাই হামলার মূল অর্থযোগানদাতা আব্দুল আজিজ নিহত

পুলিশের তদন্তে যা পাওয়া গেছে

তদন্তে জানা গেছে, জৈন প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির মতো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে নিজের ভুয়ো ছবি ব্যবহার করে বিশ্বাস ও প্রভাব অর্জন করত। তার প্রধান ব্যবসা ছিল দালালি করা, যেখানে সে ব্যক্তি ও সংস্থাগুলিকে বিদেশে কাজের সুযোগের প্রতিশ্রুতি দিত। এছাড়াও, সে শেল কোম্পানির মাধ্যমে একটি হাওয়ালা চক্র চালাচ্ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশ আরও জানতে পেরেছে যে জৈনের পূর্বে চন্দ্রস্বামী এবং আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ী আদনান খাশোগির মতো বিতর্কিত ব্যক্তিত্বদের সাথে যোগাযোগ ছিল। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০১১ সালে, তাকে একটি অবৈধ স্যাটেলাইট ফোন সহ ধরা হয়েছিল, যার মামলা এখনও কবি নগর থানায় নথিভুক্ত রয়েছে।

ভুয়া দূতাবাস থেকে জব্দকৃত জিনিসপত্র

কর্তৃপক্ষ তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জাল নথি এবং মূল্যবান জিনিসপত্র উদ্ধার করেছে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • কূটনৈতিক নম্বর প্লেট সহ ৪টি গাড়ি
  • ‘মাইক্রোনেশন’-এর ১২টি নকল কূটনৈতিক পাসপোর্ট
  • পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিলমোহরযুক্ত জাল নথি
  • ২টি জাল প্যান কার্ড
  • বিভিন্ন দেশ ও কোম্পানির ৩৪টি জাল সরকারি সিলমোহর
  • ২টি জাল প্রেস কার্ড
  • নগদ ৪৪.৭ লাখ টাকা
  • বিভিন্ন দেশের বৈদেশিক মুদ্রা
  • অসংখ্য কোম্পানি-সম্পর্কিত নথি
  • ১৮টি নকল কূটনৈতিক নম্বর প্লেট

কবি নগর থানায় একটি আনুষ্ঠানিক FIR নথিভুক্ত করা হয়েছে, এবং আরও আইনি প্রক্রিয়া চলছে। কর্তৃপক্ষ এই নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি এবং এই ব্যাপক প্রতারণায় অন্য কেউ জড়িত ছিল কিনা তা তদন্ত করছে। এই ঘটনা ভুয়া কূটনৈতিক কার্যকলাপ এবং ব্যক্তিগত লাভের জন্য সরকারি পরিচয়পত্রের অপব্যবহার সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

Operation Kalnemi : উত্তরাখণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী ধামীর অভিজানে ধরা পড়ল ৫০০র অধিক ভণ্ড ‘ বাবা ‘ , রয়েছে বেশ কিছু বাংলাদেশী এবং বিধর্মী !

‘মাইক্রোনেশন’ কী?

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে যে, ‘মাইক্রোনেশন’ আসলে কী? একটি ‘মাইক্রোনেশন’ হল একটি স্বঘোষিত, ছোট আকারের, অস্বীকৃত দেশ বা সত্তা যা নিজেকে স্বাধীন ও সার্বভৌম বলে দাবি করে কিন্তু কোনো সরকার বা জাতিসংঘের মতো কোনো প্রধান আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত নয়। এগুলি প্রায়শই সামাজিক, রাজনৈতিক বা শৈল্পিক প্রকল্প হিসাবে বিদ্যমান থাকে এবং কখনও কখনও প্রতারণা বা প্রচারের জন্য ব্যবহৃত হয়। ‘মাইক্রোনেশন’গুলিকে ভ্যাটিকান সিটি এবং লিচেনস্টাইনের মতো ‘মাইক্রোস্টেট’গুলির সাথে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়, কারণ ‘মাইক্রোস্টেট’গুলি তাদের ছোট আকার সত্ত্বেও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত স্বাধীন জাতি।

কিছু উল্লেখযোগ্য ‘মাইক্রোনেশন’ হলো:

  • গ্র্যান্ড ডাচি অফ ফ্লান্ড্রেনসিস
  • গ্র্যান্ড ডাচি অফ ওয়েস্টার্কটিকা
  • কিংডম অফ রেডোন্ডা
  • এম্পায়ার অফ অ্যাটলান্টিয়াম
  • প্রিন্সিপালিটি অফ সীল্যান্ড

এই তালিকাটি খুবই দীর্ঘ এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য ‘মাইক্রোনেশন’-এর অস্তিত্ব রয়েছে, যার মধ্যে কিছু নিরীহ শখ হিসেবে শুরু হলেও, কিছু ক্ষেত্রে হর্ষবর্ধন জৈন -এর মতো ব্যক্তিরা এগুলিকে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করে।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর