শুদ্ধাত্মা মুখার্জি , ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : সম্প্রতি নেপালে ঘটে যাওয়া ‘জেন-জি’ আন্দোলন এবং তার প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় বামপন্থীদের ভূমিকা আমাকে বেশ অবাক করেছে। সিপিআই(এম) যখন নেপালে আন্দোলনে মৃত্যুর ঘটনায় এবং সরকার পতনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে, তখন আমার মনে প্রশ্ন জাগে, কেন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা সম্পূর্ণ আলাদা ছিল ? তারা বাংলাদেশের সরকারের পতনকে সেই সময়ে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিল । এই বৈপরীত্য আমাকে এই রাজনৈতিক আদর্শের দ্বিমুখী নীতি নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে।
সিপিআই(এম)-এর বিবৃতিতে আমি দেখলাম, তারা নেপালের বিক্ষোভকে দুর্নীতি এবং বেকারত্বের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভের প্রতিফলন হিসেবে দেখছে। তারা গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ রক্ষার কথা বলছে এবং সতর্ক করছে যাতে রাজতন্ত্র বা অন্য কোনো প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে না পারে। তাদের এই অবস্থান নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু আমার মনে পড়লো বাংলাদেশের কথা।
বাংলাদেশের প্রতি বামপন্থীদের সমর্থন: একটি ভিন্ন চিত্র
যখন বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তখন কলকাতায় বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো সেই আন্দোলনকে সক্রিয় সমর্থন জুগিয়েছিল। আমি দেখেছি, তারা বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করছে, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে এবং স্লোগান দিচ্ছে। তারা একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করার জন্য পরিচালিত আন্দোলনকে সমর্থন জানাচ্ছিল। সেই আন্দোলনের পর বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যে পাশবিক অত্যাচার নেমে এসেছে, সে বিষয়ে বাম দলগুলোর কোনো ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আমি দেখিনি। আমার কাছে এটি খুবই হতাশাজনক। যদিও সমস্যাটা বাংলাদেশে , ভারতে নয়, তারা ভারতের সংখ্যালঘুদের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের সমালোচনা করে ! এই ধরণের রাজনৈতিক কৌশল তাদের প্রতিবাদের দ্বিমুখী চরিত্রকে স্পষ্ট করে।
Nepal : সুশীলা কার্কীর মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে বিতর্ক: রাতভর বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী
সুযোগসন্ধানী রাজনীতি: নেপাল ও বাংলাদেশের ভিন্ন প্রেক্ষাপট
আমার মনে হয়, নেপালের ক্ষেত্রে তাদের উদ্বেগ মূলত তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থ থেকে উদ্ভূত। নেপালে একটি বাম সমর্থিত সরকারের পতন সম্ভবত তাদের পছন্দ হয়নি, তাই তারা সেখানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রক্ষার কথা বলছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তারা উগ্রপন্থী ছাত্র আন্দোলনকে সম্পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে বামপন্থীরা সুযোগ বুঝে গণতন্ত্র-বিরোধী অবস্থানেও যেতে পারে।
Israel : ভারত ও মোদীর ‘জাতীয় সম্মান’-এর নীতি থেকে ইজরায়েলের শিক্ষা নেওয়া উচিত : ইজরায়েলি সংবাদপত্র জেরুজালেম পোস্ট
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও একই দ্বৈততা
এই দ্বিমুখী অবস্থান শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আন্তর্জাতিক স্তরেও এর প্রতিফলন দেখা যায়। যখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অমানবিক সন্ত্রাসী হামলা হয় এবং ইসরায়েল তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়, তখন হঠাৎ করেই বামপন্থীরা মানবতার কথা বলতে শুরু করে। কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রীর ভারত সফরকে ‘গণহত্যার সমর্থন’ বলে ভারতের বিদেশনীতির সমালোচনা করেন।
তাই আমার ধারণা , বামেরা বরাবরই তাদের রাজনীতিকে দেশের স্বার্থের উপরে স্থান দিয়েছে। তারা ইসলামি মৌলবাদ এবং রাজনীতিকে সমর্থন করে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখতে চায়।
আমার পর্যবেক্ষণ হলো, বামপন্থীরা এমন একটি আদর্শ অবলম্বন করে যা নিজেদের সুবিধামতো রূপ ধারণ করে। যখন কোনো আন্দোলন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের জন্য বা দুর্নীতির বিরুদ্ধে হয়, তখন তাদের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ থাকে। কিন্তু যখন কোনো আন্দোলন সহিংস, গণতন্ত্রবিরোধী এবং উগ্র মৌলবাদের পক্ষে থাকে, তখনই তাদের সমর্থন প্রকাশ পায়। নেপাল ও বাংলাদেশের ঘটনা এই নীতির সাম্প্রতিক এবং জ্বলন্ত উদাহরণ, যা আমাকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত করেছে যে বামপন্থীরা সুযোগসন্ধানী এবং গণতন্ত্র-বিরোধী।