ব্যুরো নিউজ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : সম্প্রতি, আমেরিকার ৪৭তম রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে (UNGA) ভাষণ দিয়েছেন, যা বিশ্বজুড়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তার বক্তব্যে একাধিক পরস্পর-বিরোধী মন্তব্য উঠে এসেছে। একদিকে তিনি তার মেয়াদের সাফল্যের কথা তুলে ধরেছেন এবং রাষ্ট্রসংঘের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, অন্যদিকে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ভারত, চিন এবং ন্যাটো দেশগুলোর ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। তবে তার নিজেরই আগের একটি বক্তব্যে এই যুদ্ধের মাধ্যমে আমেরিকার লাভের কথা স্বীকার করে নেওয়ার বিষয়টি এই সমালোচনার সঙ্গে সঙ্গতিহীন বলে মনে করা হচ্ছে। এই ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান পররাষ্ট্রনীতির জটিলতা ও নির্ভরযোগ্যতার অভাবকে তুলে ধরেছে।
যুদ্ধের জন্য কে দায়ী?
ট্রাম্প তার ভাষণে স্পষ্টতই বলেছেন যে, রাশিয়া থেকে তেল কেনা চালিয়ে যাওয়ার কারণে চিন এবং ভারত এই যুদ্ধের প্রধান অর্থদাতা। একই সঙ্গে তিনি ন্যাটো দেশগুলোকেও তাদের রাশিয়ান জ্বালানি পণ্য ক্রয় বন্ধ না করার জন্য দোষারোপ করেন। তার মতে, ন্যাটো দেশগুলো নিজেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে অর্থায়ন করছে, যা এক “অস্বাভাবিক” পরিস্থিতি। তিনি আরও বলেন, যদি রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করতে রাজি না হয়, তাহলে আমেরিকা শক্তিশালী শুল্ক আরোপ করতে প্রস্তুত, যার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর সমর্থন প্রয়োজন।
Donald Trump : ভারতের প্রশ্নের মুখে প্রকাশ মার্কিন রাষ্ট্রপতির অজ্ঞতা , লজ্জাজনক দ্বিচারিতা !
যুদ্ধ থেকে আমেরিকার লাভ
যদিও ট্রাম্প প্রকাশ্যে ভারত ও চিনকে দোষারোপ করেছেন, ওভাল অফিসের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে আমেরিকা এই যুদ্ধ থেকে মুনাফা অর্জন করছে। তিনি বলেন, “আমরা এই চলমান যুদ্ধে কোনো অর্থ ব্যয় করছি না। ন্যাটো এই যুদ্ধের জন্য অর্থ দিচ্ছে কারণ ন্যাটো আমাদের থেকে অস্ত্র কিনে ইউক্রেনকে সরবরাহ করছে। আমি এই যুদ্ধ থেকে টাকা বানাতে চাই না, কিন্তু আমেরিকা আসলে এই যুদ্ধ থেকে লাভবান হচ্ছে কারণ ন্যাটো ইউক্রেনের জন্য আমাদের থেকে অস্ত্র কিনছে।” এই স্বীকারোক্তি ট্রাম্পের রাষ্ট্রসংঘের বক্তব্যের সরাসরি বিপরীত।
প্রেসিডেন্টের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও পররাষ্ট্রনীতির অবিশ্বস্ততা
ট্রাম্পের এই পরস্পরবিরোধী মন্তব্য তার আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে প্রকাশ্যে এনেছে। একদিকে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ভারত ও চিনকে দোষারোপ করছেন, অন্যদিকে নিজেই স্বীকার করছেন যে তার দেশ এই যুদ্ধ থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। এই পরিস্থিতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিকে একটি অবিশ্বস্ত অবস্থানে নিয়ে গেছে। তার মতে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন এই যুদ্ধ শুরু করেছেন, কিন্তু তার নিজের বক্তব্যে আমেরিকার অর্থনৈতিক লাভের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। এর পাশাপাশি, যখন ট্রাম্প ন্যাটো দেশগুলোকে রাশিয়ান জ্বালানি কেনা নিয়ে দোষারোপ করছেন, তখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ট্রাম্পের সঙ্গে আলাস্কা বৈঠকে প্রকাশ্যেই বলেছিলেন যে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাশিয়া-আমেরিকা বাণিজ্য ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই তথ্যগুলো ট্রাম্পের বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং তার নীতির মধ্যে স্পষ্ট দ্বন্দ্ব তুলে ধরে। এই ধরনের পরস্পর-বিরোধী অবস্থান বিশ্বজুড়ে চলমান সংঘাতগুলোকে আরও জটিল করে তুলতে পারে এবং নতুন সংঘাতের জন্ম দিতে পারে।
এখানে একটি ভিডিও দেওয়া হলো যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে আমেরিকার লাভের কথা বলছেন।