ব্যুরো নিউজ,২২মার্চ: এস্থার ভিক্টোরিয়া আব্রাহাম, যিনি প্রমীলা নামেই বেশি পরিচিত, ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। তাঁর জীবন ছিল সংগ্রাম, সাহস এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তির এক অনবদ্য উদাহরণ। ১৯৪৭ সালে, ভারতের স্বাধীনতার মুহূর্তে, তিনি ভারতের প্রথম “মিস ইন্ডিয়া” নির্বাচিত হন, এক অবিস্মরণীয় ঘটনা যা তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন হিসেবে পরিগণিত হয়।
জীবন ছিল সবসময় চ্যালেঞ্জে ভরা
১৯১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর, কলকাতার এক বাগদাদি ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এস্থার। তাঁর বাবা, রুবেন আব্রাহাম ছিলেন ব্যবসায়ী, এবং মা, মাতিলদা আইজাক, করাচির বাসিন্দা ছিলেন। পারিবারিক পটভূমি ছিল অনেক বড়, এবং তাঁর পরিবারে আরও ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন।
এমআরআই যন্ত্রের প্রবেশের আগে ঠিকই ছিলেন, তারপর যন্ত্রের মধ্যে এমন কি হলো যে মহিলা প্রাণ হারালে?
এস্থারের জীবনের প্রথম দিক ছিল সংগ্রামমুখর, তবে তাঁর মধ্যে ছিল অদম্য ইচ্ছাশক্তি। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি কলকাতা ছেড়ে মুম্বাইতে চলে যান চলচ্চিত্রের প্রতি নিজের ভালোবাসা পূরণের জন্য। শুরুতে তিনি থিয়েটারে নৃত্য পরিবেশন করতেন এবং সিনেমার বিরতিতে প্রজেক্টর রিল পরিবর্তনের সময় মঞ্চে নাচতেন। তবে তাঁর স্বপ্ন ছিল বড় পর্দায় নাম লেখানো।
এস্থারের পরিশ্রম এবং প্রতিভার জন্যই তিনি “উলটি গঙ্গা”, “বিজলি”, “জঙ্গল কিং” এবং “বসন্ত” চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সাহসী এবং নির্ভীক চরিত্রে অভিনয় করার জন্য তিনি খ্যাতি লাভ করেছিলেন। শুধু অভিনয়েই নয়, তিনি একটি প্রযোজনা সংস্থা “সিলভার প্রোডাকশনস” গড়ে তোলেন এবং তাঁর অধীনে ১৬টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে প্রথম সফল নারী প্রযোজক হিসেবে নিজের অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করেন।
১৯৪৭ সালে যখন ভারত প্রথম “মিস ইন্ডিয়া” প্রতিযোগিতা আয়োজন করে, তখন এস্থার আব্রাহাম ৩১ বছর বয়সে, গর্ভবতী অবস্থায়ও এই খেতাব জয় করেছিলেন। এটি ছিল একটি ইতিহাসময় মুহূর্ত, যা প্রমাণ করেছিল যে, যেকোনো পরিস্থিতিতেই মানুষ তার স্বপ্নপূরণে সক্ষম। এস্থার শুধু রূপ-সৌন্দর্যের প্রতীক ছিলেন না, তিনি ছিলেন মেধা, কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার প্রতীক।
এস্থার দুটি বিয়ে হয়েছিল। প্রথম বিয়েতে তাঁর একটি সন্তান ছিল, এবং পরবর্তী সময়ে তিনি অভিনেতা সৈয়দ হাসান আলী জায়েদী (কুমার নামে পরিচিত) এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের চারটি সন্তান হয়, তাদের মধ্যে একজন, হায়দার আলী, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনে কাজ করেছেন। তাঁর মেয়ে, নাকি জাহান ১৯৬৭ সালে “ইভ’স উইকলি মিস ইন্ডিয়া” খেতাব জিতেছিলেন এবং অস্ট্রেলিয়ার “কুইন অফ দ্য প্যাসিফিক” প্রতিযোগিতায় ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। মায়ের এই প্রেরণাদায়ক পদাঙ্ক অনুসরণ করে মেয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।
তাঁর জীবন ছিল সবসময় চ্যালেঞ্জে ভরা, কিন্তু তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল নিজের স্বপ্ন পূর্ণ করা। একসময় তাঁকে পাকিস্তানের গুপ্তচর হিসেবে সন্দেহ করা হয়েছিল, তবে পরবর্তীতে এটি প্রমাণিত হয় যে, তিনি শুধুমাত্র চলচ্চিত্র প্রচারের জন্য পাকিস্তানে যেতেন।
এস্থার ভিক্টোরিয়া আব্রাহাম ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট ৯০ বছর বয়সে চিরবিদায় নেন, তবে তাঁর জীবন আজও আমাদের প্রেরণা দেয়। তাঁর বক্তব্য ছিল, “কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। Impossible শব্দের ভেতরেই লুকিয়ে আছে I am possible!” প্রমীলা ছিলেন সেই বিরল নারী, যিনি শুধু চলচ্চিত্র জগতে নয়, গোটা সমাজে নারীশক্তির উদাহরণ হয়ে থাকবেন।