ব্যুরো নিউজ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : লন্ডনে উগ্র দক্ষিণপন্থী কর্মী টমি রবিনসন-এর নেতৃত্বে একটি বিশাল অভিবাসন বিরোধী র্যালি সহিংস রূপ ধারণ করে, যার ফলে বিক্ষোভকারী এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনায় ২৬ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন এবং ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সংঘর্ষের সূত্রপাত
মেট্রোপলিটন পুলিশের মতে, রবিনসনের সমর্থকরা “স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম”-এর আয়োজিত পাল্টা বিক্ষোভ থেকে তাদের আলাদা করে রাখা নিরাপত্তা বেষ্টনী ভাঙার চেষ্টা করলে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুলিশ কর্মকর্তাদের ঘুষি, লাথি মারা হয় এবং বোতল দিয়ে আঘাত করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দাঙ্গা-প্রতিরোধী শিল্ড ও হেলমেট পরা অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করতে হয়। এই হামলায় চারজন পুলিশ কর্মকর্তা গুরুতর আহত হন, যার মধ্যে একজনের দাঁত ভেঙেছে, একজনের মস্তিষ্কে আঘাত লেগেছে, একজনের নাক ভেঙে যাওয়ার সন্দেহ করা হচ্ছে এবং আরেকজনের মেরুদণ্ডে আঘাত লেগেছে।
র্যালিতে এলন মাস্কের বিস্ফোরক বার্তা
এই র্যালিতে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রযুক্তি বিলিয়নেয়ার এলন মাস্ক অভিবাসন নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “ব্রিটিশ হওয়াতে কিছু সৌন্দর্য আছে, এবং এখানে যা ঘটছে আমি দেখছি তা হলো ব্রিটেনের ধ্বংস। এটি ধীরে ধীরে ক্ষয় দিয়ে শুরু হয়েছিল, কিন্তু এখন ব্যাপক অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসনের কারণে দ্রুত গতিতে বাড়ছে।”
তিনি ১ লাখেরও বেশি লোকের সমাবেশে বলেন, “সহিংসতা আসছে” এবং “আপনাদের হয় রুখে দাঁড়াতে হবে, নয়তো মরতে হবে।”
মাস্ক বলেন, “আমার বার্তা তাদের কাছে: যদি এটি চলতে থাকে, তবে সেই সহিংসতা আপনাদের কাছে আসবে, আপনাদের আর কোনো বিকল্প থাকবে না। আপনারা একটি মৌলিক পরিস্থিতিতে আছেন। আপনারা সহিংসতা বেছে নিন বা না নিন, সহিংসতা আপনাদের দিকে আসছে। আপনারা হয় রুখে দাঁড়ান অথবা মারা যান, আমি মনে করি এটাই সত্যি।”
তিনি আরও সরাসরি কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমি সত্যিই মনে করি যে ব্রিটেনে সরকার পরিবর্তন হওয়া দরকার। আমাদের আর চার বছর অপেক্ষা করার মতো সময় নেই, বা যখনই পরবর্তী নির্বাচন হোক না কেন, তা অনেক দীর্ঘ সময়। কিছু একটা করা দরকার। সংসদের বিলুপ্তি এবং নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।”
র্যালির বিস্তারিত ও কারণ
র্যালির আয়োজকরা এই বিক্ষোভকে “ইউনাইট দ্য কিংডম” মার্চ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তারা দাবি করেন যে এই বিক্ষোভে ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ যোগ দিয়েছিল। টমি রবিনসন এই সমাবেশকে “দেশপ্রেমের জোয়ার” এবং একটি “সাংস্কৃতিক বিপ্লব” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বিক্ষোভকারীরা ইংল্যান্ডের সেন্ট জর্জের লাল-সাদা পতাকা এবং যুক্তরাজ্যের ইউনিয়ন জ্যাক বহন করছিল এবং “আমরা আমাদের দেশ ফেরত চাই”, “নৌকা বন্ধ করো” ও “যথেষ্ট হয়েছে, আমাদের সন্তানদের বাঁচাও”-এর মতো স্লোগান দিচ্ছিল।
অন্যদিকে, পাল্টা বিক্ষোভকারীরা “শরণার্থীরা স্বাগত” এবং “উগ্র দক্ষিণপন্থীদের ধ্বংস করো”-এর মতো প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিল। এই বিক্ষোভ এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন অভিবাসীরা ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে অতিরিক্ত ভিড়ের নৌকায় করে ব্রিটেনে প্রবেশ করছে, যা নিয়ে দেশটিতে তীব্র বিতর্ক চলছে।
কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে ফুটবল ম্যাচ এবং কনসার্টের মতো অন্যান্য বড় ইভেন্টগুলোর পাশাপাশি এই বিক্ষোভগুলো সামাল দিতে লন্ডনে ১৬০০-এর বেশি পুলিশ কর্মকর্তা মোতায়েন করা হয়েছিল। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সহিংসতা নিয়ে তদন্ত চলছে।