Mamata Manoj Pant

ব্যুরো নিউজ ১৩ আগস্ট ২০২৫ : পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) নির্দেশ অমান্য করার একদিন পর, কমিশন মঙ্গলবার রাজ্য সরকারের মুখ্যসচিব মনোজ পান্তকে বুধবার বিকেল ৫টার মধ্যে তাদের দিল্লির সদর দফতরে তলব করেছে। রাজ্য সচিবালয়ের সূত্র অনুযায়ী, মনোজ পান্ত সম্ভবত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দিল্লিতে হাজির হবেন।

অমান্য করা হলো কমিশনের নির্দেশ

সোমবার পশ্চিমবঙ্গ সরকার পাঁচজন ভোটকর্মীর বিরুদ্ধে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করে, যার মধ্যে দুজন ইলেক্টরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ERO), WBCS কার্যনির্বাহী এবং সহকারী ERO-রা রয়েছেন। এই তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, কারণ ইসিআই ওই কর্মকর্তাদের অবিলম্বে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল। রাজ্য সরকার এই নির্দেশের বদলে তদন্তের পথ বেছে নেয়।

West Bengal Voter List SIR : প্রাথমিক সাম্পেলেই ভোটার তালিকায় ভুয়ো নাম ! সাসপেন্ড দুই WBCS অফিসার সহ ৫ কর্মী।


মুখ্যসচিবের চিঠি ও রাজ্য সরকারের অবস্থান

রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পান্ত ইসিআই সচিব সুজিত কুমার মিশ্রকে একটি চিঠি লিখে জানান যে, ইসিআই-এর নির্দেশ সত্ত্বেও রাজ্য সরকার কেন অবিলম্বে কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করছে না। চিঠিতে বলা হয়, “এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিস্তারিত তদন্তের আগে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা কঠোর ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। কারণ এই কর্মকর্তারা সততা এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন। এই ধরনের পদক্ষেপ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পাশাপাশি অন্যান্য কর্মকর্তাদের মনোবল ভেঙে দিতে পারে।”
রাজ্য সরকার আপাতত শুধুমাত্র তামলুক ব্লকের সহকারী ERO এবং বারুইপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে। পান্ত ইসিআই-কে জানিয়েছেন যে, অভ্যন্তরীণ তদন্ত শেষ হওয়ার পর রাজ্য একটি বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেবে।

 

ইসিআই-এর কড়া পদক্ষেপ

ইসিআই এর আগে মনোজ পান্তকে দুটি ERO এবং দুটি AERO-কে অবিলম্বে বরখাস্ত করার এবং পাঁচজন ভোটকর্মীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছিল। এই নির্দেশ পালনের জন্য ১১ আগস্ট বিকেল ৩টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এই কারণেই ইসিআই এবার মুখ্যসচিবকে সরাসরি তলব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


মুখ্যমন্ত্রীর কড়া প্রতিক্রিয়া

৬ আগস্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইসিআই-এর এই নির্দেশের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে তিনি কোনো রাজ্য সরকারি কর্মচারীকে এইভাবে শাস্তি পেতে দেবেন না। তিনি ইসিআই-এর বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করে বলেন যে রাজ্য সরকার চারজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করবে না, কারণ তারা রাজ্য সরকারের কর্মচারী।


অভিযোগ এবং সম্ভাব্য শাস্তি

এই চারজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো যে তারা ভোটার তালিকায় নাম যোগ করার সময় তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। এছাড়াও, তারা তাদের লগইন আইডি এবং পাসওয়ার্ড অননুমোদিত ব্যক্তিদের সাথে শেয়ার করে ডেটা সুরক্ষার নীতি লঙ্ঘন করেছেন। যদি দোষী প্রমাণিত হয়, তবে আইন অনুযায়ী তাদের কমপক্ষে তিন মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানাও হতে পারে।

Voter List : ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কারণ জানাতে বাধ্য নয় ! সুপ্রিম কোর্টকে জানালো নির্বাচন কমিশন ।

আইনের দ্বৈতনীতি

 যদি কোনো সাধারণ নাগরিক আইন ভঙ্গ করেন, জনশৃঙ্খলা বজায় রাখার অজুহাতে পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নেয়  কিন্তু সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে অনেক ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত জটিলতা দেখা যায়। তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার আগে সাধারণত বিভাগীয় তদন্ত বা উচ্চপদস্থ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়, যা প্রক্রিয়াটিকে দীর্ঘায়িত করে। আর ঠিক এই প্রণালী কে ব্যাবহার করে সাম্প্রতিক কালে দেখা গেছে দুর্নীতি ঢাকার চেষ্টা , তথ্য প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা এমনকি সোজাসুজি সাংবিধানিক নির্দেশ অমান্যের চেষ্টা ! বিচারব্যবস্থায় এই দ্বৈত নীতির প্রয়োগ নিয়ে প্রতিবার বিতর্ক সৃষ্টি করে। তাই এই ক্ষেত্রে কোনও সংশয় থাকেনা যে আইন সবার ক্ষেত্রে সমান নয় এবং প্রতিক্ষেত্রে কেন সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হয়  ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর