sulawesi earthquake tsunami survival tips

ব্যুরো নিউজ ০৫ নভেম্বর ২০২৫ : বিশ্বব্যাপী সুনামি সচেতনতা দিবস পালনের দিনেই তীব্র ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপ। বুধবার ভোরের আগে এই শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানলে বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দেশের আবহাওয়া, জলবায়ু ও ভূ-পদার্থবিদ্যা সংস্থা (BMKG) জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.২। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের বা বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি, তবে BMKG নিশ্চিত করেছে যে সুনামির কোনো ঝুঁকি নেই

 

ভোরেই আতঙ্ক, কেন ইন্দোনেশিয়া এত স্পর্শকাতর?

ভূমিকম্পের তীব্রতা কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয় এবং এর ফলে আতঙ্কিত মানুষজন ঘর ছেড়ে রাস্তায় ছুটে আসেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অঞ্চলের পরিকাঠামো এই ভূকম্পন সহ্য করতে পেরেছে। জরুরি মোকাবিলা দল পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এবং সম্ভাব্য আফটারশকগুলির উপর নজর রাখতে কাজ শুরু করেছে।

ইন্দোনেশিয়া এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ান মহাদেশের মাঝে অবস্থিত, যা কুখ্যাত “রিং অফ ফায়ার”-এর অংশ। এটি এমন একটি বিশাল ভূমিকম্পন বলয়, যেখানে বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ ভূমিকম্প এবং ৭৫ শতাংশ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটে। এই ভূ-তাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় অঞ্চলে থাকার কারণেই ইন্দোনেশিয়ায় ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান, ইউরেশিয়ান এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটগুলির ক্রমাগত সংঘর্ষের ফলে ভূমি সর্বদা কেঁপে ওঠে। এই কারণেই ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্প-সংবেদনশীল অঞ্চল ।

উপকূলীয় এবং দ্বীপ অঞ্চলে বসবাসকারী ২৭ কোটিরও বেশি মানুষের জন্য এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

Kolkata : ডেঙ্গুতে ৪ বছরের শিশুর মৃত্যু: কলকাতার উত্তর-দক্ষিণে বাড়ছে উদ্বেগ, পুরসভার দিকে আঙুল তুলল বিরোধীরা

 

ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানেই লুকিয়ে প্রাণ বাঁচানোর সূত্র

ভূমিকম্পের পরই সুনামি সতর্কতা না থাকার আশ্বাস দিলেও, সারা বিশ্বে আজ (৫ নভেম্বর) পালিত সুনামি সচেতনতা দিবস স্মরণ করিয়ে দেয়, উন্নত প্রযুক্তির বাইরেও ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান কেন গুরুত্বপূর্ণ।

উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষজন প্রজন্ম ধরে এমন প্রাকৃতিক সতর্কবার্তা পর্যবেক্ষণ করে এসেছেন যা আধুনিক প্রযুক্তিহীন এলাকায় জীবন বাঁচাতে পারে।

  • পশুর অস্বাভাবিক আচরণ: অনেক আদিবাসী সম্প্রদায় পশুর অস্বাভাবিক আচরণকে আসন্ন সুনামির প্রাকৃতিক সতর্কতা হিসেবে ব্যবহার করে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, প্রাণীগুলি নিম্ন-কম্পাঙ্কের কম্পন, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে পরিবর্তন বা স্ট্রেসড শিলা থেকে নির্গত গ্যাসগুলি মানুষের আগে অনুভব করতে পারে। ২০০৪ সালের সুনামির সময় শ্রীঙ্কার ইয়ালা জাতীয় উদ্যানে প্রাণীরা ঢেউ আসার আগেই উচ্চ ভূমিতে পালিয়ে গিয়েছিল। হাতি বা কুকুরদের উচ্চ ভূমিতে পালানো, বা ইঁদুরদের গর্ত ছেড়ে বের হয়ে আসা—এইগুলিই প্রাকৃতিক অ্যালার্ম।
  • জোয়ারের ইঙ্গিত: সুনামির সবচেয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত হলো যখন সমুদ্র হঠাৎ উপকূল থেকে বহু দূরে সরে যায়, যার ফলে সমুদ্রের তলদেশ বা প্রবাল প্রাচীর উন্মোচিত হয়। ইন্দোনেশিয়ার সিমুলু দ্বীপের স্থানীয় কিংবদন্তি “স্মং” গল্পে এই আচরণের কথা উল্লেখ আছে এবং দ্রুত উঁচু জায়গায় যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
  • শ্রবণীয় সংকেত: সমুদ্র থেকে আসা অদ্ভুত, জোরে আওয়াজ—যা অনেক সময় ট্রেনের শব্দের মতো—তাও সুনামি আসার ইঙ্গিত দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেন, এই ধরনের ঐতিহ্যবাহী পর্যবেক্ষণ, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পরিমার্জিত হয়েছে, সরকারি সতর্কতার পাশাপাশি জীবন রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

Kolkata Flooded : বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু: ক্ষতিপূরণ নিয়ে বিজেপি-তৃণমূল বাগযুদ্ধ, কলকাতার পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন

ইন্দোনেশিয়া প্রায় ১৩০টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরিরও ভূমি , যা এটিকে বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগ-প্রবণ দেশে পরিণত করেছে। এই সর্বশেষ ভূমিকম্প আবারও মনে করিয়ে দিল, এই অঞ্চলে সর্বদা প্রস্তুত থাকার গুরুত্ব কতখানি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর