ব্যুরো নিউজ ৩০ অক্টোবর ২০২৫ : আসামের শ্রীভূমি (আগের করিমগঞ্জ) জেলার একটি দলীয় সভায় কংগ্রেস নেতা বিধুভূষণ দাস বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত, ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি গেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার পর রাজ্য সরকার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। সম্প্রতি এক বইয়ের মলাটে উত্তর-পূর্ব ভারতের অংশবিশেষ বাংলাদেশের মানচিত্রে দেখানোর পর দুই দেশের মধ্যে যখন উত্তেজনা চলছিল, ঠিক সেই সময় এই ঘটনাটি নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করল।
শ্রীভূমির ভাঙ্গা অঞ্চলের বাসিন্দা এবং সেবা দলের জেলা ইউনিটের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন, শ্রী দাস গত সোমবার স্থানীয় কংগ্রেস কার্যালয় ‘ইন্দিরা ভবনে’ শ্রীভূমি জেলা সেবা দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় বক্তব্য শুরু করার আগে এই গানটি গান।
বিজেপির আক্রমণ ও কংগ্রেসের জবাব
এই ঘটনা সামনে আসতেই ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কংগ্রেসের উপর কড়া আক্রমণ শুরু করেছে। তারা কংগ্রেসকে “বাংলাদেশ-অনুরাগী” বলে কটাক্ষ করে জাতীয়তাবাদের অভাবের অভিযোগ এনেছে।
অন্যদিকে, কংগ্রেস এই সমালোচনাকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে উড়িয়ে দিয়েছে। দলের জেলা মিডিয়া সেলের প্রধান শাহাদত আহমেদ চৌধুরী স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, শ্রী দাস গানটি গাওয়ার আগে উপস্থিত সবাইকে বলেছিলেন যে, তিনি একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইবেন। তিনি বলেন, “আমার সোনার বাংলা গানটি প্রধানত রবীন্দ্রনাথের রচনা হিসাবেই পরিচিত।” চৌধুরী আরও জানান, শ্রী দাস প্রতি স্বাধীনতা দিবসে ইন্দিরা ভবনে ভারতের জাতীয় পতাকা তোলেন। “তাঁর পক্ষে এটিকে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গণ্য করার প্রশ্নই ওঠে না। এটা ছিল কেবল তাঁর মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ,” তিনি সাংবাদিকদের জানান।
বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র শাহজাদ পুনাওয়ালা দিল্লীতে সাংবাদিক সম্মেলন করে কংগ্রেসকে বাংলাদেশের সমর্থক বলে আক্রমণ করেন এবং এই ঘটনাকে কংগ্রেসের **’ভোট-ব্যাঙ্কের রাজনীতি’**র প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
গানের তাৎপর্য ও এলাকার সংবেদনশীলতা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের প্রতিবাদে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রচনা করেন। গানটি দ্রুতই বাঙালি ঐক্য এবং প্রতিবাদের প্রতীকে পরিণত হয়। গানটি লেখার প্রায় সাত দশক পর, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ এটিকে তাদের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করে।
শ্রীভূমি জেলাটি বাংলাদেশের একদম পাশেই অবস্থিত এবং এখানকার বেশিরভাগ মানুষই বাংলাভাষী। স্থানীয়দের মধ্যে সীমান্তের ওপারের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক যোগসূত্র রয়েছে, যা এই ধরনের ঘটনাকে বিশেষ সংবেদনশীল করে তোলে।
তবে ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হওয়া এবং সেই প্রয়াসে কংগ্রেসের তৎকালীন ব্যর্থতা এবং পরোক্ষ মদতের ইতিহাস থাকার পর , এখন ভিন দেশের রাষ্ট্রীয় সঙ্গীত গেয়ে অখণ্ড বঙ্গভুমির মাহাত্য জাহির করা , একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক কৌশলের আড়ালে রাষ্ট্রদ্রোহের বার্তা মাত্র !



















