ব্যুরো নিউজ, ০৮ই ডিসেম্বর ২০২৫ : দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে নদিয়া জেলার তাহেরপুর থানার কামগাছি জয়পুর এলাকায় বসবাস করার পর অবশেষে ভারতীয় নাগরিকত্ব পেলেন এক বাংলাদেশি দম্পতি। বাংলাদেশের সানা্তনপুরের বাসিন্দা লতুরাম শিকদার এবং পণ্ডিতপুরের বাসিন্দা তাঁর স্ত্রী পদ্মা শিকদার সোমবার নাগরিকত্ব শংসাপত্র হাতে পেয়ে গভীর স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
দম্পতি জানান, তাঁরা ভারতে আসার কয়েক বছর পরেই আধার কার্ড পেয়েছিলেন, কিন্তু ২০০২ সালে রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (Special Intensive Revision – SIR) প্রক্রিয়ায় তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
নাগরিকত্ব পাওয়ার পর পদ্মা শিকদার বলেন, “অক্টোবরের শেষে যখন এসআইআর (SIR) প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা হলো, আমরা ভীষণ উদ্বেগে ছিলাম। কোনও সমস্যা হতে পারে আঁচ করেই আমরা ১০ অক্টোবর সিএএ (CAA) ক্যাম্পে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করি এবং ১৯ নভেম্বর শংসাপত্র পাই।” লতুরাম শিকদার আরও বলেন, “আমরা খুবই খুশি, কারণ এখন থেকে ভোট দিতে পারব। আমরা বাংলাদেশে জন্মেছি ঠিকই, কিন্তু বড় হয়েছি নদিয়া জেলাতেই।”
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ: লতুরাম শিকদার দাবি করেছেন, “বাংলাদেশে মুসলিম মৌলবাদীদের দ্বারা সংখ্যালঘুরা নির্মমভাবে নির্যাতিত হন। আমাদের কাছে তা অসহ্য ছিল এবং সেই কারণেই আমরা ভারত চলে আসি।”
রানাঘাট উত্তর পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় এই দম্পতিকে নাগরিকত্ব দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “আমরা দম্পতিকে বলেছিলাম আতঙ্কিত না হতে। অবশেষে তাঁরা নাগরিকত্বের শংসাপত্র পেয়েছেন। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে আবেদন করলে অন্যরাও সিএএ কার্ড পাবেন।”
সুপ্রিম কোর্টে বিশেষ SIR-এর আবেদন: ভোটের অধিকারের দাবি
এদিকে, বাংলাদেশ থেকে ২০১৪ সালের আগে পশ্চিমবঙ্গে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান উদ্বাস্তুদের জন্য বিশেষ অন্তর্বর্তী ভোটার তালিকা সংশোধনী (Special Interim Revision – SIR) চেয়ে সোমবার সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র, নির্বাচন কমিশন (ECI) এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নোটিশ জারি করেছে। প্রধান বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চ বেসরকারি সংস্থা ‘আত্মদীপ’-এর দায়ের করা এই পিটিশনটি গ্রহণ করেছে। আগামী ৯ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।
পিটিশনে দাবি করা হয়েছে, ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা বহু উদ্বাস্তু ২০১৪ সালের আগে ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করলেও, তাঁদের আবেদনপত্রের কোনও অগ্রগতি হয়নি।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) অনুযায়ী: আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টান সংখ্যালঘুরা, যারা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে প্রবেশ করেছেন, তাঁরা নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
NGO-র দাবি: পিটিশনে বলা হয়েছে, যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও প্রশাসনিক বিলম্বের কারণে অনেকের নাগরিকত্বের আবেদনপত্র এখনও ঝুলে আছে। আবার অনেকে নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিধিমালা, ২০২৪-এর অনলাইন পদ্ধতি ব্যবহার করে ধারা 6B-এর অধীনে আবেদন জানাতে পারেননি।
ভোটার তালিকা প্রসঙ্গ: ‘আত্মদীপ’-এর যুক্তি, এমন বহু উদ্বাস্তু বছরের পর বছর ধরে ভারতে বাস করছেন এবং তাঁরা ইতিমধ্যেই ২০২৫ সালের ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন। সংস্থাটির দাবি, বর্তমানে চলা বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (SIR) প্রক্রিয়ায় তাঁরা যাতে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত না হন, তা নিশ্চিত করতে তাদের সাময়িক ভোটার তালিকাভুক্তি (provisional voter enrolment) করার অনুমতি দেওয়া উচিত। নাগরিকত্ব প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই আবেদনকারীদের সুরক্ষার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে নির্দেশিকা জারির আর্জি জানানো হয়েছে।

















