ব্যুরো নিউজ ২৭ জুন: ২০১৩ সালে চীনের এক কারখানার কর্মী জে ওয়ে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় তার ডান হাতটি সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেন। যে কোনো সাধারণ পরিস্থিতিতে এটি হতো এক মর্মান্তিক পরিণতি, কিন্তু চিকিৎসকরা হাল ছাড়েননি। এক যুগান্তকারী চিকিৎসা পদ্ধতিতে তারা তার বিচ্ছিন্ন হাতটিকে বাঁচিয়ে তোলেন অস্থায়ীভাবে তার পায়ের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে। এটি কেবল একটি চিকিৎসার গল্প নয়, এটি মানবতা, অসাধারণ চেষ্টা এবং এক অদম্য বিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি।
দুর্ঘটনা ও প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ
কারখানার একটি ড্রিলিং মেশিনে কাজ করার সময় জে ওয়ের ডান হাতটি সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসকরা দেখতে পান যে জে ওয়ের হাতটি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তার বাহুতেও প্রচণ্ড আঘাত লেগেছে। তাৎক্ষণিকভাবে হাতটিকে বাহুতে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব ছিল না, কারণ রক্ত সরবরাহ দ্রুত পুনরুদ্ধার না হলে হাতটি মৃত হয়ে যেত। এই সংকটজনক পরিস্থিতিতে, চীনের হুনান প্রদেশের জিয়াংয়া হাসপাতালের চিকিৎসকরা এক অভাবনীয় সিদ্ধান্ত নেন।
ফের মাস্কের পরামর্শ: দেশে বাড়ছে কোভিড উদ্বেগ, হাসপাতালগুলিকে কেন্দ্রের বিশেষ নির্দেশ
পায়ের সঙ্গে জোড়া: জীবন বাঁচানোর কৌশল
হাতটিকে সজীব রাখতে চিকিৎসকরা জে ওয়ের বিচ্ছিন্ন ডান হাতটিকে তার বাম গোড়ালির সঙ্গে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেন। এই কৌশলটির উদ্দেশ্য ছিল হাতটিকে পায়ের রক্তনালী থেকে রক্ত সরবরাহ পেতে দেওয়া, যাতে এর কোষগুলি জীবিত থাকে। এই সময়ের মধ্যে, জে ওয়ে জানান, তার পা স্বাভাবিকই লাগত, শুধু একটু ভারী মনে হতো। হাতটি গোড়ালির সঙ্গে সংযুক্ত থাকাকালীন এটি অবশ ছিল, কারণ স্নায়ুগুলি তখনও যুক্ত হয়নি, তবে রক্ত চলাচলের কারণে হাতটি উষ্ণ থাকত।
পুনরায় সংযোগ এবং আরোগ্যের আশা
প্রায় এক মাস পর, যখন জে ওয়ের বাহুর আঘাত সেরে ওঠে এবং তা পুনরায় প্রতিস্থাপনের জন্য প্রস্তুত হয়, তখন চিকিৎসকরা নয় ঘণ্টার এক জটিল অস্ত্রোপচার করেন। এই সফল অস্ত্রোপচারে হাতটিকে গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন করে আবার তার বাহুতে ফিরিয়ে আনা হয়। প্রাথমিকভাবে জে ওয়ে আঙুল নাড়াতে না পারলেও, চিকিৎসকরা আশা প্রকাশ করেন যে ধীরে ধীরে স্নায়ুগুলো আবার সংযুক্ত হলে তিনি তার হাতের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ফিরে পাবেন। তাকে আরও বেশ কয়েকটি অস্ত্রোপচার এবং দীর্ঘ পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
এই ঘটনাটি মাইক্রোসার্জারির ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং এটি প্রমাণ করে যে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান কীভাবে গুরুতর আহত রোগীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।