ব্যুরো নিউজ ৩০ মে : বিশ্ব অর্থনীতি যখন নানা অনিশ্চয়তা এবং চিনের ক্রমহ্রাসমান প্রবৃদ্ধির চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, ঠিক সেই মুহূর্তে ভারতের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিয়েছে আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং (EY)। বুধবার প্রকাশিত EY-এর ‘ইকোনমি ওয়াচ মে’ সংস্করণের রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগামী ২০২৫-২৬ এবং ২০২৬-২৭ অর্থবর্ষে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে চিনের চেয়ে অনেক বেশি স্থিতিশীল থাকবে।

চিনের প্রবৃদ্ধিতে নিম্নমুখী প্রবণতা, ভারতের স্থিতিশীল পূর্বাভাস

EY-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, চিনের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনায় ‘তাৎপর্যপূর্ণ নিম্নমুখী সংশোধন’ (tangible downward revision) দেখা গেছে। বর্তমান অর্থবর্ষ এবং পরবর্তী অর্থবর্ষের জন্য চিনের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ০.৬ শতাংশ পয়েন্ট এবং ০.৫ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। ২০২৭ সালেও চিনের জন্য মধ্যম মানের প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশিত, যার পরে তা আরও হ্রাস পাবে বলে EY অনুমান করছে। এটি বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে চিনের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জগুলোকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরছে।

অন্যদিকে, EY রিপোর্ট ভারতের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর জোর দিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে ভারত ৬.২ শতাংশ এবং ২০২৬-২৭ অর্থবর্ষে ৬.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হতে পারে।

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও নীতিগত সমর্থন

রিপোর্টে ভারতের প্রধান মুদ্রাস্ফীতির গতিপথ তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ২০২৫ (FY26) সালে সিপিআই (CPI) মুদ্রাস্ফীতি ৪.২ শতাংশ, ২০২৬ (FY27) সালে ৪.১ শতাংশ এবং তারপর ৪ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় কাছাকাছি।

EY রিপোর্টে জোর দেওয়া হয়েছে যে, যদি সিপিআই মুদ্রাস্ফীতি ২০২৬ অর্থবর্ষে গড়ে ৪ শতাংশ বা তার নিচে থাকে, তবে ভারত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.৫ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হবে। এর জন্য সরকাররকে মূলধনী ব্যয় বৃদ্ধির গতি পুনরুদ্ধার করতে হবে এবং রেপো রেট কমানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে, যাতে আর্থিক ও রাজস্ব নীতি সমর্থন দেশের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.৫ শতাংশের নিচে নেমে না আসে।

EY আরও প্রত্যাশা করছে যে, ২০২৫ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে (Q1 FY26) মুদ্রাস্ফীতি গড়ে প্রায় ৩.৪ শতাংশ হতে পারে, যেখানে পুরো বছরের মুদ্রাস্ফীতি ৩.৫ শতাংশ থেকে ৪.০ শতাংশের মধ্যে থাকবে। এটি ২০২৬ অর্থবর্ষে নীতিগত সুদের হার কমানোর চক্রের ধারাবাহিকতার জন্য শুভ লক্ষণ। EY-এর অনুমান, ২০২৫ সালের ক্যালেন্ডার বছরের শেষ নাগাদ রেপো রেট ৫.২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে।

উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি সূচক এবং অর্থনীতির চালিকা শক্তি

২০২৫ সালের এপ্রিল এবং মে মাসের উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি সূচকগুলো অর্থনৈতিক গতি বজায় রাখার জন্য টেকসই নীতিগত সমর্থনের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দেয়:

  • উৎপাদন খাতের পিএমআই (PMI): এপ্রিল ২০২৫-এ ১০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৮.২-তে উন্নীত হয়েছে।
  • পরিষেবা খাতের পিএমআই: ৫৮.৭-এ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এর দীর্ঘমেয়াদী গড় ৫৪.২-এর থেকে অনেক বেশি।
  • মোট জিএসটি (GST) সংগ্রহ: এপ্রিল ২০২৫-এ ২.৩৭ লক্ষ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা জিএসটি চালুর পর থেকে মাসিক সংগ্রহের মধ্যে সর্বোচ্চ।
  • মোট ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি: মার্চ ২০২৫-এ প্রায় স্থিতিশীল ছিল ১২.১ শতাংশে, যা ফেব্রুয়ারী ২০২৫-এর ১২.০ শতাংশের কাছাকাছি।
  • পণ্য রপ্তানি ও আমদানির প্রবৃদ্ধি: এপ্রিল ২০২৫-এ যথাক্রমে ৯.০ শতাংশ এবং ১৯.১ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মার্চ ২০২৫-এর ০.৭ শতাংশ এবং ১১.৪ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি। এটি আংশিকভাবে ভিত্তিগত প্রভাব (base effects) দ্বারা সহায়তাপ্রাপ্ত।

    আলিপুরদুয়ারের জনসভায় মোদীর বার্তা : ‘নির্মম সরকার’কে উপড়ে ফেলে ‘অপারেশন পশ্চিমবঙ্গ’র ডাক!

নীতিগত পদক্ষেপের গুরুত্ব

EY রিপোর্ট অনুসারে, ভারত তার জিডিপি প্রবৃদ্ধির উপর অভ্যন্তরীণ ঘটনা এবং বৈশ্বিক মন্দার বিরূপ প্রভাব কমানোর জন্য তার আর্থিক এবং রাজস্ব নীতি উভয় লিভারের উপর নির্ভর করতে পারে। রিপোর্টে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, “এই মুহূর্তে, সরকারের মূলধনী ব্যয় বৃদ্ধির গতি পুনরুদ্ধার করা এবং রেপো রেট কমানোর চক্রের ধারাবাহিকতা দ্বারা পরিপূরক হওয়া প্রয়োজন, যাতে আর্থিক ও রাজস্ব নীতি সহায়তা নিশ্চিত করতে পারে যে ভারতের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২৬ অর্থবর্ষে ৬.৫ শতাংশের নিচে নেমে না যায়।”

উপসংহার: EY-এর এই রিপোর্ট ভারতের অর্থনীতির একটি ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরেছে, যা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও শক্তিশালী দেশীয় চাহিদা, নিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতি এবং নমনীয় আর্থিক নীতির মাধ্যমে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম। চিনের অর্থনৈতিক দুর্বলতা ভারতের জন্য বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নিজেদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করার সুযোগ তৈরি করছে, যা ভারতের জন্য একটি সুসংবাদ।


বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর