ব্যুরো নিউজ ১৪ মে: ভারত-পাক সীমান্তে সাম্প্রতিক সংঘর্ষবিরতির আবহে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করল চিন। ফের অরুণাচল প্রদেশের কয়েকটি স্থানের নাম বদলে নিজেদের মানচিত্রে দেখানোর চেষ্টা করল বেজিং। তবে নয়াদিল্লির প্রতিক্রিয়া ছিল তীব্র। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, অরুণাচল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং চিনের এমন নামকরণ প্রচেষ্টা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “চিনের এই ধরণের অযৌক্তিক ও অকার্যকর প্রচেষ্টা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। শুধুমাত্র নাম বদল করলেই বাস্তব বদলায় না। অরুণাচল ছিল, আছে এবং থাকবে ভারতেরই অংশ।”
ভূ-রাজনৈতিক চাপ এবং ঐতিহাসিক সংঘাত
চিন দীর্ঘদিন ধরেই অরুণাচল প্রদেশকে তিব্বতের অংশ বলে দাবি করে আসছে। ২০২৩ সালে তারা রাজ্যের প্রায় ৩০টি স্থানের নতুন নাম দিয়ে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে তা প্রচার করে। কিন্তু প্রতিবারই ভারত এই প্রচেষ্টাকে জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। অরুণাচলের ভৌগলিক অবস্থান অত্যন্ত কৌশলগত। এটি তিব্বতের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত ভাগ করে, যা দুই দেশের মধ্যে বারবার উত্তেজনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুধু নাম বদল নয়, চিনের তরফে সীমান্তের ভেতরে অবৈধ নির্মাণও সমস্যা তৈরি করছে। ২০১৯ সালে আমাকো ক্যাম্পের কাছে একটি অস্থায়ী সেতু নির্মাণের অভিযোগ উঠেছিল। ২০২০ সালে দিবং উপত্যকাতেও অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল চিনা বাহিনী। একই বছর গলওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছিলেন ২০ জন ভারতীয় সেনা। পাল্টা আঘাতে চিনেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এ ঘটনার পরে দুই দেশ কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে একাধিক বৈঠকে বসে। সীমান্ত থেকে সেনা সরানো শুরু হয় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে এবং সেই প্রক্রিয়া শেষ হয় ২০২৪ সালের নভেম্বরে। এরপর কিছুটা স্বস্তি মিললেও অরুণাচলকে ঘিরে চিনের চলমান তৎপরতায় নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছুদিন অপেক্ষার অনুরোধ,শুনলেন না কেন রাজ্যপাল?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তে উত্তেজনার আবহে চিনের এই কার্যকলাপ একটি সুপরিকল্পিত কৌশল। যদিও বেজিং প্রকাশ্যে সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করলেও, তারা একাধিকবার পাকিস্তানের পাশে থাকার কথা জানিয়েছে। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার নিন্দা করলেও ভারতের বিরুদ্ধে কোনও অবস্থান থেকে সরেনি চিন। এই অবস্থায়, ভারতের অরুণাচল-বিষয়ক জোরালো প্রতিবাদ এবং অবস্থান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। চিন যতই কৌশলে অরুণাচলকে নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করুক, ভারত তার ঐক্য এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কোনও আপোস করবে না—এটাই নয়াদিল্লির স্পষ্ট বার্তা।