ব্যুরো নিউজ ৭ জুন : কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল: ১৬ই জুন রায়?
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্ট আদালত অবমাননার রুল জারি করেছে, যার ফলে তাঁর অস্বস্তি আরও বেড়েছে। আগামী ১৬ই জুন এই মামলার ফয়সালা হতে পারে এবং দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁকে জেলে পাঠানো হতে পারে।
কোন মামলায় রুল জারি হয়েছে?
গত ২৫শে এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এবং আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং অপমানজনক মন্তব্য করার ঘটনায় এই রুল জারি করা হয়েছে। উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ শিক্ষক নিয়োগ মামলার ধীর গতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের চেম্বারের বাইরে বিক্ষোভ দেখান। এই সময় আইনজীবী ফিরদৌস শামিম, বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ্ত দাশগুপ্ত সহ বেশ কিছু আইনজীবীকে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। একই সাথে, হাইকোর্ট চত্বরে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর বিরুদ্ধেও আপত্তিকর মন্তব্য ও স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, বার অ্যাসোসিয়েশনের কিছু আইনজীবী কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এর ফলস্বরূপ, বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজকে নিয়ে একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হয়।
কুণাল ঘোষের ভূমিকা:
বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ দেখানোর পর তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের সঙ্গে দেখা করেন এবং সেখান থেকে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেই সাংবাদিক বৈঠকে কুণাল ঘোষ সিপিএমের নেতাদের ছবি দেখিয়ে প্রশ্ন তোলেন যে, একসময় যে বিকাশ ভট্টাচার্যরা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে মামলা লড়েছেন, এখন কেন তাঁরাই চাকরি কাড়তে মরিয়া হয়ে পড়েছেন। এই প্রসঙ্গে কুণাল বিচারপতিদের সম্পর্কেও মন্তব্য করেন: “আর বিচারপতির কিছু কিছু সিপিএমের আইনজীবীকে দেখলে কী হয় জানি না। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখেছি। ভগবান-ভগবান-তারপর হল সাংসদ।” এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়।
আদালতের রুল ও পরবর্তী পদক্ষেপ:
আদালত প্রাথমিকভাবে এটিকে ফৌজদারি আদালত অবমাননা (criminal contempt) বলে মনে করে। হাইকোর্টের নির্দেশে কুণাল ঘোষ সহ উচ্চ প্রাথমিকের বিক্ষোভকারী সাতজন চাকরিপ্রার্থীর বিরুদ্ধে রুল জারি করা হয়েছিল। বর্তমানে, নারকেলডাঙা থানার মাধ্যমে কুণাল ঘোষকে হাইকোর্টের রুল নোটিস পাঠানো হয়েছে।
এই নোটিসে বলা হয়েছে যে, কুণাল ঘোষকে আদালত অবমাননার অভিযোগের কারণ দর্শাতে হবে এবং কেন তাঁকে জেলে পাঠানো হবে না বা শাস্তি দেওয়া হবে না, তার যুক্তি দিতে হবে। আগামী ১৬ই জুন বেলা সাড়ে ১২টায় হাইকোর্টের তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চের সামনে তাঁকে উত্তর সহ সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে। আদালতের অনুমতি ছাড়া তিনি আদালত থেকে বেরোতে পারবেন না বলেও স্পষ্ট জানানো হয়েছে।
আইন অনুযায়ী, দোষী সাব্যস্ত হলে হাইকোর্ট সরাসরি কুণাল ঘোষকে জেলে পাঠানোর ক্ষমতা রাখে। আদালত এই ঘটনাকে “দুর্ভাগ্যজনক” বলে উল্লেখ করেছে এবং বলেছে যে আদালতের অবমাননা একটি ফৌজদারি অপরাধ। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ কমিশনারকে অভিযুক্তদের অনুসন্ধান করে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।