ব্যুরো নিউজ  ৪ জুন : পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার জেরে চাকরি হারানো গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি-র শিক্ষাকর্মীদের রাজ্য সরকারের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। এই ঘটনায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা এবং সামগ্রিক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। এই মামলার শুনানি আগামী ৯ জুন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, ২০২৫ সালের জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করেও কলকাতা হাইকোর্টে আরও একটি মামলা দায়ের হয়েছে, যার শুনানি হতে পারে আগামী ৫ জুন বৃহস্পতিবার। এই দুই মামলা শিক্ষক নিয়োগ ঘিরে রাজ্য জুড়ে চলমান বিতর্কের নতুন অধ্যায় সূচনা করল।


চাকরিহারাদের ভাতা: বিতর্ক ও আইনি চ্যালেঞ্জ

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সম্প্রতি প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষক ও শিক্ষিকারা আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বেতন পাবেন বলে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল। কিন্তু গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি-র কর্মীদের জন্য সুপ্রিম কোর্ট কোনও নির্দিষ্ট ঘোষণা করেনি। এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) মানবিকতার খাতিরে এই কর্মীদের ভাতা দেওয়ার ঘোষণা করেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘ওয়েস্টবেঙ্গল লাইভলিহুড অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি ইন্টারিম স্কিম’ প্রকল্পের মাধ্যমে চাকরি হারানো গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের যথাক্রমে ২৫ হাজার ও ২০ হাজার টাকা করে ভাতা বা অনুদান দেওয়া হবে।

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে

মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। তাঁদের মূল দাবি হলো, রাজ্য সরকার যাদের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই ‘অযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। তাই প্রশ্ন উঠেছে, কোন আইনে এবং কেন এই ‘অযোগ্য’দের ভাতা দেওয়া হবে? মামলাকারীদের যুক্তি, যদি ভাতা দিতেই হয়, তাহলে সবাইকে দিতে হবে, অর্থাৎ যারা চাকরি পাননি বা অপেক্ষমান তালিকায় (Waiting List) রয়েছেন, তাদেরও ভাতা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এটি দুর্নীতিতে জড়িতদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের সামিল বলে অনেকেই মনে করছেন।


নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিয়েও আইনি জটিলতা

এদিকে, গত ৩০ মে স্কুল সার্ভিস কমিশন ২০২৫ সালের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ১৬ জুন থেকে আবেদন করা যাবে এবং অনলাইনে আবেদন করা যাবে ১৪ জুলাই পর্যন্ত। লিখিত পরীক্ষা হতে পারে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এবং ফলপ্রকাশ হতে পারে অক্টোবরের চতুর্থ সপ্তাহের মধ্যে। এরপর ইন্টারভিউ এবং ২৪ নভেম্বর প্যানেল প্রকাশিত হতে পারে।

তবে, এই নতুন বিজ্ঞপ্তি নিয়েও কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় এই মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছেন এবং আগামী ৫ জুন এর শুনানি হতে পারে। মামলাকারীদের অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল, সেই মোতাবেক স্কুল সার্ভিস কমিশন নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি। ফলে এটি আদালত অবমাননার শামিল। সূত্রের খবর, ২০১৬ সালের অপেক্ষমান তালিকায় থাকা চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ এই মামলা করেছেন। তাঁদের দাবি, নতুন নিয়োগ বিধি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপন্থী। যেমন, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ৫৫ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হত, যেখানে ২০২৫ সালের বিজ্ঞপ্তিতে ৬০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া, বয়সের ছাড় এবং অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর দেওয়ার বিষয়টিও নয়া নির্দেশিকায় মানা হয়নি বলে মামলাকারীদের অভিযোগ, যা অনেক যোগ্য প্রার্থীকে বঞ্চিত করতে পারে।


শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ও শাসক দলের দিকে অভিযোগের তির

২০১৬ সালের এসএসসির প্যানেল দুর্নীতির অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্ট বাতিল করেছিল, যা সুপ্রিম কোর্টেও বহাল থাকে। এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রায় ২৫,৭৩৫ জনের চাকরি বাতিল হয়। এই বৃহৎ আকারের দুর্নীতিতে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) এবং সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (CBI) এই নিয়োগ কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে। এই তদন্তে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) সহ বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা এবং বিধায়ক গ্রেফতার হয়েছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখার্জীর ফ্ল্যাট থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা এবং সোনা উদ্ধার হয়, যা এই দুর্নীতির ব্যাপকতা নির্দেশ করে।

আলিপুরদুয়ারের জনসভায় মোদীর বার্তা : ‘নির্মম সরকার’কে উপড়ে ফেলে ‘অপারেশন পশ্চিমবঙ্গ’র ডাক!

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে, ২০২৫ সালে অতিরিক্ত শূন্যপদ নিয়ে ৪৪,২০৩ জনকে নিয়োগ করা হবে, যার মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষিকার পাশাপাশি গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি-র চাকরিও থাকবে। তবে, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে যখন পুরোনো দুর্নীতির রেশ ধরে একের পর এক আইনি জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এই মামলাগুলির রায় রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর