ব্যুরো নিউজ ২৬ মে :  বৈধ পাসপোর্ট বা ভিসা নেই। অথচ কলকাতার রাজপথে দিব্যি ব্যক্তিগত গাড়ি চালাচ্ছিলেন এক বাংলাদেশি নাগরিক। রবিবার কালীঘাট এলাকা থেকে ৪১ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশি নাগরিক আজাদ শেখকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ। অক্টোবর ২০২৩ সাল থেকে তিনি ভারতে অবৈধভাবে বসবাস করছিলেন। সম্প্রতি তাঁর গাড়ি কলকাতার রাস্তায় এক পুলিশকর্মীকে ধাক্কা দেওয়ার পরই এই অনুপ্রবেশের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।


পরিচয় গোপন করার চেষ্টা ও রহস্যময় গাড়ি

পুলিশ সূত্রে খবর, গত ১৮ মে সকাল ৬টা ২৫ মিনিট নাগাদ আজাদ শেখ কালী মন্দির রোড ধরে একটি ব্যক্তিগত গাড়ি চালাচ্ছিলেন। সদানন্দ রোড মোড়ে তিনি নেতাজিনগর থানার এএসআই সুসেন দাসকে ধাক্কা দেন। এতে গুরুতর আহত হন ওই পুলিশ আধিকারিক। তাকে প্রথমে এসএসকেএম হাসপাতালে, পরে কোঠারি মেডিক্যাল সেন্টারে স্থানান্তরিত করা হয়।

এই দুর্ঘটনার পর পুলিশ আজাদ শেখকে নিয়ম অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। সেই সময়ই পুলিশ আধিকারিকদের তার পরিচয় নিয়ে সন্দেহ হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজাদ নিজেকে উত্তর ২৪ পরগনার খাসনোকদাহের বাসিন্দা বলে দাবি করেন। তবে, পরে তদন্তে তার আসল পরিচয় ফাঁস হয়। জানা যায়, তিনি আসলে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারীর বাসিন্দা।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে, বৈধ পাসপোর্ট বা ভিসা না থাকা সত্ত্বেও আজাদ শেখ কীভাবে এত দীর্ঘ সময় ধরে কলকাতায় আত্মগোপন করে ছিলেন? এবং তিনি কীভাবে একটি ব্যক্তিগত গাড়ির মালিক হলেন, যা তার নামেই নিবন্ধিত ছিল? কে বা কারা তাকে এই কাজে সাহায্য করেছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।

‘অপারেশন সিঁদুর’ এর সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলে থাকছেন না ইউসুফ পাঠান, তৃণমূল সাংসদের সিদ্ধান্ত


জাল পরিচয়পত্র ও অনুপ্রবেশের সিন্ডিকেট

কলকাতা পুলিশের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আজাদ শেখ তার আসল পরিচয় গোপন করে সরকারি আধিকারিকদের কাছে মিথ্যা তথ্য জমা দিয়েছিলেন। তদন্তে জানা গেছে, আজাদ শেখ একটি জাল আধার কার্ডের সাহায্যে ড্রাইভিং লাইসেন্সও জোগাড় করেছিলেন। পুলিশ এখন সেই ড্রাইভিং লাইসেন্সের সত্যতাও যাচাই করছে।

পুলিশের তদন্তে আরও উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। আজাদ স্বীকার করেছেন যে, তিনি ২০২৩ সালের অক্টোবরে একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের বনগাঁ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। এরপর সেই দালালই তাকে দমদমে নিয়ে এসে পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। আজাদ আরও জানিয়েছেন যে, এই দালালই তাকে জাল পরিচয়পত্র তৈরির সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। উত্তর ২৪ পরগনার একটি ঠিকানা ব্যবহার করে আজাদের জাল আধার কার্ড এবং অন্যান্য নথি তৈরি করা হয়েছিল। তিনি ফরিদপুরে গাড়ি চালাতেন এবং সেই অভিজ্ঞতা ও জাল নথির ভিত্তিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স জোগাড় করে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থায় চালক হিসেবে কাজ শুরু করেন।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে জাফর আলি শেখ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনিই আজাদকে দালাল চক্রের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন বলে অভিযোগ। জাফরকে আলিপুর আদালতে পেশ করা হলে তাকে ৪ জুন পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।


কড়া পদক্ষেপ ও নজরদারি বৃদ্ধি

এই ঘটনায় কালীঘাট থানায় ফরেনার্স অ্যাক্টের ১৪এ(বি) ধারা এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS)-এর ২১২ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুর্ঘটনা সংক্রান্ত ঘটনায় বিএনএস-এর ২৮১, ১২৫(বি), ৩২৪(৪), এবং ১১০ ধারায়ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, রাজ্যে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সাধারণ মানুষকে সন্দেহজনক কোনো অনুপ্রবেশের খবর পেলে পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে।

কলকাতায় তিরঙ্গা যাত্রা ,বিএসএফ জওয়ান মুক্তি, ভুয়ো খবর দমন, সন্ত্রাসবাদ নিপাতন : মোদীর নেতৃত্বে দেশ সুরক্ষিত দাবি শুভেন্দু অধিকারীর


পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপট: অবৈধ অনুপ্রবেশের গভীর উদ্বেগ

তবে, ভারতবর্ষে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে। অভিযোগ রয়েছে যে, অনেক অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর ভিসা না থাকলেও বিভিন্ন গোষ্ঠীর থেকে বৈধভাবে পশ্চিমবঙ্গে বসবাসের অনুমোদন পেয়ে যায়, যার মধ্যে শাসক এবং প্রশাসন জড়িত থাকে রাজনৈতিক সুবিধার জন্য। এই পরিস্থিতিতে পুলিশের পদক্ষেপ কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সীমান্ত বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। তাঁদের মতে, স্থানীয় রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী মহল অনেক সময় এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় ও পরিচয়পত্র তৈরিতে সহায়তা করে, যা রাজ্যের নিরাপত্তা এবং জনবিন্যাসের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। আজাদ শেখের ঘটনাটি সেই গভীর সমস্যারই একটি ছোট দৃষ্টান্ত মাত্র, যা রাজ্যে অবৈধ অনুপ্রবেশের ব্যাপকতা এবং এর সাথে জড়িত সিন্ডিকেটগুলির সক্রিয়তা পুনরায় সামনে নিয়ে এসেছে।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর