বিভিন্ন বিশিষ্ট বালোচ নেতা ও লেখক, যার মধ্যে মীর ইয়ার বালোচ অন্যতম, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের কারখানা পরিচালনা এবং প্রতিবেশী দেশগুলো, বিশেষ করে ভারতের ওপর নৈরাজ্য চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন।
শুক্রবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এক বার্তায় মীর ইয়ার বালোচ জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী অসংখ্য সন্ত্রাসী ফ্র্যাঞ্চাইজি চালু করেছে, যারা ভারতের পার্লামেন্ট, হোটেল, যাত্রীবাহী বিমান এবং জম্মু-কাশ্মীরের পাহালগামসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে দেশটিকে রক্তাক্ত করেছে।
মীর ইয়ারবালোচ বলেন, “ভারত একটি সভ্য ও শান্তিপ্রিয় দেশ এবং মানব মর্যাদা ও মানবাধিকার রক্ষার অভিভাবক হিসেবে তার জনগণকে রক্ষার পূর্ণ অধিকার সংরক্ষণ করে। পাকিস্তানের বর্বর পাহালগাম সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে লক্ষ্যভিত্তিক হামলা চালাচ্ছে, যেখানে আইএসআই-এর জাতীয় সম্পদ হিসেবে পরিচিত উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলো অবস্থান করছে, প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও গভীর রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ও পূর্ণ সমর্থনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।”
মীর ইয়ার বালোচ আরও বলেন, “আজ সমগ্র বিশ্বের নৈতিক দায়িত্ব হলো ভারতের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানো এবং ভারত সরকারের সাহসী সিদ্ধান্তকে স্বীকৃতি দেওয়া, যেটি ১৪০ কোটি ভারতীয় জনগণের পূর্ণ ম্যান্ডেট এবং সংসদের দুই কক্ষের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, টেকসই শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ভারত যা করছে, তা একেবারে সঠিক পদক্ষেপ। মীর বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর সাথে যোগ দিয়ে সেসব বিধবা ও নিরীহ মানুষদের ন্যায়বিচার দিতে হবে, যারা তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, “প্রিয় বিশ্ববাসী, ভারত একা নয়। বালোচ , পশতুন, সিন্ধি এবং কাশ্মীরি জনগণ, যারা গত সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তানের মৌলবাদী সেনাবাহিনীর প্রধান ভুক্তভোগী, তারাও পাকিস্তানের সন্ত্রাসী অবকাঠামো ও সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোর সাহায্যকারীদের বিরুদ্ধে ভারতের সুনির্দিষ্ট বিমান ও ড্রোন হামলার প্রশংসা করছে।”
বেলুচিস্তানের সাবেক মন্ত্রী এবং বালোচ আমেরিকান কংগ্রেসের সভাপতি তারা চাঁদও, ২২ এপ্রিলের বর্বর পাহালগাম সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানে সন্ত্রাসী অবকাঠামোর বিরুদ্ধে ভারতের পাল্টা পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন জানান।
তিনি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করে বলেন, “প্রিয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানে প্রবেশ করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক পদক্ষেপের জন্য আমি আমার সমর্থন জানাই। তবে এটি স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে পাকিস্তান বহু সন্ত্রাসীকে আশ্রয় দিয়েছে। বালুচিস্তানে পরিস্থিতি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত, যা পাকিস্তানের স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, পাকিস্তান ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবেই রয়ে যাবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এটি সেই সময়, যখন বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার জন্য একটি কৌশলগত পথ বিবেচনা করা উচিত, যেমন ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। বর্তমানে বালুচিস্তানের জনগণ ভারতের জনগণের পাশে সংহতি প্রকাশ করছে।”
এই মন্তব্যগুলো আসে এমন এক সময়ে, যখন ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিন্দুর’ শুরু করেছে, যার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের (পিওকে) নয়টি উচ্চ-মূল্য সন্ত্রাসী ঘাঁটি। ২২ এপ্রিলের সেই নৃশংস সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরীহ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিল।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়েছে, যখন পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জম্মু, পাঠানকোট, উদমপুর এবং আরও কয়েকটি স্থানে বেসামরিক অবকাঠামো ও সামরিক স্টেশনে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানোর চেষ্টা করে, যেগুলো ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী সম্পূর্ণভাবে প্রতিহত করেছে।
পাকিস্তানের ভণ্ডামির বিষয়টিও তুলে ধরে বেলুচ কর্মীরা দেখিয়েছেন, কীভাবে পাকিস্তান সন্ত্রাসীদের জন্য মানবাধিকারের দাবি তোলে, অথচ একই অধিকার বালোচ , পশতুন এবং সিন্ধি জনগণকে অস্বীকার করে।
একজন বালোচ কর্মী বলেন, “একদিকে পাকিস্তান মৃত সন্ত্রাসীদের জন্য শোক প্রকাশ করছে, অন্যদিকে বালোচ মায়েরা তাদের নিখোঁজ সন্তানদের খুঁজে ফিরছেন — এটি এক বেদনাদায়ক বৈপরীত্য। এটি একটি নির্মম সত্য উন্মোচন করে — এই রাষ্ট্র সন্ত্রাসীদের জীবনকে তার নিজস্ব নিপীড়িত জনগণের চেয়েও বেশি মূল্য দেয়। একটি দেশ, যে সন্ত্রাসীদের জন্য অশ্রু ঝরায়, কিন্তু বালুচিস্তানে নিরীহ প্রাণহানির বিষয়ে নীরব থাকে, সেই দেশ তার মানবতা হারিয়ে ফেলেছে।”