ব্যুরো নিউজ ৩০ জুন: ৩রা জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র অমরনাথ যাত্রা ২০২৫। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত বাবা অমরনাথের দর্শন পেতে এই কঠিন যাত্রাপথে পা রাখেন। এই বছর, পহেলগাঁও হামলার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও, প্রশাসন তীর্থযাত্রীদের সুরক্ষার জন্য কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। কীভাবে এই যাত্রা সম্পন্ন করবেন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সম্পর্কে একটি বিস্তারিত গাইড এখানে দেওয়া হলো।
যাত্রা শুরু ও রুটের বিস্তারিত তথ্য
অমরনাথ যাত্রা মূলত দুটি রুট দিয়ে সম্পন্ন করা যায়: বালতাল (Baltal) এবং পহেলগাঁও (Pahalgam)।
- বিমানে যাত্রা: যদি বিমানে যেতে চান, তাহলে সরাসরি শ্রীনগরে বিমান ধরতে পারবেন।
- ট্রেনে যাত্রা: দেশের প্রায় সব বড় শহর থেকে জম্মু পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করে। জম্মু থেকে বাসে করে বালতাল বা পহেলগাঁও পৌঁছানো যায়। বাস ভাড়া প্রায় ৭০০ টাকা থেকে শুরু হয়।
- শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে: শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সিতে বালতাল বা পহেলগাঁও যেতে পারবেন। ট্যাক্সি শেয়ার করলে ভাড়া ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা এবং প্রাইভেট কারের জন্য প্রায় ৪০০০ টাকা খরচ হতে পারে।
আবাসন ও গুহার দূরত্ব
বালতালে থাকার জন্য শেয়ারিং তাঁবু পাওয়া যায়, যার ভাড়া প্রায় ৫০০ টাকা। তবে, এখানে বিনামূল্যে থাকার কিছু সুবিধাও রয়েছে।
- বালতাল থেকে গুহা: অমরনাথ গুহা বালতাল থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এর প্রবেশপথ ডোমেল গেট (Domel Gate) থেকে।
- পহেলগাঁও থেকে গুহা: পহেলগাঁও থেকে গুহার দূরত্ব প্রায় ৩২ কিলোমিটার। এখানে প্রবেশপথ চন্দনওয়াড়ি (Chandanwari) থেকে। চন্দনওয়াড়িতেই আপনার RFID চেক করা হবে।
RFID কার্ড ও দ্রুত দর্শন
যাত্রার শুরুতে RFID কার্ড সংগ্রহ করা আবশ্যক, যার জন্য ২৫০ টাকা ফি দিতে হয়। এই কার্ড ছাড়া যাত্রা করা সম্ভব নয়।
- বালতাল থেকে ডোমেল: বালতাল থেকে ডোমেল পর্যন্ত বিনামূল্যে ব্যাটারি রিকশা এবং বাস পাওয়া যায়, যা প্রায় ২ কিলোমিটার হাঁটার পথ কমিয়ে দেয়।
- যাত্রার সময়: ডোমেল গেট থেকে যাত্রা ভোর ৪টা থেকে শুরু হয়ে সকাল ১০টা পর্যন্ত চলে। এর পরেই মূল যাত্রা শুরু হয়।
- খাবারের ব্যবস্থা: যাত্রাপথে অনেক ভাণ্ডারা (বিনামূল্যে খাবার বিতরণ কেন্দ্র) পাবেন, যেখানে খাবারের ব্যবস্থা থাকে।
- বাহন:
- ঘোড়ায় চড়লে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা লাগতে পারে।
- পালকিতে যেতে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
- ঘোড়া এবং পালকির মালিকরা গুহা থেকে ১ কিলোমিটার দূরে নামিয়ে দেবেন, বাকি পথ হেঁটে যেতে হবে।
- আরামে দর্শন: আরামে দর্শন করতে চাইলে খুব ভোরে যাত্রা শুরু করা উচিত।
রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া ও খরচ
অমরনাথ যাত্রা জুলাই মাসে শুরু হলেও, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া এপ্রিল মাস থেকেই শুরু হয়ে যায়।
- রেজিস্ট্রেশন ও স্বাস্থ্য: এই যাত্রার জন্য শারীরিক সুস্থতা অত্যন্ত জরুরি। রেজিস্ট্রেশনের সময় আপনার মেডিকেল সার্টিফিকেট আপলোড করতে হবে।
- মোট খরচ: বাবা অমরনাথ দর্শনের জন্য পহেলগাঁও এবং বালতাল পৌঁছাতে কিছুটা খরচ হলেও, সেখানে পৌঁছানোর পর খাবার এবং থাকার ব্যবস্থা বেশিরভাগই বিনামূল্যে পাওয়া যায়। তাঁবুর জন্য নামমাত্র খরচ হয়। পায়ে হেঁটে গেলে খরচ কম হয়, তবে ঘোড়া বা পালকি ব্যবহার করলে অতিরিক্ত খরচ হবে।
যাত্রার সময়কাল ও বর্তমান পরিস্থিতি
প্রতি বছর অমরনাথ যাত্রা সাধারণত ২ মাস ধরে চললেও, এই বছর যাত্রা মাত্র ৩৮ দিনের জন্য নির্ধারিত হয়েছে। এপ্রিল মাসে পহেলগাঁওয়ে হামলার প্রভাব এই যাত্রার উপরও পড়েছে। সন্ত্রাসবাদী হামলার আগে ২ লক্ষ ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষ রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন, তবে বর্তমানে মাত্র ৮৫ হাজার লোকের যাত্রা নিশ্চিত করা হয়েছে।
অমরনাথ যাত্রা একদিকে যেমন আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা, তেমনই অন্যদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অসাধারণ মেলবন্ধন। প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে ভক্তরা নিশ্চিন্তে এই পবিত্র যাত্রা সম্পন্ন করতে পারবেন বলে আশা করা যায়।