ইভিএম নিউজ , ২৫শে ফেব্রুয়ারিঃ ‘মনের অনন্ত তৃষ্ণা মরে বিশ্ব ঘুরি, মিশায় তোমার সাথে নিখিল মাধুরী’… চৈতালি কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত এই ‘নারী’ কবিতায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানব সমাজ কল্যাণের জন্য নারী শক্তির ভূমিকা বোঝাতে গিয়ে নারীকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বস্তুর সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। সেই যুগে মুঠোফোনে নিজস্বী তোলার সুযোগ থাকলে নারীরা কবিগুরুর সঙ্গে তা ফ্রেমবন্দী করতেন কিনা সেটা সকলের অজানা থাকলেও এই যুগের বাংলার কালারফুল বয় তথা তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রর দাবি, স্কুল- কলেজে যাওয়া মেয়েদেরও তাকে ঘিরে চরম উন্মাদনা রয়েছে এমনকি সেই সব যুবতীরা তাঁর সঙ্গে নিজস্বী তুলে তা বাড়ির দেওয়ালে বাঁধিয়ে রাখেন, যেমন বাঁধিয়ে রাখেন রবীন্দ্রনাথের ছবি।
সম্প্রতি শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায় নামক এক রহস্যময়ী নারীর নাম উঠে এসেছে নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডেই ধৃত তৃণমূল যুব নেতা কুন্তল ঘোষের মুখে। পেশায় মডেল এই অভিনেত্রীর সঙ্গে মদনের একটি ছবি সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হতেই, তাই নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছে বাংলার রাজ্য রাজনীতি। আর এই ইস্যুতে প্রশ্ন করা হলে প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রীর সাফাই, ‘‘অনেকে আমার সঙ্গে ছবি তুলে বাঁধিয়ে রেখে দেয়। লোকে যেমন রবীন্দ্রনাথের ছবি বাঁধিয়ে রাখে, তেমনই আমার ছবিও বাঁধিয়ে রাখলে অসুবিধা কোথায়? সেলফি তুলব বলে ঝুলে পড়েছে। কলেজ আর স্কুলের মেয়েরা। আমি কী করব। ধাক্কা মারব? মহিলারা যখন সেলফি তোলেন হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া কিছু করারও থাকে না। আফটার অল মহিলা। কে কখন সেলফি তুলেছেন বলতে পারব না”।
কামারহাটির বিধায়কের আবদার, ‘আমাকে তৃণমূলের বিধায়ক বা পার্টির নেতা না করে তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট করে দিলে অনেক বেশি মহিলা আমি সমবেত করতে পারতাম’।
দিন কয়েক আগেও দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি স্কুলের মিড ডে মিল পরিবেশনের দায়িত্বে থাকা পাঁচ জন কর্মীর বেতন সাত জনকে ভাগ করে দেওয়া নিয়ে মহাভারতের প্রসঙ্গ টেনে মদনের মন্তব্য ছিল, ‘কুন্তী বলেছিলেন, যা এনেছ ৫ ভাইয়ের মধ্যে ভাগ করে খাও। পশ্চিমবঙ্গ-ভারতের সংস্কৃতি হচ্ছে, স্ত্রীকেও পাঁচ স্বামী ভাগ করে খেতে পারেন’।
প্রসঙ্গত, গত বছর ফেব্রুয়ারিতে বলাগড়ের একটি মেলায় গিয়ে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের কারণে ঘর ছাড়া বিজেপি কর্মীদের উদ্দেশ্যে করা একটি কুরুচিকর মন্তব্যকে ঘিরেও তৈরি হয়েছিল বিতর্ক। মদন বলেছিলেন, ‘ বিজেপি চাইছে ওদের যারা বাড়িতে ঢুকতে পারছে না, তৃণমূল তাদের বাড়িতে বৌয়ের সঙ্গে শুইয়ে দিক’৷
একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বারংবার এহেন কুরুচিকর মন্তব্যের পরেও কোন নারী আদতে তাঁর সাথে তোলা নিজস্বী বাংলার মনিষীদের সঙ্গে এক সারিতে নিজের বাড়ির দেওয়ালে বাঁধিয়ে রাখে কিনা সেই নিয়ে বেঙ্গ-বিদ্রুপের ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।