names of lord ganesh

ব্যুরো নিউজ, ২৪শে ডিসেম্বর ২০২৫ : হিন্দুধর্মে ভগবান শ্রী গণেশ এক বিশেষ স্থানের অধিকারী। যেকোনো শুভ কাজ বা অনুষ্ঠানের শুরুতে আমরা তাঁর আরাধনা করি। তিনি কেবল বিঘ্নবিনাশক নন, তিনি জ্ঞান, সাফল্য এবং প্রগতির মূর্ত প্রতীক। কথিত আছে, গণেশের নাম স্মরণ করলে মনে এক অদ্ভুত শান্তি ও ইতিবাচকতার সঞ্চার হয়। তাঁর অসংখ্য নামের মধ্যে দশটি প্রধান নাম ও তাদের অর্থ আমাদের জীবনের চলার পথে গভীর প্রেরণা জোগায়।

১. বিঘ্নহর্তা – বাধা দূরকারী

গণেশজীর সবচেয়ে পরিচিত নাম হলো ‘বিঘ্নহর্তা’। এর অর্থ হলো তিনি ভক্তের পথ থেকে সব ধরণের বাধা বা বিঘ্ন দূর করেন। নতুন কোনো ব্যবসা বা যাত্রা শুরু করার আগে তাঁর আরাধনা করলে মনে আত্মবিশ্বাস জাগে যে, সব প্রতিকূলতা জয় করা সম্ভব।

২. গণপতি – সকল শক্তির অধিপতি

‘গণ’ শব্দের অর্থ হলো সমষ্টি বা সাধারণ জীব এবং ‘পতি’ মানে প্রভু। মহাবিশ্বের দৃশ্য ও অদৃশ্য সকল শক্তির ও জীবের অধিপতি হলেন তিনি। এই নাম আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, তাঁর নির্দেশেই মহাজাগতিক ভারসাম্য বজায় থাকে এবং তিনি আমাদের সুরক্ষাকর্তা।

Ganeshji : সিদ্ধিদাতা গণেশের চার হাতের রহস্য !

৩. লম্বোদর – বিশাল হৃদয়ের অধিকারী

লম্বোদর বলতে তাঁর বিশাল উদর বা পেটকে বোঝানো হয়। আধ্যাত্মিক দিক থেকে এটি প্রতীকী—এর অর্থ হলো জীবনের সমস্ত ভালো-মন্দ অভিজ্ঞতাকে ধৈর্য ও প্রশান্তির সঙ্গে গ্রহণ করা বা হজম করা। এটি আমাদের সহনশীলতার শিক্ষা দেয়।

৪. একদন্ত – ত্যাগ ও সংকল্পের প্রতীক

কথিত আছে, মহাভারত লেখার সময় কলম ভেঙে গেলে গণেশ নিজের একটি দাঁত ভেঙে লেখা চালিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর এই ‘একদন্ত’ রূপ আমাদের শেখায় যে লক্ষ্য অর্জনের জন্য আত্মত্যাগ ও দৃঢ় সংকল্প কতটা জরুরি।

৫. গজানন – জ্ঞানের আধার

হাতির মুখ বা ‘গজানন’ রূপটি অগাধ পাণ্ডিত্য ও শক্তির প্রতীক। হাতির বড় কান আমাদের ধৈর্যশীল শ্রোতা হতে শেখায় এবং ছোট চোখগুলি সূক্ষ্ম বিচারবুদ্ধির প্রতীক, যা জীবনের সঠিক পথ বেছে নিতে সাহায্য করে।

৬. বক্রতুণ্ড – অভিযোজন ক্ষমতা

বক্রতুণ্ড বা তাঁর বাঁকানো শুঁড় পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার (Adaptability) প্রতীক। জীবনের পথ সবসময় সোজা হয় না, তাই সফল হতে গেলে আমাদের চিন্তাভাবনায় নমনীয়তা ও কৌশল বজায় রাখা প্রয়োজন।

৭. সিদ্ধিবিনায়ক – সাফল্যদায়ক

যিনি কাঙ্ক্ষিত সিদ্ধি বা সাফল্য প্রদান করেন, তিনিই সিদ্ধিবিনায়ক। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে পেশাদার—সকলেই তাঁর আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন যাতে তাদের পরিশ্রম সঠিক ফল দেয়। তিনি কেবল পার্থিব উন্নতি নয়, আধ্যাত্মিক উন্নতিও প্রদান করেন।

৮. ধূম্রকেতু – নেতিবাচকতা বিনাশী

ধূম্রকেতু বা ধূসর বর্ণের রূপটি চারপাশের অশুভ শক্তি ও নেতিবাচকতা দূর করতে সাহায্য করে। এই নাম জপ করলে গৃহের পরিবেশ শুদ্ধ হয় এবং মনে ভীতি দূর হয়ে ইতিবাচক শক্তির সঞ্চার ঘটে।

৯. বালচন্দ্র – মানসিক প্রশান্তির প্রতীক

গণেশের কপালে নবমী তিথির এক ফালি চাঁদ বা ‘বালচন্দ্র’ শোভা পায়। চাঁদ মনের প্রতীক। গণেশজীর মাথায় চাঁদের অবস্থান এটাই প্রমাণ করে যে তিনি আবেগ ও মনের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রেখেছেন। এটি ভক্তদের মানসিক স্থিরতা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

১০. হেরম্ব – দুর্বলের রক্ষাকর্তা

অসহায় ও দুর্বলের পরম আশ্রয়স্থল হলেন ‘হেরম্ব’। তিনি দয়ালু অভিভাবক হিসেবে ভক্তদের রক্ষা করেন। এই নাম জপ করলে ভক্তরা আশ্বস্ত হন যে তাঁরা একা নন, ঈশ্বর সর্বদা তাঁদের সুরক্ষায় নিয়োজিত আছেন।

Ganeshji : গণেশ উপাখ্যান: বাধা মোচনের দেবতা ও তাঁর ঐশ্বরিক শিক্ষা

নাম জপের আধ্যাত্মিক শক্তি

শ্রী গণেশের এই পবিত্র নামগুলো কেবল কয়েকটি শব্দ নয়, বরং একেকটি শক্তিশালী মন্ত্র। এই নামগুলোর নিয়মিত পাঠ বা ধ্যান মনকে শান্ত রাখে, একাগ্রতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়। অনেক পরিবারে শিশুদের ছোটবেলা থেকেই এই নামগুলো শেখানো হয় যাতে তারা ধৈর্য, সাহস ও নম্রতার মতো গুণাবলী নিজেদের জীবনে গ্রহণ করতে পারে।


উপসংহার

শ্রী গণেশের এই দশটি পবিত্র নাম আমাদের জীবনের অন্ধকার মুহূর্তে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে। আমরা যখন ‘বিঘ্নহর্তা’র কাছে প্রার্থনা করি বা ‘গজানন’-এর ধ্যানে বসি, তখন আসলে আমরা নিজেদের ভেতরের দিব্য গুণগুলোকেই জাগিয়ে তুলি। তাঁর এই দিব্য দর্শনের মাধ্যমেই আমরা জীবনের প্রতিটি বাধা পেরিয়ে সুখ, সমৃদ্ধি ও চিরন্তন শান্তির পথে এগিয়ে যেতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর