ব্যুরো নিউজ, ০৮ই ডিসেম্বর ২০২৫ : জাতীয় সংগীত ‘বন্দে মাতরম’-এর ১৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) লোকসভায় শুরু হলো বিশেষ আলোচনা। ১০ ঘণ্টার জন্য নির্ধারিত এই বিতর্কের সূচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যা শুরু থেকেই রাজনৈতিক তর্কে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় সরাসরি কংগ্রেসকে নিশানা করে অভিযোগ করেন, জাতীয় গানটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাদ দিয়ে তারা ‘বন্দে মাতরম’-এর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং দেশভাগের বীজ বপন করেছিল।
সংসদে উপস্থিত বিজেপি সদস্যরা ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আলোচনা শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি সেই গানের দিকে ফিরে তাকানোর মুহূর্ত, যা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের আবেগিক ও আদর্শগত মেরুদণ্ড ছিল।
প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “এটি একটি পবিত্র যুদ্ধকালীন রণহুঙ্কার ছিল। যাঁরা স্বাধীনতার জন্য এই মন্ত্র জপ করতে করতে আত্মত্যাগ করেছিলেন, এই সংসদে আজ আমরা তাঁদের জন্যই উপস্থিত আছি।”
প্রধানমন্ত্রী মোদির পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বক্তব্য রাখেন। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে উপনেতা গৌরব গগৈ এবং প্রিয়ঙ্কা গান্ধী ভদ্র-সহ একাধিক সদস্য বিতর্কে যোগ দেন।
ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের কাজকে স্মরণ ও নেহেরুর চিঠির উল্লেখ
বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বন্দে মাতরম’ রচনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পর ব্রিটিশরা যখন তাদের জাতীয় সংগীত ‘গড সেভ দ্য কুইন’ ভারতীয় ঘরে ঘরে চাপানোর চেষ্টা করছিল, তখন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর লেখা ‘বঙ্গদর্শন’ (১৮৭৫ সালের ৭ নভেম্বর) এবং পরে ‘আনন্দমঠ’ (১৮৮২) উপন্যাসের মাধ্যমে ‘বন্দে মাতরম’ উপহার দিয়ে ঔপনিবেশিক সমাজে দেশের গর্ব ফিরিয়ে এনেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী আফসোস করে বলেন যে, গানটির ৫০তম বার্ষিকী ঔপনিবেশিক শাসনের সময় এবং ১০০তম বার্ষিকী জরুরি অবস্থার সময় পালিত হয়েছিল, যা গানটির স্থিতিস্থাপকতা প্রমাণ করে।
বক্তৃতায় মোদি কংগ্রেসের ১৯৩৭ সালের ফৈজাবাদ অধিবেশনের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে জওহরলাল নেহেরুর একটি চিঠির উল্লেখ করে অভিযোগ করেন যে, নেহেরু নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে লিখেছিলেন, ‘বন্দে মাতরম’ মুসলিমদের উসকে দিতে পারে। তিনি বলেন, “মুসলিম লীগের সামনে মাথা নত করে কংগ্রেস শুধু তোষণের জন্য ‘বন্দে মাতরম’-কে খণ্ডন করেছিল… যা দেশভাগের বীজ বপন করে।”
বিতর্কের কেন্দ্রে ১৯৩৭ সালের সিদ্ধান্ত
‘বন্দে মাতরম’-এর কিছু স্তবক বাদ দেওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী গত মাসেই কংগ্রেসের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। সোমবারের এই বিতর্কে সেই রাজনৈতিক বিভেদের দিকটি আবারও সামনে এসেছে। কংগ্রেসের দাবি, ১৯৩৭ সালের ওই সিদ্ধান্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরামর্শ অনুযায়ী এবং বিচিত্র জাতীয় আন্দোলনের মধ্যে সংবেদনশীলতা বজায় রাখার জন্য নেওয়া হয়েছিল।
রাজ্যসভায় আলোচনা: লোকসভার পর মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় এই বিষয়ে সমান্তরাল আলোচনা শুরু হবে, যার সূচনা করার কথা রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের।
অন্যান্য প্রসঙ্গ: শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দুই দিন এবং বাদল অধিবেশন SIR (স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন) সংক্রান্ত ইস্যুতে বিরোধীদের প্রতিবাদের কারণে বিঘ্নিত হয়েছিল। সেই অচলাবস্থার মধ্যেই ‘বন্দে মাতরম’-এর ১৫০ বছর পূর্তির এই বিশেষ আলোচনা শুরু হলো।

















