kalbhairav shiva

ব্যুরো নিউজ, ০১লা ডিসেম্বর ২০২৫ : হিন্দু ধর্মে বাবা কাল ভৈরব হলেন মহাদেবেরই এক রুদ্র বা ভয়াল রূপ। তাঁকে ‘কাল’ (সময়)-এর রক্ষাকর্তা বা অভিভাবক হিসেবে পূজা করা হয়। তিনি কেবল সময়কেই নিয়ন্ত্রণ করেন না, বরং ভক্তদের মন থেকে ভয় দূর করে, অহংকার ও নেতিবাচকতা নাশ করেন এবং সমস্ত প্রকার বিপদ থেকে রক্ষা করেন। ধ্যানমগ্ন শান্ত শিবের বিপরীতে, ভৈরব বাবা অত্যন্ত তীব্র এবং তিনি জীবন ও মৃত্যুর মাঝের সমস্ত মায়া বা বিভ্রম দূর করে দেন। তাঁকে সাধারণত মাথার খুলি, ত্রিশূল এবং ডমরু ধারণ করে থাকতে দেখা যায় এবং তাঁর সঙ্গে সারমেয় বা কুকুর থাকে।

কাশীধামের রক্ষাকর্তা ‘কোতোয়াল’

ভারতের প্রাচীনতম এবং পবিত্রতম শহরগুলির মধ্যে অন্যতম হলো কাশী বা বারাণসী। এই কাশীধামে বাবা কাল ভৈরবের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তিনি এখানে ‘কাশীর কোতোয়াল’ নামে পরিচিত। কোতোয়াল শব্দের অর্থ হলো পাহারাদার বা রক্ষক পুলিশ। লোকবিশ্বাস অনুসারে, বাবা কাল ভৈরব কাশীধামে আগত প্রতিটি ভক্তকে রক্ষা করেন এবং তাদের ওপর কড়া নজর রাখেন।

এমনও প্রচলিত আছে যে, কেবল সাধারণ মানুষ নয়, স্বয়ং যমরাজও ভৈরব বাবার অনুমতি ছাড়া কাশীতে প্রবেশ করতে পারেন না। এই কারণেই বারাণসী ভ্রমণে আসা ভক্তরা প্রথমে কাল ভৈরবের মন্দির দর্শন করে, তারপর মূল কাশীযাত্রা শুরু করেন। এই প্রথা ভৈরব বাবার গুরুত্ব ও ক্ষমতাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।

সনাতন ধর্মের মহাজাগতিক সংহতি : বিষ্ণুর অবতার ও নবগ্রহ

সরল ভক্তিই তাঁর সন্তুষ্টির মূল মন্ত্র

বলা হয়, বাবা কাল ভৈরবকে সন্তুষ্ট করার জন্য কোনো জটিল আচার-অনুষ্ঠান, কঠিন বলিদান বা কঠোর নিয়ম-কানুন পালনের প্রয়োজন নেই। তাঁর কাছে শুধু প্রয়োজন আন্তরিক ভক্তি – তাঁর প্রতি, মহাদেব শিবের প্রতি এবং নিজের আধ্যাত্মিক যাত্রার প্রতি।

কাল ভৈরব সেইসব ভক্তদের আশীর্বাদ করেন যারা সৎ ও নির্ভীক। যখন কেউ তাঁর উপাসনা করে, তখন তিনি তাদের মধ্যে নির্ভীকতা-র গুণ প্রবেশ করান, আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতিতে সাহায্য করেন এবং জীবনের সমস্ত বাধা-বিপত্তি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করে তোলেন।

কাল ভৈরবাষ্টকম্-এর অলৌকিক শক্তি

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বাবা কাল ভৈরবের ক্ষমতা এবং অলৌকিকতা নিয়ে মানুষের আগ্রহ অনেক বেড়েছে। আধ্যাত্মিক বিষয়ের ওপর কাজ করা প্রায় প্রতিটি প্ল্যাটফর্মেই কাল ভৈরবাষ্টকম্ পাঠ করতে বা শুনতে পাওয়া যায়। এই স্তোত্রের প্রতিটি পদে ভগবান কাল ভৈরবের বিভিন্ন গুণাবলী, রূপ এবং ক্ষমতার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

যদি পূর্ণ একাগ্রতা, গভীর নিষ্ঠা এবং পবিত্র ইচ্ছা নিয়ে এই স্তোত্রটি জপ করা হয়, তবে তা মানুষের মনে এক প্রকার শান্তি ও অভ্যন্তরীণ শক্তি সঞ্চারিত করে। এটি নিরাপত্তা প্রদান করে, ভয় দূর করে, মনকে তীক্ষ্ণ করে তোলে এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা ও মৃত্যুর ভয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।

ভৈরবাষ্টকম্-এর প্রথম দুটি পঙক্তির অর্থ:

দেবরাজসেব্যমানপাবনাংঘ্রিপঙ্কজং ব্যালযজ্ঞসূত্রমিন্দুশেখরং কৃপাকরম্।
নারদাদিয়োগিবৃন্দবন্দিতং দিগংবরং কাশিকাপুরাধিনাথকালভৈরবং ভজে ॥

অর্থ: “আমি সেই ভগবান কাল ভৈরবের কাছে নত মস্তক হই, যাঁর পদ্ম চরণ দেবতারা পূজা করেন এবং যাঁর স্মরণ বা স্পর্শে সকল অপবিত্রতা দূর হয়। তিনি সাপকে তাঁর উপবীত হিসাবে পরিধান করেন, মাথায় চাঁদ ধারণ করেন এবং তিনি করুণায় পরিপূর্ণ। নারদ সহ অন্যান্য ঋষি ও যোগীগণ তাঁর প্রশংসা করেন। তিনি দিগম্বর— যিনি মুক্ত ও অনাসক্ত। পরিশেষে, আমি সেই কাল ভৈরবের আরাধনা করি যিনি কাশীর পরম দেবতা।”

Brahma ; সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার সীমিত উপাসনা: এক বিস্ময়কর রহস্য !

সুরক্ষার মন্ত্র ও আধ্যাত্মিক রূপান্তর

বলা হয় যে, এই অষ্টকম্-এর প্রতিটি শব্দের অর্থ জেনে যদি পূর্ণ মনোযোগের সাথে জপ করা হয়, তবে ভক্তরা নিজেদের চারপাশে এক শক্তিশালী কম্পন (Vibration) অনুভব করেন। এই কম্পন সুরক্ষার অনুভূতি এবং ইতিবাচকতায় রূপান্তরিত হয়। নিয়মিত এই স্তোত্র পাঠ করলে মানুষ আভ্যন্তরীণ সুরক্ষা, সমর্থন এবং স্থায়িত্ব অনুভব করে।

কাল ভৈরবাষ্টকম্ কেবল একটি স্তোত্র নয়, এটি রূপান্তরের মন্ত্র। ভক্তরা বলেন, এটি লুকানো শত্রু, কালো জাদু থেকে রক্ষা করে এবং বিশৃঙ্খল সময়ে স্পষ্টতা এনে দেয়। এটি ভয় দূর করে, নেতিবাচকতা দূরে রাখে এবং এর মধ্যে এমন এক শক্তি রয়েছে যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, কেবল জপ বা শ্রবণের মাধ্যমেই অনুভব করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর