ব্যুরো নিউজ ১১ নভেম্বর ২০২৫ : গত ১০ নভেম্বর রেড ফোর্টের বাহিরে ঘটা বিস্ফোরণের ঘটনার পর জয়শ-ই-মহম্মদ (Jaish-e-Mohammad)-এর একটি ‘ডাক্তার জঙ্গি মডিউল’-এর পর্দা ফাঁস করিয়াছে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। এই ঘটনায় এই পর্যন্ত ১৫ জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার এবং তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এই মডিউলের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতজুড়ে বড় ধরনের নাশকতার ছক কার্যকর করা।
তদন্তকারী সংস্থাগুলি মনে করিতেছে, বিস্ফোরণে নিহত ডঃ উমর মোহাম্মদই ছিলেন আত্মঘাতী হামলাকারী, যিনি নিরাপত্তা বাহিনীর চাপের মুখে পড়িয়া সম্ভবত পলায়নের সময় দুর্ঘটনাবশত বিস্ফোরণ ঘটান।
প্রধান সন্দেহভাজন ও মডিউলের পরিচয়
এই প্যান-ইন্ডিয়া অপারেশনে ধৃত ও সন্দেহভাজনদের মধ্যে বেশ কয়েকজন উচ্চশিক্ষিত পেশাদার, বিশেষত ডাক্তার, রহিয়াছেন:
- গ্রেফতার: জম্মু ও কাশ্মীর হইতে পাঁচজন (আরিফ, ইয়াসির, মাকসুদ, ইরফান, এবং জমির), ডঃ সাজ্জাদ (জম্মু ও কাশ্মীর), ডঃ আদিল রাইডার (সাহারানপুর), ডঃ মুজাম্মিল আহমদ ও ডঃ শাহিন শাহিদ (ফরিদাবাদ) এবং ডঃ পারভেজ (লখনউ)।
- আটক: ফরিদাবাদের সেক্টর ৫৬ হইতে একজন ডাক্তার ও আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন ল্যাব টেকনিশিয়ান।
- প্রধান সন্দেহভাজন: ডঃ উমর মোহাম্মদ, যিনি আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী এবং বিস্ফোরণের সময় গাড়িতে উপস্থিত ছিলেন বলিয়া ধারণা করা হইতেছে। ঘটনাস্থলে পাওয়া একটি ছিন্নভিন্ন হাতের ডিএনএ পরীক্ষা করিয়া উমরের পরিচয় নিশ্চিত করিবার চেষ্টা করা হইতেছে।
Delhi Car Blast : লালকেল্লা বিস্ফোরণ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জরুরি বৈঠক: ইউএপিএ ধারায় মামলা, পুলওয়ামা যোগের কিনারা
রেড ফোর্ট বিস্ফোরণ এবং গাড়ির রহস্য
গত ১০ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬:৫২ মিনিটে রেড ফোর্টের কাছে একটি আই-২০ (i20) গাড়িতে বিস্ফোরণটি ঘটে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়াছে, নিহতদের শরীরে বিস্ফোরকের চিহ্ন না থাকিলেও, তদন্তকারী সংস্থাগুলি মনে করিতেছে, একটি পরিবর্তিত বিস্ফোরক ব্যবহার করা হইয়াছিল।
- বিস্ফোরণের কারণ: সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য হইতে প্রায় নিশ্চিত হওয়া গিয়াছে যে ডঃ উমরই গাড়িটি চালাইতেছিলেন। এটি পূর্বপরিকল্পিত হামলা ছিল, নাকি উমরের আতঙ্ক ও পলায়নের সময় দুর্ঘটনাজনিত বিস্ফোরণ ছিল, তাহা এখনও তদন্ত করিয়া দেখা হইতেছে।
- গাড়ির অবস্থান: বিস্ফোরণের পূর্বে গাড়িটি ফরিদাবাদের ধৌজস্থিত আল-ফালাহ মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে ২৯ অক্টোবর হইতে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ১১ দিন ধরিয়া পার্ক করা ছিল।
- ক্ষতিগ্রস্ত: এই ঘটনায় ১২ জন নিহত ও বহু লোক আহত হইয়াছেন। নিহতদের মধ্যে আটজনের পরিচয় নিশ্চিত করিয়া পরিবারের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তরিত করা হইয়াছে। বাকি চারটি মৃতদেহের অংশবিশেষের ডিএনএ পরীক্ষা চলিতেছে।
বিস্ফোরকের বিশাল মজুত ও আতঙ্ক
গোটা ষড়যন্ত্রটির মূল কেন্দ্র ছিল ফরিদাবাদের আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয় এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা।
- বিশাল বিস্ফোরক উদ্ধার: ৯ ও ১০ নভেম্বর ফরিদাবাদে তল্লাশি চালাইয়া প্রায় ৩,০০০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক সামগ্রী (অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, ডেটোনেটর ও টাইমার) উদ্ধার করা হইয়াছে।
- আল ফালাহ মসজিদের ইমাম হাফিজ মোহাম্মদ ইশতিয়াকের বাড়ি হইতে ২,৫৬৩ কিলোগ্রাম এবং ডঃ মুজাম্মিলের বাড়ি হইতে আরও ৩৫৮ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।
- ৩০০ কিলোগ্রাম নিখোঁজ: সব মিলিয়ে প্রায় ৩,২০০ কিলোগ্রাম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ভারতে প্রবেশ করিয়াছিল বলিয়া জানা গিয়াছে, যাহার মধ্যে এখনও প্রায় ৩০০ কিলোগ্রাম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিখোঁজ। নিরাপত্তা সংস্থাগুলির কাছে এই নিখোঁজ বিস্ফোরক উদ্ধার করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
- পাচারের পথ: তদন্তে জানা গিয়াছে, এই বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক বাংলাদেশ এবং নেপাল হইয়া ভারতে পাচার হইয়াছিল।
টার্গেটে ছিল অযোধ্যা, বারাণসী ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান
প্রাথমিক তদন্তে জানা যাইতেছে, এই জঙ্গি মডিউলের লক্ষ্য কেবল দিল্লি ছিল না। তাঁহাদের টার্গেটে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল।
- টার্গেট স্থান: উত্তর প্রদেশের অযোধ্যা ও বারাণসী সহ দিল্লি, ইন্ডিয়া গেট, কনস্টিটিউশন ক্লাব, গৌরী শঙ্কর মন্দির, প্রধান রেল স্টেশন এবং শপিং মলগুলি।
- ষড়যন্ত্র: পুলিশ সূত্রে খবর, ২০০৮ সালের ২৬/১১ মুম্বাই হামলার ধাঁচে একযোগে হামলা চালাইয়া দিল্লি, গুরুগ্রাম ও ফরিদাবাদে ব্যাপক নৈরাজ্য সৃষ্টি করাই ছিল তাঁহাদের উদ্দেশ্য। এই মডিউলটি প্রায় ২০০-এর অধিক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আইইডি (IED) প্রস্তুত করিবার পরিকল্পনা করিতেছিল।
- নারী কমান্ডার: ধৃত ডঃ শাহিন শাহিদ, যিনি ভারতে জয়শ-ই-মহম্মদের নারী কমান্ডারের ভূমিকা পালন করিতেছিলেন, তিনি প্রায় দুই বচ্ছর ধরিয়া বিস্ফোরক মজুত করিবার কথা স্বীকার করিয়াছেন। তিনি অযোধ্যায় একটি স্লিপার মডিউল সক্রিয় করিয়াছিলেন বলিয়া জানা যাইতেছে।
New Face of Terrorism : প্রাচুর্য সত্ত্বেও কেন বেছে নেওয়া হলো হত্যার নীলনকশা? ডাক্তার-ইমামের আড়ালে ধরা পড়লো আতঙ্কবাদের গোপন নেটওয়ার্ক
আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিবৃতি
ফরিদাবাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার দায় সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করিয়াছেন। ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর (ডঃ) ভূপিন্দর কৌর আনন্দ এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানাইয়াছেন যে, ধৃত ডাক্তারদের সহিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করা ছাড়া অন্য কোনো সংযোগ ছিল না। তাঁহারা এই ধরনের সংবাদকে মিথ্যা ও মানহানিকর বলিয়া নিন্দা করিয়াছেন এবং তদন্তকারী সংস্থাকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করিবার আশ্বাস দিয়াছেন।
এনআইএ-র তদন্তভার
১১ নভেম্বর এই মামলার তদন্তভার আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA)-র হাতে অর্পণ করা হইয়াছে। এনআইএ এই মডিউলের অর্থসংস্থান, কার্যনির্বাহী ক্রম এবং বিস্তৃত নেটওয়ার্ক উদ্ঘাটন করিবার জন্য একটি বিশেষ দল গঠন করিয়াছে এবং বিভিন্ন রাজ্যে তল্লাশি অভিযান জোরদার করা হইয়াছে।



















