faridabad terror module dr shaheen shahid

শুদ্ধাত্মা মুখার্জি , ১১ নভেম্বর ২০২৫ : দিল্লীর লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে গাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ যখন দেশের রাজধানী জুড়ে এক নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি করল, ঠিক তখনই তদন্তে উদ্ঘাটন হলো এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিস্ফোরণের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ ও হরিয়ানা পুলিশের যৌথ অভিযানে ধরা পড়ল এক বৃহৎ ‘হোয়াইট কলার’ জঙ্গি মডিউল। এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক ও শিক্ষাবিদদের সংশ্লিষ্টতা সমগ্র জাতিকে এক গভীর প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। একদিকে যেমন এই বিস্ফোরণের বলি হলো অন্তত ১২ জন সাধারণ মানুষ, তেমনই অন্যদিকে এই নাশকতার মূল চক্রের মূলে পাওয়া গেল শিক্ষাদীক্ষায় উচ্চস্তরে থাকা একদল মুসলমান ব্যক্তির নাম।

 

উচ্চশিক্ষিতদের হাতে জেহাদের মশাল

এই সন্ত্রাসবাদী চক্রের সবচেয়ে বিস্ময়কর দিকটি হলো অভিযুক্তদের সামাজিক ও পেশাগত পরিচয়। ধৃতদের মধ্যে আছেন ফরিদাবাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডাঃ মুজাম্মিল শাকিল, অনন্তনাগের প্রাক্তন চিকিৎসক ডাঃ আদিল আহমেদ এবং লখনউ-এর বাসিন্দা ডাঃ শাহীন শহীদ। এছাড়াও গ্রেপ্তার হয়েছেন শোপিয়ানের এক মসজিদের ইমাম ইরফান আহমেদ। পুলিশ সূত্রে খবর, এদের বিদেশি হ্যন্ডলারেরা সম্ভবত এই ধারণাতেই ছিল যে, উচ্চশিক্ষিত ডাক্তারদের মতো ‘হোয়াইট কলার’ পেশাজীবীদের উপর নিরাপত্তা বাহিনীর সন্দেহ কম থাকবে।

পুলিশ ডাঃ শাহীন শহীদের গাড়ি থেকে একটি একে-৪৭ রাইফেল, জীবন্ত কার্তুজ এবং অন্যান্য সন্দেহজনক উপকরণ উদ্ধার করেছে। এই অভিযানে মোট সাতজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং প্রায় ২,৯০০ কিলোগ্রাম আইইডি (IED) তৈরির সরঞ্জাম (যার মধ্যে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ও অন্যান্য উপাদান ছিল) উদ্ধার করা হয়েছে। জানা যায়, এই মডিউলটি জয়শ-ই-মহম্মদ (JeM) এবং আনসার গজবত-উল-হিন্দ (AGuH)-এর মতো পাক-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখত। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল দিল্লী ও উত্তর ভারতের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে বড়সড় নাশকতামূলক কার্যকলাপ চালানো এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করা।

Delhi Car Blast : লালকেল্লা বিস্ফোরণ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জরুরি বৈঠক: ইউএপিএ ধারায় মামলা, পুলওয়ামা যোগের কিনারা

চিকিৎসার শপথ, না কি হত্যার ছক?

এই পুরো ঘটনায় যে প্রশ্নটি সর্বাপেক্ষা প্রাসঙ্গিক, তা হলো: যেখানে অভাব বা অনটনের লেশমাত্র নেই, যে সমাজে উচ্চশিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠা রয়েছে, সেখানে কেন মানবজীবনের রক্ষকেরা হত্যার পরিকল্পনা করবে?

ডাক্তারি একটি মহান পেশা, যেখানে জীবন রক্ষা করাই মূল মন্ত্র। অথচ সেই চিকিৎসকেরাই কিনা মারণাস্ত্র ও বিস্ফোরক মজুত করেছেন! পুলিশি তদন্তে যখন সায়ানাইডের চেয়েও ভয়ঙ্কর বিষ ‘রিসিন’ (Ricin)-এর মতো রাসায়নিক সন্ত্রাস সৃষ্টির উপাদানের সম্ভাবনার কথা উঠছে (যদিও কেবল রাসায়নিকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে, রিসিনের উপস্থিতি নিশ্চিত নয়), তখন প্রশ্ন জাগে – এই ‘হোয়াইট কলার’ সন্ত্রাস কি কেবল প্রচলিত বোমা বিস্ফোরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, নাকি এর মাধ্যমে রাসায়নিক সন্ত্রাসের এক বৃহত্তর ও ভয়ঙ্কর নীলনকশা আঁকা হয়েছিল?

 

অন্তিম আক্রোশ: দিল্লীর বিস্ফোরণ

একদিকে যখন এই মূল চক্রটি ধরপাকড়ের মুখে, ঠিক তার কিছুক্ষণের মধ্যেই দিল্লীর লালকেল্লার সন্নিকটে চলন্ত গাড়িতে ঘটল ভয়াবহ বিস্ফোরণ। তদন্তে জানা গিয়েছে, বিস্ফোরণে ব্যবহৃত গাড়িটির যোগসূত্র পুলওয়ামার সঙ্গে ছিল। প্রশ্ন উঠছে— এই ‘হোয়াইট কলার’ মডিউলটির মূল পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার পর, দিল্লীর এই বিস্ফোরণ কি ধৃত চক্রের কোনো ‘শেষ অংশ’-এর হঠকারী কাজ ছিল, নাকি এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা? নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এখন এই দুই ঘটনার যোগসূত্র খুঁজছে।

Delhi Car Blast : লালকেল্লা বিস্ফোরণে ANFO-এর ব্যবহার! চালকের আসনে ফরিদা’বাদ মডিউলের ডঃ উমর! সন্ত্রাসের কিনারায় তদন্তকারী সংস্থা

ধর্মনিরপেক্ষতার নীরবতা ও কিছু কঠিন প্রশ্ন

এইরকম গুরুতর পরিস্থিতিতে, যখন শিক্ষিত ও উচ্চপদে প্রতিষ্ঠিত কিছু মানুষ ঘৃণার বীজ বপন করছেন, তখন সমাজের একাংশের, বিশেষত তথাকথিত ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘বামপন্থী’ শিবিরের নীরবতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। যেহেতু উগ্রপন্থার সাথে যোগসাজশে বিশিষ্ট সম্প্রদায়ের লোক ধরা পড়েছে !
সাধারণত, উগ্রপন্থার কোনো ধর্ম হয় না— এই প্রচলিত বক্তব্যটি শোনা যায়। কিন্তু যখন উগ্রপন্থার অভিযুক্তদের পেশা চিকিৎসক বা ধর্মীয় শিক্ষকের মতো সম্মানজনক হয়, তখন কি সেই চিরাচরিত বক্তব্য বদলে গিয়ে ‘উগ্রপন্থার কোনো পেশা হয় না’ – এই রূপ নেবে?

এই ঘটনা সমাজকে কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন করতে বাধ্য করছে:

১. এই শিক্ষিতদের মৌলবাদী হওয়ার মূলে কি তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ উপাধি, নাস্তিক্যবাদ, না কি কোনো উগ্র ধর্মীয় মতবাদ ?
২. ধর্ম ও পেশা ছাড়াই মানবজাতির মধ্যে সন্ত্রাস ছড়ানোর এই উদ্দেশ্যটি ঠিক কী?

এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর কেবল তদন্তকারী সংস্থাই দিতে পারে না; এই পরিস্থিতিতে তথাকথিত ‘সেকুলার’ সমাজ এবং বুদ্ধিজীবীদেরও তাদের অস্বস্তিকর নীরবতা ভেঙে এই ‘হোয়াইট কলার’ সন্ত্রাসের মূল কারণ ও উৎস নিয়ে গভীর আত্মসমালোচনা করা আবশ্যক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর