ব্যুরো নিউজ ২৭ অক্টোবর ২০২৫ : ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান সংঘাতের আবহেই বিশ্বজুড়ে সামরিক উত্তেজনা বাড়িয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন এবং সীমাহীন পাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘বুরেভেস্টনিক’ (Burevestnik)-এর সফল পরীক্ষার ঘোষণা করেছেন। এই ঘোষণার পাশাপাশি তিনি সশস্ত্র বাহিনীকে ক্ষেপণাস্ত্রটি মোতায়েনের জন্য পরিকাঠামো প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
টেলিভিশনে প্রচারিত একটি বৈঠকে পুতিন জানান, সম্প্রতি পারমাণবিক মহড়ার সময় ক্ষেপণাস্ত্রটি ১৫ ঘণ্টা ধরে উড়েছে এবং ১৪,০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধে সামরিক তৎপরতা এবং ইউক্রেনীয় সেনাদের ঘিরে ফেলার বিষয়েও তিনি সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
ইউক্রেনের জন্য ‘টমাহক’ ক্ষেপণাস্ত্রের আবেদন ও বিতর্ক
অন্যদিকে, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি শক্তিশালী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘টমাহক’ (Tomahawk) সরবরাহের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
- টমাহকের প্রয়োজনীয়তা: জেলেনস্কি সম্প্রতি মার্কিন নেটওয়ার্ক এনবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “শুধুমাত্র ইউক্রেনীয় ড্রোন দিয়ে যুদ্ধ চালানো কঠিন। আমাদের দীর্ঘ পাল্লার টমাহক দরকার।” তিনি মনে করেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনকে শক্তিশালী করবে এবং “রাশিয়ানদের কিছুটা স্বাভাবিক করে আলোচনা টেবিলে বসতে বাধ্য করবে।”
- ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষমতা: টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা প্রায় ১,৬০০ থেকে ২,৫০০ কিলোমিটার। এটি অত্যন্ত কম উচ্চতায় ভূ-সংলগ্ন (low-flying) হয়ে চলতে পারে, ফলে এটিকে চিহ্নিত করা এবং প্রতিহত করা কঠিন। এটির দাম তুলনামূলকভাবে কম হলেও (প্রতিটি প্রায় $২ মিলিয়ন), এটির উচ্চ বিস্ফোরক ক্ষমতা রয়েছে। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়্যার’-এর মতে, হাতে গোনা কয়েকটি টমাহকও রাশিয়ার অভ্যন্তরে গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো—যেমন তাতারস্তানের শাহেদ ড্রোন কারখানা বা সারাটভ ওব্লাস্টের এঙ্গেলস-২ এয়ার বেসে — যথেষ্ট ক্ষতি করতে পারে।
- মার্কিন প্রশাসনের দ্বিধা: সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এখন পর্যন্ত টমাহক সরবরাহে রাজি হয়নি। ট্রাম্প বলেছেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও আমাদের টমাহক দরকার। আমাদের কাছে প্রচুর থাকলেও আমাদের সেগুলির প্রয়োজন।”
- রাশিয়ার চরম হুঁশিয়ারি: কিয়েভের হাতে টমাহক আসার সম্ভাবনা মস্কোকে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। রাশিয়ার বৈদেশিক গোয়েন্দা প্রধান (SVR), সার্গেই নারিশকিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহকে রাশিয়া “শত্রুতামূলক পদক্ষেপ” হিসাবে বিবেচনা করবে, যা বৈশ্বিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলবে। কারণ এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম।
Putin : ভারতের স্বার্থ সবার আগে: রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে পুতিন-জয়শঙ্কর বৈঠক
যুদ্ধের গতিপথ এবং অস্ত্রের ভূমিকা
কেবল অস্ত্র সরবরাহ এই সংঘাতের অবসানের একমাত্র সমাধান নয়। ন্যাটো মিত্ররা যুদ্ধের শুরু থেকেই কেবল অস্ত্র সরবরাহের ওপর জোর দিয়েছে, কিন্তু রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং শর্ত নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এই কৌশল রাশিয়ার আগ্রাসনকে কেবল বাড়িয়েছে।
- বিপজ্জনক পরিণতি: বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলি আক্রমণাত্মক অস্ত্র, যা রাশিয়ার সামরিক ও বেসামরিক অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করতে পারে। এর ফলে রাশিয়া হয়তো ইউক্রেনের ওপর পারমাণবিক ওয়ারহেডযুক্ত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে পাল্টা হামলা চালাতে পারে, যা ইউক্রেনের সামরিক নেতৃত্ব এবং জীবনকে মারাত্মক আঘাত হানবে এবং ইউক্রেনের অবস্থানকে একতরফাভাবে বিপর্যস্ত করবে।
- ইউক্রেনের নিজস্ব চেষ্টা: টমাহকের মতো পাল্লার ‘ফ্ল্যামিঙ্গো’ নামে ইউক্রেনের নিজস্ব ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের কথা জেলেনস্কি বললেও, এর সক্ষমতা এখনও রহস্যে আবৃত এবং ইউক্রেনের কাছে এটির উৎপাদন বাড়ানোর মতো সম্পদ নেই।
- প্রতিরক্ষার প্রয়োজনীয়তা: টমাহক ইউক্রেনের দূরপাল্লার আক্রমণে সাহায্য করলেও, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মোকাবিলায় ইউক্রেনের কাছে এখন সবথেকে বেশি প্রয়োজন আরও উন্নত এবং সক্ষম বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
জেলেনস্কি তাঁর সাম্প্রতিক ওয়াশিংটন সফরে লকহিড মার্টিন এবং রেথিয়ন-এর মতো মার্কিন প্রস্তুতকারকদের সাথে প্রায় $৯০ বিলিয়ন মূল্যের অস্ত্র কেনার জন্য একটি “মেগা-ডিল” করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।



















