ব্যুরো নিউজ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : কলকাতার ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপূজা সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উদ্বোধিত মণ্ডপ ঘিরে পুলিশি বিধিনিষেধের কারণে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক ও জনগণের বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এক দিকে বিজেপি নেতা তথা মণ্ডপের উদ্যোক্তা সজল ঘোষ কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ চরিতার্থ করার অভিযোগ তুলেছেন, অন্য দিকে পুলিশ সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে।
পুজো বন্ধের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ও পুলিশের কড়াকড়ি
বিজেপি নেতা সজল ঘোষ অভিযোগ করেছেন যে, পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে শিয়ালদহ স্টেশন চত্বর সহ পুরো এলাকায় ব্যারিকেড তৈরি করে এবং মণ্ডপে আলো ও শব্দ (Light and Sound) সংস্থার কাছে আইনি নথি (লাইসেন্স, চুক্তি, জিএসটি, সাউন্ড লিমিটারের নথি) চেয়ে নোটিশ পাঠিয়ে দর্শনার্থীদের ভিড় কমাতে চাইছে। তাঁর মতে, মণ্ডপে ভিড় আটকাতে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের মদতে ষড়যন্ত্র চলছে। ঘোষের দাবি, তাঁর পূজার থিম ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের সাফল্য তুলে ধরার কারণেই এই প্রতিহিংসা।
তিনি সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে কঠোর বার্তা দিয়ে লিখেছেন, “পূজা বন্ধের পরিকল্পনা চূড়ান্ত। কেবল জনমতই একমাত্র পথ।”
ভিড়ের ক্ষোভ: ব্যারিকেড ভাঙার ঘটনা
সজল ঘোষের এই অভিযোগের মধ্যেই পুজো দেখতে আসা সাধারণ দর্শনার্থীদের মধ্যেও পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা যায়। এই ক্ষোভের জেরে ভিড় সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে যাওয়ার পথে পুলিশের দেওয়া বাঁশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে এবং জোর করে পুজো পরিক্রমা সম্পন্ন করে। তবে এই বিক্ষোভের কারণে এর নিকটবর্তী আরও একটি বিখ্যাত পুজো, মহম্মদ আলি পার্কের পুজোতেও দর্শনে বাধা সৃষ্টি হয়। পুলিশের ব্যারিকেডের কারণে কার্যত দুর্গম হয়ে যাওয়ায় এই পূজা কমিটি পুজো দর্শন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়।
পুলিশ কমিশনারের সাফাই ও তৃণমূলের মন্তব্য
সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও ভিড় ব্যবস্থাপনার যুক্তিতে কলকাতা পুলিশ সজল ঘোষের সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে। কলকাতা পুলিশের কমিশনার মনোজ ভার্মা বলেন, “বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী সামলাতে সব মণ্ডপেই ভিড় ব্যবস্থাপনার কাজ করা হয়। জনগণের সুরক্ষার সঙ্গে কোনো আপস হতে পারে না। ভিড় যাতে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে না থাকে, তা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এই বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, “মানুষের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ভিড় সামলাবে। প্রশাসন এর জন্য যা করা দরকার তাই করছে। সজল ঘোষ সবকিছুতেই রাজনীতি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।”
উল্লেখ্য, গত বছরও সজল ঘোষের এই মণ্ডপে অযোধ্যার রাম মন্দিরের আদলে থিম তৈরি হয়েছিল এবং সেটিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উদ্বোধন করেছিলেন।