flooded kolkata electrocution deaths

ব্যুরো নিউজ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত চলা প্রবল বৃষ্টিতে কার্যত বানভাসি হয়ে পড়েছে কলকাতা এবং তার সংলগ্ন এলাকা। মাত্র পাঁচ ঘণ্টায় প্রায় ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা ২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বরের ভয়াবহ স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। এই অপ্রত্যাশিত দুর্যোগে জলমগ্ন পথঘাট এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে, যার ফলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত সাতজনে। এই ঘটনায় শহরের দুর্বল নিকাশি ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ পরিকাঠামো নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে।

 

মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭, বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ পরিষেবা

রাতভর বৃষ্টিতে জল জমা হয়ে শহরের বিভিন্ন নিচু এলাকায় বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই জমা জলেই একাধিক বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নেতাজিনগরে সাইকেলে যাওয়া ফল বিক্রেতা বাবু কুণ্ডু এবং একবালপুরের জিতেন্দ্র সিং নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যুর পাশাপাশি কালিকাপুর, গড়িয়াহাট ও বেনিয়াপুকুর থেকেও মৃত্যুর খবর মিলেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা সাতজন।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা সিইএসসি (CESC) এবং রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। সল্টলেকের সেক্টর ৩ এবং ৫-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সাবস্টেশনগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে, কারণ অরক্ষিত এবং নিম্নমানের বিদ্যুৎ পরিকাঠামো জলমগ্ন শহরকে মরণফাঁদে পরিণত করেছে।

Kolkata Flooded : তিলোত্তমার জলযন্ত্রণা: রেকর্ড বৃষ্টিতে প্লাবিত কলকাতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

মেয়র ও বিরোধী নেতার পাল্টাপাল্টি মন্তব্য

এই দুর্যোগের পরিস্থিতিতে পুরসভার ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চরমে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার ভোর থেকেই কলকাতা পুরসভায় বসে নজরদারি চালাচ্ছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি জানিয়েছেন, জল নিকাশির কাজ চলছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে অন্তত ১০ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। তিনি কলকাতাবাসীকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়ার এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। মেয়র স্বীকার করেছেন যে এমন পরিস্থিতি হবে তা তিনি আঁচ করতে পারেননি।

অন্যদিকে, এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেছেন। তিনি লিখেছেন, “জলমগ্ন শহরে মৃত্যুর মিছিল !!!…মৃতদেহ ভাসছে জমা জলে, সকাল সকাল এই দৃশ্য দেখে মন খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু এই দুর্দশার জন্য দায় কার?  এক রাতের বৃষ্টিতেই কলকাতা-সল্টলেক জলমগ্ন! ভাসছে শহর, বিপন্ন শহরবাসী… এটা আপনাদের ব্যর্থতা নয়, এটা অপরাধ, দোষ কার তা নির্ধারণ করে উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।” তিনি কলকাতা ও বিধাননগর পুর নিগমের মেয়রদের অদক্ষতা এবং উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন। শুভেন্দু অধিকারী আরও উল্লেখ করেছেন যে প্রায় দুই মাস আগেও হালকা বৃষ্টিতে শহরের বড় অংশ জলমগ্ন হয়েছিল, কিন্তু তারপরও নিকাশি ব্যবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।

Kolkata : ভারী বর্ষণে কলকাতা জল্মগ্ন ! ভেনিসের মতন হয়ে উঠল মহানগর !

প্রশাসনের পরিকাঠামোগত ব্যর্থতা

কিছু সংবাদমাধ্যমের মতে, এই দুর্যোগ কেবল অপ্রত্যাশিত মেঘভাঙা বৃষ্টির ফল নয়, বরং এটি কর্তৃপক্ষের পরিকাঠামোগত ব্যর্থতার প্রমাণ। বছরের পর বছর ধরে নিকাশি ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা এবং বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর দুর্বলতাই আজকের এই চরম দুর্ভোগের মূল কারণ।

 

রেল ও মেট্রো পরিষেবাও অচল

বৃষ্টির কারণে শুধু রাস্তাঘাটই নয়, শহরের রেল ও মেট্রো পরিষেবাও সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। শিয়ালদহ এবং হাওড়া কারশেডে জল জমে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দমদম থেকে শিয়ালদহের দিকে কোনো ট্রেন যাচ্ছে না এবং বহু রুট বাতিল করা হয়েছে। কলকাতা মেট্রোর কিছু স্টেশনে জল ঢুকে যাওয়ায় পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। পুজোর আগে এমন দুর্যোগে আমজনতার মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। জলমগ্ন শহর কত দ্রুত স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে, তা এখন বড় প্রশ্ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর