ব্যুরো নিউজ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্ক ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের চার নম্বর গেটের কাছে একটি পুকুর থেকে ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অনামিকা মণ্ডল-এর নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় রাজ্য রাজনীতিতে চাপানউতোর শুরু হয়েছে, এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন।
কী ঘটেছিল সেই রাতে?
বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রামা ক্লাবের একটি অনুষ্ঠান চলাকালীন রাত ১০টা ২০ মিনিটে অনামিকাকে পুকুরে ভাসতে দেখেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ছাত্র-ছাত্রীরাই তাকে উদ্ধার করে এবং সিপিআর দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু কোনো সাড়া না পাওয়ায় অনামিকাকে কেপিসি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর কারণ এখনও স্পষ্ট নয়, তবে প্রাথমিক ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে জলে ডুবেই তার মৃত্যু হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, তার শরীরে কোনো আঘাত বা ধস্তাধস্তির চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
মৃত্যুর কারণ ঘিরে ধোঁয়াশা
পুলিশ এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। অনামিকা কীভাবে পুকুরের দিকে গেলেন, কী করে তিনি পুকুরে পড়ে গেলেন, বা কেউ তাকে ধাক্কা দিয়েছিল কি না—এসব প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। অনুষ্ঠানের মাইকের আওয়াজের কারণে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, তবে তার চিৎকার কেউ শুনতে পায়নি বলে মনে করা হচ্ছে। অনামিকা মদ্যপান বা মাদক সেবন করেছিলেন কিনা, তা জানতে তার ভিসেরা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে। যদিও তার পরিচিতরা জানিয়েছেন যে অনামিকা মদ খেতেন না।
রাজনৈতিক তরজা ও বিস্ফোরক মন্তব্য
এই ঘটনার পরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। তৃণমূল ছাত্রপরিষদ (TMCP) রাতে অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া নিয়ে কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেছে। অন্যদিকে, বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য এই ঘটনায় রাজনীতি না করার আবেদন জানিয়ে তদন্তের দাবি করেছেন।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “যাদবপুরে যারা আলট্রা লেফট, তারা গোমুখী থেকে গোদাবরী সংবিধান মানে না। অর্থাৎ মাকুরা আমাদের UGC প্রদত্ত যে শিক্ষা ব্যবস্থা এবং পরিবেশটা, তা এরা তৈরি করতে দেয় না, হিরোইন-চরসের আখড়া করেছে। এরা সব রাষ্ট্রবিরোধী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদের লালিতপালিত করেন। এরা ভোটের সময় ‘নো ভোট টু মোদী’ বলে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “তাই ওখানে মিটিং করে কিছু লাভ হবে না, সিসিটিভি লাগাতে দেবে না। তাই সরকারে পরিবর্তন আনুন, দুর্নীতিগ্রস্ত সেকু মাকুদের বাদ দিয়ে বিজেপিকে আনুন, সব সাফ করে দেব। যাদবপুরে যত পার্থেনিয়াম আছে সব পরিষ্কার করে দেব।”
এই মন্তব্যের পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, কারণ দীর্ঘ দিন ধরেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে।