ব্যুরো নিউজ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : মঙ্গলবার ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস প্রতিনিধিদের লক্ষ্য করে “যথাযথ হামলা” চালিয়েছে বলে জানিয়েছে। ইসরায়েলি বিমান বাহিনী এই হামলা চালায়, যার উদ্দেশ্য ছিল হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বকে নির্মূল করা। এই হামলায় বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে ইসরায়েল দাবি করেছে।
ইসরায়েলি হামলা ও হামাসের দাবি
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বিবৃতিতে হামলার নির্দিষ্ট অবস্থান উল্লেখ না থাকলেও, কাতারের রাজধানীতে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আইডিএফ এক্সে (পূর্বের টুইটার) এক পোস্টে জানায়, “হামাস সন্ত্রাসী সংগঠনের সিনিয়র নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে একটি সুনির্দিষ্ট হামলা চালানো হয়েছে।” তাদের মতে, এই নেতারা বছরের পর বছর ধরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এবং ৭ অক্টোবরের গণহত্যার জন্য সরাসরি দায়ী।
অন্যদিকে, হামাস দাবি করেছে যে ইসরায়েলের এই হামলায় তাদের কোনো শীর্ষ কর্মকর্তার মৃত্যু হয়নি। হামাসের প্রতিনিধিরা গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য দোহায় জড়ো হয়েছিলেন, যখন এই হামলাটি ঘটে।
কাতারের প্রতিক্রিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
হামলার পরপরই কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলার তীব্র নিন্দা জানায়। তারা এটিকে আন্তর্জাতিক আইনের “স্পষ্ট লঙ্ঘন” হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং কাতারের নিরাপত্তার জন্য “গুরুতর হুমকি” বলে অভিহিত করে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ডাঃ মাজেদ আল আনসারি বলেন, কাতার ইসরায়েলের এই “বেপরোয়া আচরণ” এবং এই অঞ্চলের নিরাপত্তার সঙ্গে ক্রমাগত ছিনিমিনি খেলা সহ্য করবে না।
এই ঘটনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রশাসনকে এই হামলা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছেন। তিনি ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে বলেন, “এটি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর একটি সিদ্ধান্ত ছিল, আমার নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না।” তিনি আরও যোগ করেন যে কাতারের অভ্যন্তরে ইসরায়েলের এই একতরফা বোমা হামলা “ইসরায়েল বা আমেরিকার লক্ষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যায় না,” তবে হামাসকে নির্মূল করা একটি “যোগ্য লক্ষ্য।”
ট্রাম্প আরও জানান যে তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ কাতারিদের এই আসন্ন হামলার বিষয়ে অবহিত করেছিলেন, কিন্তু “দুর্ভাগ্যবশত,” এটি “হামলা থামানোর জন্য খুব দেরি হয়ে গিয়েছিল।” তবে, হোয়াইট হাউসের এই দাবি কাতার সরকার সঙ্গে সঙ্গেই অস্বীকার করে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি এক্সে একটি পোস্টে বলেন, “কাতারকে আগাম হামলার বিষয়ে অবহিত করা হয়েছিল বলে যে বিবৃতিগুলো প্রচারিত হচ্ছে তা ভিত্তিহীন। মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে যে যোগাযোগটি এসেছে তা দোহায় ইসরায়েলি হামলার ফলে সৃষ্ট বিস্ফোরণের সময়।”
PM Modi : মার্কিন শুল্ক দ্বিচারিতার মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘স্বদেশী’ বার্তা !
ট্রাম্পের আশ্বাস
হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ট্রাম্প কাতারের নেতৃত্বকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন এবং ভবিষ্যতে তাদের মাটিতে আর কোনো হামলা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, “আমি কাতারকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি শক্তিশালী মিত্র এবং বন্ধু হিসেবে দেখি, এবং হামলার স্থান নিয়ে আমি খুবই দুঃখিত।” তিনি আরও বলেন যে, তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে নির্দেশ দিয়েছেন কাতারের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য।
দোহায় হামাসকে লক্ষ্য করে ইজরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার ঠিক আগে, জেরুজালেম পোস্ট ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত কীভাবে জাতীয় সম্মানকে একটি কৌশলগত সম্পদে রূপান্তরিত করেছে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো শক্তিশালী নেতার চাপের মুখেও নিজ অবস্থান থেকে সরে আসেনি। এই প্রতিবেদনের ঠিক পরেই ইজরায়েল কাতারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষা ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে হামাস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে হামলা চালায়। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এটি ‘অপারেশন সিন্দূর’ থেকে অনুপ্রাণিত, যেখানে ভারত জাতীয় সম্মান রক্ষা করতে কোনো আপস করেনি। যদিও নূপুর শর্মার মন্তব্য এবং প্রাক্তন নৌসেনা কমান্ডারদের মামলার মতো কিছু আদর্শগত সংঘাতের কারণে অতীতে কাতার ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন দেখা গিয়েছিল, তবুও এই দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এখনও বন্ধুত্বপূর্ণ। ইজরায়েলের এই পদক্ষেপ ভারতের শক্তিশালী ও আপসহীন পররাষ্ট্রনীতির প্রতি তাদের সম্মানের একটি প্রতিচ্ছবি হতে পারে।