Nepal protests

ব্যুরো নিউজ ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : নেপালে ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। মূলত ‘জেন-জি’ (Gen Z) নামে পরিচিত তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ দ্রুত সহিংস রূপ ধারণ করেছে। এখন পর্যন্ত সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন নিহত এবং ৩৪৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন শহরে কারফিউ জারি করেছে এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি বিক্ষোভকারীদের “জেন-জি ঝামেলা সৃষ্টিকারী” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে এই নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। তাঁর মতে, ভুয়া খবর এবং সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এই পদক্ষেপ জরুরি ছিল।

 

প্রতিবাদের কারণ এবং রাজনৈতিক সংকট

সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে তরুণ প্রজন্ম রাস্তায় নেমে আসে, কারণ তারা এটিকে বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত বলে মনে করে। বিক্ষোভ শুরু হয় রাজধানী কাঠমান্ডুতে এবং দ্রুত দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, যার মধ্যে রয়েছে পোখারা, ইটাহারি এবং রুপানদেহির মতো শহর। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনের কাছাকাছি সংরক্ষিত অঞ্চলে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ জলকামান, কাঁদানে গ্যাস এবং এমনকি গুলিও ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। প্রধানমন্ত্রীর নিজ শহর দামকেও পুলিশের গুলিতে একজন আহত হয়েছেন।

PM Modi : ‘এশীয় শতককে রূপ দিতে ভারত ও জাপান একত্রিত হবে’, টোকিওতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

এই বিক্ষোভ শুধু সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার অভিযোগও এতে যুক্ত হয়েছে। বিরোধী দলগুলো, যেমন নেপালি কংগ্রেস এবং সিপিএন (মাওবাদী সেন্টার), এই বিক্ষোভকে সমর্থন করেছে এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে। নেপালি কংগ্রেসের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক “অকল্পনীয় প্রাণহানি”র নৈতিক দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে জোটের অভ্যন্তরীণ সংকট নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকা হলেও কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।


PM Modi : ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর জন্য এক নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়তে ভারত-ফিজি একসঙ্গে: প্রধানমন্ত্রী মোদি

বিক্ষোভের রূপ এবং সরকারি পদক্ষেপ

বিক্ষোভকারীরা কেবল তরুণ প্রজন্মের সদস্যই নয়, এর মধ্যে “মিলিনিয়ালস” এবং “বুুমারস”-ও যুক্ত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের একাংশ পার্লামেন্ট গেট ভাঙচুর করে এবং পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে প্রবেশের চেষ্টা করে। এরপরই পুলিশ কড়া পদক্ষেপ নেয়।
বিক্ষোভ সমন্বয় করতে, বিক্ষোভকারীরা ভিপিএন (VPN) ব্যবহার করছে, কারণ নেপালে ডিসকর্ড এবং অন্যান্য অ্যাপ নিষিদ্ধ। “হামি নেপাল” নামে একটি এনজিও এই বিক্ষোভের মূল সংগঠকদের মধ্যে অন্যতম। এই গোষ্ঠীটি পূর্বে মানবিক কার্যক্রমে পরিচিত ছিল, কিন্তু সম্প্রতি অনলাইনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার একটি ১৫ দিনের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যা সহিংসতার কারণ খতিয়ে দেখবে। যদিও এই কমিটির সদস্য ও সমন্বয়কদের নাম এখনও ঘোষণা করা হয়নি। নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার কর্মী এবং বিরোধী নেতারা সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বৈরাচারী এবং অগণতান্ত্রিক বলে নিন্দা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর