ব্যুরো নিউজ ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্ট ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির দাঙ্গার ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ মামলায় অভিযুক্ত অ্যাক্টিভিস্ট উমর খালিদ, শারজিল ইমাম এবং আরও সাতজনের জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। বিচারপতি নবীন চাওলা এবং শালিন্দর কউরের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দেয়। একই সঙ্গে শারজিল ইমাম, উমর খালিদ, মহম্মদ সেলিম খান, শিফা উর রহমান, আথার খান, মীরান হায়দার, আবদুল খালিদ সাইফুল্লাহ এবং গুলফিশা ফাতেমার জামিনের আবেদনও খারিজ করা হয়েছে। গত ৯ই জুলাই আদালত এই মামলার রায় স্থগিত রেখেছিল।
জামিন কেন নাকচ হলো?
আদালত তার রায়ে বলেছে যে, এই ষড়যন্ত্রে ইমাম এবং খালিদের ভূমিকা ‘প্রথম দেখায় গুরুতর’ (‘prima facie grave’) মনে হয়েছে। আদালত আরও জানিয়েছে, তারা দুজনেই “বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা” দিয়ে “মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যদের ব্যাপক জমায়েতের জন্য উস্কানি” দিয়েছিলেন। আদালত বলেছে, “প্রতিবাদের অবাধ অধিকারের যদি অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে তা দেশের সাংবিধানিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।” আদালত আরও বলেছে, “নাগরিকদের প্রতিবাদ বা বিক্ষোভের আড়ালে যেকোনো ষড়যন্ত্রমূলক সহিংসতা মেনে নেওয়া যায় না। এমন কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ এবং যাচাই করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব, কারণ এগুলো বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশ এবং সংঘবদ্ধ হওয়ার অধিকারের আওতায় পড়ে না।”
মামলার প্রেক্ষাপট ও পুলিশের অভিযোগ
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দিল্লি জুড়ে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন (CAA) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (NRC)-এর বিরুদ্ধে চলা বিক্ষোভের সময় বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। এই সহিংসতায় ৫৩ জন নিহত এবং ৭০০-র বেশি মানুষ আহত হন। পরে উমর খালিদ, শারজিল ইমাম এবং আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে দাঙ্গা উস্কে দেওয়ার “মাস্টারমাইন্ড” হওয়ার অভিযোগ আনা হয়। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সন্ত্রাস-বিরোধী আইন ইউএপিএ (Unlawful Activities (Prevention) Act) এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়েছে।
পুলিশের অভিযোগ, খালিদ এবং ইমামের মতো অভিযুক্তদের বক্তৃতাগুলোতে সিএএ-এনআরসি, বাবরি মসজিদ, তিন তালাক এবং কাশ্মীর প্রসঙ্গ টেনে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। পুলিশ আরও অভিযোগ করে যে এই দাঙ্গা ছিল একটি উদ্দ্যেশ্যপ্রণোদিত “ক্লিনিক্যাল ও প্যাথলজিক্যাল ষড়যন্ত্র”। চার্জশিটে বলা হয়েছে, খালিদ উত্তর-পূর্ব দিল্লির দাঙ্গা উস্কে দিতে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অভিবাসীদের যুক্ত করতে বলেছিলেন। ” যদি ভারতের চিকেন’স নেক (শিলিগুড়ি করিডোর) বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে পুরো উত্তর-পূর্ব ভারত বাকি দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।” – দাঙ্গা পরিস্থতিতে এই ছিল শারজিলের বক্তব্য । পুলিশ এক সুরক্ষিত সাক্ষীর বরাত দিয়ে দাবি করেছে যে, এদের আর্থ-সামাজিক দুর্বলতা এবং বস্তি এলাকায় বসবাসের কারণে তাদের ব্যবহার করা সহজ ছিল।
সুপ্রিম কোর্টে আবেদন
দিল্লি হাইকোর্ট জামিন খারিজ করে দেওয়ার কয়েক দিন পরই ছাত্রনেতা শারজিল ইমাম শনিবার সুপ্রিম কোর্টে জামিনের জন্য আবেদন করেছেন। তবে, এখন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে তার মামলার শুনানি তালিকাভুক্ত হয়নি।