ব্যুরো নিউজ ২৭শে আগস্ট ২০২৫ : কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের তহবিল আটকে রাখার অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর জবাবে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন, তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ তুলে। গত সপ্তাহে , প্রধানমন্ত্রীর করা মন্তব্য ঘিরে এই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ: কেন্দ্রের বঞ্চনা ও ‘অসম্মান’
বর্ধমানে এক সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ দিনের এমজিএনরেগা (MGNREGA) , নির্মল জল যোজনা এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে। তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী ‘বাংলায় সবাই চোর’ বলে রাজ্যের জনগণকে অপমান করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীর পদকে সম্মান করি, এবং তাঁরও একই সম্মান দেখানো উচিত। যদি বাংলায় দুর্নীতির কারণে তহবিল বন্ধ হয়, তাহলে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও বিহারের কী হবে?”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, রাজ্যকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য কেন্দ্র ১৮৬টি কেন্দ্রীয় দল পাঠিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সত্ত্বেও যদি নম্বর কেটে নিয়ে পুরো রাজ্যকে চোর বলা হয়, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা বলুন, কিন্তু আমি বাংলার অপমান সহ্য করব না।”
Mamata : দাঙ্গার দিনকে ‘শহিদ দিবস’ ঘোষণা নিয়ে বিজেপি বনাম মমতা !
শুভেন্দু অধিকারীর জবাব: দুর্নীতির পাল্টা অভিযোগ
মুখ্যমন্ত্রীর আক্রমণের জবাবে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পাল্টা আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “যার গোটা মন্ত্রিসভা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এবং বেশ কয়েকজন সদস্য জেল খাটছে, তার কোনো অধিকার নেই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাপারে মন্তব্য করার।” শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন, গত ১৪ বছরে রাজ্যে কোনো স্থায়ী সরকারি নিয়োগ হয়নি, বরং ৬ লাখ সরকারি পদ বিলুপ্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের তৎপরতায় যদি নির্বাচনকালীন হিংসা, অবরোধ ও কারচুপি রোখা যায়, তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনমতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। মেট্রোরেল সম্প্রসারণের প্রসঙ্গে তিনি জানান, কেন্দ্র কলকাতা মেট্রোর জন্য ১৮৬৪১ কোটি টাকা দিয়েছে, কিন্তু রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার কারণে বহু এলাকায় মেট্রো সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন যে মুখ্যমন্ত্রী সবকিছুতেই রাজনীতি করছেন, জনগণের অসুবিধা ঘটিয়ে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর কটাক্ষ: দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা
গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কয়েকটি মেট্রো পরিষেবার উদ্বোধনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দেন। তিনি বলেন, “কিছু প্রভাবশালী এত নিমগ্ন হয়েছে যে দুর্নীতির অভিযোগে জেলে থেকেও প্রশাসন চালানোর ঔদ্ধত্য করে।” তিনি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি এবং রেশন দুর্নীতির উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, “জেল থেকে প্রশাসন চালানো যায়, এমনটা বাংলার মানুষও দেখতে পাচ্ছেন।” প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, এই ধরনের ‘চোরদের’ সরকারি পদে থাকার অধিকার আছে কি না।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর মূল বক্তব্য ছিল সংবিধানের ১৩০তম সংশোধনের বিরোধিতাকে ঘিরে। তিনি বলেন, তৃণমূলের গোটা রাজনীতিটাই পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতিভিত্তিক।
ভোটের তালিকা এবং বাঙালি-অবাঙালি বিতর্ক
ভোটের তালিকা সংশোধন প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যের উল্লেখ করে বলেন যে প্রতি এক জনের জন্মে ২.৫ জন ভোটারের বৃদ্ধি একটি আশঙ্কাজনক বিষয়। এর কারণ হিসেবে তিনি মৃত ভোটার, একাধিক ভোটার এবং ‘অবৈধ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা’দের ভোট তালিকায় অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ করেন।
বাঙালি-অবাঙালি প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ভারতবর্ষে জমিদার প্রথা এখন বন্ধ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারত কারো জমিদারী নয় এবং দেশের যেকোনো রাজ্যের মানুষ যেকোনো রাজ্যে বসবাস করতে পারে। তবে, যারা ভারতীয় নয়, কেবল বাঙালি পরিচয়ে তাদের ভারতে প্রবেশ বা আশ্রয় নেওয়ার কোনো অধিকার নেই।