ব্যুরো নিউজ ২৬শে আগস্ট ২০২৫ : গণেশ চতুর্থী ২০২৫, অর্থাৎ ২৭শে আগস্ট, বুধবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। প্রজ্ঞা, সমৃদ্ধি এবং নতুন শুরুর প্রতীক ভগবান গণেশকে ঘরে বরণ করার জন্য ভক্তরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। এই উৎসবের সময় ছোট ছোট প্রস্তুতি থেকে শুরু করে পরিবেশ-বান্ধব সজ্জা, সবকিছুই পূজার অভিজ্ঞতাকে আরও সুন্দর এবং অর্থপূর্ণ করে তোলে। এই প্রবন্ধে বাড়িতে গণেশ পূজার বিস্তারিত প্রস্তুতি ও করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো।
পূজার প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও তার গুরুত্ব
পূজার সময় অনেক সময় ছোট ছোট জিনিস ভুলে যাওয়ার কারণে পূজার ছন্দ নষ্ট হয়। তাই এখানে একটি বিস্তারিত তালিকা দেওয়া হলো, যা আপনাকে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে।
- গণেশ মূর্তি: একটি সুন্দর মূর্তি নির্বাচন করুন। পরিবেশ সচেতনতার জন্য মাটি বা প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে তৈরি মূর্তি বেছে নেওয়া উচিত, যা বিসর্জনের সময় পরিবেশের ক্ষতি করে না।
- চৌকি বা কাঠের আসন: মূর্তিকে রাখার জন্য একটি পরিষ্কার কাঠের চৌকি বা আসন ব্যবহার করুন। এটি লাল বা হলুদ কাপড়ে ঢেকে দিন, যা সম্মান ও পবিত্রতার প্রতীক।
- শুভ রঙের কাপড়: লাল বা হলুদ কাপড় ব্যবহার করা হয় কারণ এই রঙগুলো গণেশের জন্য শুভ এবং সমৃদ্ধি ও শক্তির প্রতীক।
- জলপূর্ণ কলস: নারকেল এবং আমের পাতা দিয়ে ভরা একটি কলস মূর্তির পাশে রাখুন। এটি প্রাচুর্য এবং পবিত্রতার প্রতীক।
- ফুল ও মালা: গাঁদা, জবা, বা পদ্মের মতো তাজা ফুল ব্যবহার করুন। গণেশ লাল রঙের ফুল খুব পছন্দ করেন বলে মনে করা হয়।
- দূর্বা ঘাস: তিন পাতাযুক্ত দূর্বার গুচ্ছ গণেশের অন্যতম প্রিয় নৈবেদ্য, যা আশীর্বাদ, স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করে অর্পণ করা হয়।
- নৈবেদ্য: মোদক ছাড়া গণেশ চতুর্থী অসম্পূর্ণ। এছাড়া লাড্ডু, কলা এবং গুড় দিয়ে তৈরি মিষ্টিও ভগবানকে উৎসর্গ করা যেতে পারে।
- পূজা থালি: থালিতে সিঁদুর, হলুদ, চন্দন, চাল, ধূপকাঠি, কর্পূর, প্রদীপ ও ঘি রাখুন। এগুলো যেকোনো হিন্দু পূজার মূল অংশ।
- পান পাতা ও সুপারি: এগুলো মন ও চিন্তার সতেজতা এবং স্বচ্ছতার প্রতীক।
- আরতি বই বা মন্ত্র: উৎসবের আনন্দে মন্ত্র বা আরতির শ্লোক ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক। তাই একটি আরতি বই বা মন্ত্রের তালিকা কাছে রাখুন।
- ফল: কলা, বেদানা, পেয়ারা ইত্যাদি ফল নৈবেদ্য হিসেবে ব্যবহার করুন।
- ছোট জলপাত্র ও ঘণ্টা: শুদ্ধিকরণের জন্য একটি ছোট জলপাত্র এবং ইতিবাচক শক্তি আনতে ও নেতিবাচকতা দূর করতে একটি ছোট ঘণ্টা রাখুন।
Ganesh Chaturthi : বাম, ডান নাকি সোজা ? শুঁড়ের দিকভেদে শ্রী গনেশের বিভিন্ন রূপ ও তাদের তাৎপর্য
সজ্জা: ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন
পূজার জন্য মণ্ডপ বা বেদি সাজানোও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শুধু স্থানটিকে সুন্দর করে না, বরং একটি পবিত্র পরিবেশও তৈরি করে।
- পরিবেশ-বান্ধব উপকরণ: প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাগজ, কাপড় বা প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার করুন। বাঁশের মণ্ডপ, পোড়ামাটির মডেল এবং প্রাকৃতিক সামগ্রী ব্যবহার করে পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখা যায়।
- ঐতিহ্যবাহী সাজ: কলা পাতা, হলুদ, লাল এবং সবুজ কাপড়ের ব্যবহার ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তোলে।
- কাঠের মণ্ডপ: ভারতীয় সংস্কৃতিতে কাঠকে শুভ ও মাটির কাছাকাছি মনে করা হয়। হাতে খোদাই করা কাঠের মণ্ডপ বা আসন ব্যবহার করলে তা সাজসজ্জায় মাটির ছোঁয়া এনে দেয়।
- আলোর ব্যবহার: প্রদীপ, পিতলের বাতি, বা ফেয়ারি লাইট ব্যবহার করে মণ্ডপকে আলোকিত করুন। এটি পূজার স্থানকে আরও ঐশ্বরিক করে তোলে।
- থিমভিত্তিক সজ্জা: অনেকে বৃন্দাবন, রাজকীয় প্রাসাদ বা মহাকাশের মতো থিম তৈরি করে মণ্ডপ সাজান। তবে মনে রাখতে হবে, ভক্তিই হলো মূল, সজ্জা তার পরের বিষয়।
- হাতে তৈরি সজ্জা: পরিবার একত্রিত হয়ে তোরণ, রঙিন আলপনা এবং শিশুদের হাতে আঁকা মাটির পাত্র দিয়ে সাজালে তাতে এক বিশেষ আধ্যাত্মিক গুণ যোগ হয়।
Ganesh Chaturthi : শ্রী গনেশের গজমস্তক প্রাপ্তির পৌরাণিক গাথা ।
গণেশ পূজার কিছু অবশ্য করণীয় ও বর্জনীয়
গণেশ চতুর্থী একটি পবিত্র উৎসব। তাই কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত।
করণীয় (Dos):
- পরিবেশ-বান্ধব মূর্তি: প্লাস্টার অফ প্যারিস বা ক্ষতিকর রাসায়নিক রং দিয়ে তৈরি মূর্তি এড়িয়ে চলুন।
- স্থান শুদ্ধিকরণ: মূর্তি স্থাপনের আগে পূজার স্থানটি পরিষ্কার করে নিন এবং রঙ্গোলি ও ফুল দিয়ে সাজান।
- শুভ মুহূর্ত: সঠিক শুভ মুহূর্তে মূর্তি স্থাপন করুন। এর জন্য কোনো পুরোহিতের পরামর্শ নিতে পারেন।
- সঠিক স্থাপন: মূর্তিকে কাঠের আসনে রাখুন। এটি সরাসরি মেঝেতে রাখা উচিত নয়। গণেশকে পূর্ব বা উত্তর দিকে মুখ করে রাখা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।
- সাত্ত্বিক খাবার: মোদক, লাড্ডু, ফল ইত্যাদি সাাত্ত্বিক খাবার প্রসাদ হিসেবে তৈরি করুন।
- প্রতিদিনের আরতি: মূর্তি স্থাপনের পর প্রতিদিন অন্তত দুবার আরতি করুন এবং মন্ত্র পাঠ করুন।
- ইতিবাচক পরিবেশ: পরিবার ও বন্ধুদের সাথে আনন্দ ও ভক্তির পরিবেশে উৎসব পালন করুন।
বর্জনীয় (Don’ts):
- অনুপযুক্ত স্থান: মূর্তি কখনো মেঝেতে বা শৌচাগার বা বাথরুমের মতো অনুচিত স্থানের কাছে রাখবেন না।
- আমিষ ও মাদক: গণেশ চতুর্থীর সময় আমিষ খাবার এবং অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকুন।
- বিসর্জনে তাড়াহুড়ো: বিসর্জন ভক্তি সহকারে করুন। প্রাকৃতিক জলাশয়ের পরিবর্তে কৃত্রিম পুকুর বা জলপাত্রে বিসর্জন দিলে পরিবেশের ক্ষতি কম হয়।
- নেতিবাচকতা: এই সময় ঝগড়া, রাগ বা যেকোনো নেতিবাচকতা এড়িয়ে চলুন।
গণেশ চতুর্থী কেবল একটি উৎসব নয়, এটি ভালোবাসা, আলো এবং আশীর্বাদ ঘরে আনার এক উপায়। সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে এই উৎসব পালন করলে তা সত্যিই অর্থপূর্ণ ও আনন্দময় হয়ে ওঠে।