ব্যুরো নিউজ ৮ আগস্ট ২০২৫ : বীরভূম ও ঝাড়গ্রামের পর রাজ্য জুড়ে ভাষা মিছিলের মাধ্যমে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়া এবং ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার ঝাড়গ্রামে পদযাত্রা শেষে মঞ্চ থেকে সরাসরি নির্বাচন কমিশনকে (EC) এবং বিজেপিকে নিশানা করে তিনি বলেন, কমিশন ‘বিজেপির ক্রীতদাস’ হিসেবে কাজ করছে। একইসঙ্গে, রাজ্যের চার আধিকারিককে সাসপেন্ড করার নির্দেশের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, “কাউকে পানিশমেন্ট পেতে দেব না।”
মুখ্যমন্ত্রীর তোপ: কমিশনকে ‘বিজেপির ক্রীতদাস’ বললেন মমতা
ঝাড়গ্রামের ভাষা মিছিল শেষে মুখ্যমন্ত্রী কমিশনের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে অভিযোগ করেন যে, বাংলায় NRC চালু করার চক্রান্ত চলছে। তাঁর মন্তব্য, “ভোটারদের নাম কাটার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু কারও নাম কাটা যাবে না।” তিনি অসম সরকারেরও নিন্দা করে বলেন, “অসম থেকে বাংলায় কেন NRC নোটিস পাঠানো হচ্ছে? বাংলা বললেই আটকানো হচ্ছে। রাজ্যে সরকারি কর্মীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর, নজরুলের ভাষাকে অপমান করা হচ্ছে। বাংলা ভাষার উপর এই অত্যাচার সহ্য করব না।”
চার আধিকারিকের निलম্বন নিয়ে বিতর্ক
সম্প্রতি ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তির ক্ষেত্রে অনিয়মের জেরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর পূর্ব এবং পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না বিধানসভা কেন্দ্রের দুই ইআরও (Electoral Registration Officer) এবং দুই এইআরও (Assistant Electoral Registration Officer) সহ চার আধিকারিককে বরখাস্ত (suspend) করার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। এই চারজনের বিরুদ্ধে ‘অপরাধমূলক কার্যকলাপের’ অভিযোগে FIR করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, “কোন অধিকারে রাজ্যের আধিকারিকদের সাসপেন্ড করা হয়েছে?” তিনি আরও বলেন, “কোনো অফিসারকেই শাস্তি পেতে দেওয়া হবে না।”
এসআইআর ইস্যুতে কঠোর কমিশন, মুখ্যসচিবকে হুঁশিয়ারি
এদিকে, এসআইআর ইস্যুতে এবার অ্যাকশন মোডে দেখা গেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে। কমিশনের পক্ষ থেকে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে, যেখানে জানতে চাওয়া হয়েছে যে সাসপেন্ড হওয়া চার আধিকারিকের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে। কমিশনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, যদি মুখ্যসচিবের জবাবে কমিশন সন্তুষ্ট না হয়, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
Bihar : বিহারের খসড়া ভোটার তালিকায় রাজনৈতিক দলগুলির কোনো আপত্তি নেই, জানাল নির্বাচন কমিশন
রাজনৈতিক তরজা ও আমলাদের চিঠি
আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই এসআইআর প্রক্রিয়াকে ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেও, বিজেপির দাবি, এসআইআর হলে অবৈধ, মৃত বা অনুপ্রবেশকারী ভোটারদের নাম বাতিল হবে।
এরই মধ্যে, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সাসপেন্ড হওয়া সরকারি আধিকারিকদের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার জন্য রাজ্যের আমলাদের সংগঠন মুখ্যসচিবকে পাল্টা চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন প্রক্রিয়ার পবিত্রতা বজায় রাখার পাশাপাশি এই ধরনের সিদ্ধান্ত যেন ন্যায়সঙ্গতভাবে বিবেচনা করা হয়।
এই সামগ্রিক পরিস্থিতিতে এটা স্পষ্ট যে, রাজ্য সরকার সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে উপেক্ষা করে শাসন চালিয়ে যাওয়াকে নৈতিক অবস্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। এই অবস্থায় রাজ্যে এসআইআর-এর কার্যকারিতা এবং সাফল্য নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।