Donald Trump to increase tariff as oil import penalty on IND-RUS

ব্যুরো নিউজ ৪ আগস্ট ২০২৫ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও রাশিয়ান তেল কেনার জন্য ভারতকে হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভারত শুধু বিপুল পরিমাণে রাশিয়ান তেল কিনছে না, বরং সেই তেল খোলা বাজারে বিক্রি করে মোটা মুনাফা কামাচ্ছে। এই বলে তিনি ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে মানুষের মৃত্যুর প্রতি ভারতের উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন। ট্রাম্প আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, এর ফলে তিনি ভারতের ওপর শুল্ক উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেবেন। তার এই মন্তব্যের কয়েক দিন আগে তিনি ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং একটি অনির্দিষ্ট শুল্ক জরিমানার কথাও বলেছিলেন। তবে ভারত সরকার এই হুমকিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না এবং এটিকে “নগণ্য” প্রভাব ফেলবে বলে জানিয়েছে।

রাশিয়ান তেল ক্রয় এবং ভারতের অবস্থান

 বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল আমদানিকারক দেশ হিসেবে ভারত ঐতিহাসিকভাবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বেশিরভাগ তেল কিনত। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার আক্রমণের পর পশ্চিমারা রাশিয়াকে বর্জন করলে রাশিয়া ডিসকাউন্টে তেল বিক্রি শুরু করে। এর পর থেকেই ভারতের তেল আমদানির উৎস পরিবর্তিত হয়। সেই বছর, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বলেছিলেন, “এক মাসে রাশিয়া থেকে ভারতের মোট তেল ক্রয় সম্ভবত ইউরোপের এক বেলার জ্বালানি ক্রয়ের চেয়েও কম।” বর্তমানে ভারত প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ ব্যারেল তেল কেনে, যা বিশ্ব সরবরাহের ২ শতাংশ। চীন ও তুরস্কও রাশিয়ার বড় ক্রেতা, যেখানে তুরস্ক NATO নামক পশ্চিমা সামরিক গোষ্ঠীর সদস্য ।

India vs USA : ট্রাম্পের হুমকি ও পাল্টা চাপের মধ্যেও রুশ তেল কেনা চলবে, জানাল ভারত

ট্রাম্পের শুল্কের হুমকি এবং ভারতের প্রতিক্রিয়া

 ট্রাম্পের এই হুমকি রাশিয়ার সাথে তার ক্রমবর্ধমান তিক্ত সম্পর্কের ফল। ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হওয়ায় তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকিও দিয়েছেন। ভারত সরকার সূত্রে জানা গেছে, এই শুল্কের ফলে ভারতের অর্থনীতিতে “নগণ্য” প্রভাব পড়বে এবং জিডিপি ক্ষতি ০.২ শতাংশের বেশি হবে না। সরকারি সূত্র  জানিয়েছে যে, ভারতীয় তেল সংস্থাগুলি রাশিয়ান তেল আমদানি বন্ধ করবে না, কারণ “ভারতের জ্বালানি ক্রয় জাতীয় স্বার্থ এবং বাজার শক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়।”

বাণিজ্য ঘাটতি এবং “মেড ইন ইন্ডিয়া”র গুরুত্ব

 গত সপ্তাহে ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন যে, ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। তিনি ভারতকে “যেকোনো দেশের মধ্যে সবচেয়ে কঠোর এবং আপত্তিজনক অ-আর্থিক বাণিজ্য বাধা” রাখার অভিযোগ করেছেন। তিনি আরও বলেছিলেন যে, ভারত এবং রাশিয়া তাদের “মৃত অর্থনীতিকে একসাথে ডুবিয়ে দিতে পারে,” যার জবাবে নয়াদিল্লি বলেছে যে ভারত বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান প্রধান অর্থনীতি এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ অর্থনীতি।
এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার সংসদীয় এলাকা বারাণসীতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “বিশ্ব অর্থনীতি অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার সম্মুখীন। এমন সময়ে দেশগুলো কেবল নিজেদের স্বার্থের দিকেই মনোযোগ দিচ্ছে। ভারতও বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার পথে এবং তার নিজস্ব অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।” তিনি “মেড ইন ইন্ডিয়া” পণ্যের সমর্থনে একটি জাতীয় আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছেন।

অর্থনৈতিক প্রভাব এবং এসবিআই রিসার্চের বিশ্লেষণ

 এসবিআই রিসার্চের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর এই বাণিজ্য অচলাবস্থার প্রভাব ভারতের চেয়ে বেশি খারাপ হবে, কারণ তাদের জিডিপি কম, মুদ্রাস্ফীতি বেশি এবং ডলার দুর্বল। রিপোর্টে বলা হয়েছে, “ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং জরিমানা একটি খারাপ ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত, তবে গ্লোবাল সাপ্লাই চেনের রহস্যময় শক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সামঞ্জস্য করে প্রভাবকে কমিয়ে দেবে।”
এসবিআই রিসার্চ পরামর্শ দিয়েছে যে, ভারতীয় ব্যবসা এবং সংস্থাগুলির উচিত “মেড ইন ইন্ডিয়া”কে প্রশ্নাতীত গুণমানের প্রতীক হিসেবে পুনরায় শক্তিশালী করা। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, “আশ্চর্যজনকভাবে, ভারতের তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি, মুদ্রাস্ফীতি এবং মুদ্রার মান কমে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি।”

মার্কিন অর্থনীতিতে প্রভাব

 মার্কিন অর্থনীতিতে নতুন মুদ্রাস্ফীতির চাপ দেখা যাচ্ছে, যা সাম্প্রতিক শুল্ক এবং দুর্বল ডলারের প্রভাবের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স, অটো এবং ভোক্তা সামগ্রীর মতো আমদানি-সংবেদনশীল খাতে। মার্কিন মুদ্রাস্ফীতি ২০২৬ সাল পর্যন্ত ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার ওপরে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা শুল্ক এবং বিনিময় হারের আন্দোলনের সরবরাহ-পার্শ্বের প্রভাব দ্বারা পরিচালিত হবে।
এসবিআই রিসার্চ উল্লেখ করেছে যে, বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট আমদানি প্রায় $৩,২৬৬ বিলিয়ন ডলার। নতুন ঘোষিত গড় শুল্কের হার সমস্ত আমদানির ওপর ২০ শতাংশ ধরা হয়েছে। ফলে, এই শুল্কের ধাক্কা প্রায় পুরো আমদানি পরিমাণেই প্রযোজ্য হবে।
শর্ট টার্মে মার্কিন শুল্কের ফলে একজন গড় মার্কিন পরিবারের প্রায় $২,৪০০ ডলার খরচ বাড়বে, যা প্রধানত শুল্ক-চালিত মুদ্রাস্ফীতির কারণে উচ্চ মূল্যের ফল। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলি প্রায় $১,৩০০ ডলার হারাতে পারে, যা উচ্চ উপার্জনকারীদের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি বোঝা, অন্যদিকে উচ্চ আয়ের পরিবারগুলির $৫,০০০ ডলার পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে, যদিও তাদের সামগ্রিক আর্থিক স্থিতিশীলতার ওপর এর প্রভাব কম।

Balochistan : এইবার পাকিস্তানে ট্রাম্পের স্বপ্নভঙ্গ , ‘বিশাল তেল’ ভাণ্ডারে বাধা বালুচিস্তান

ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক

 উল্লেখযোগ্য যে, অর্থবছর ২৫-এ ভারতের মোট রপ্তানিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশ ছিল ২০ শতাংশ এবং অর্থবছর ২৬-এ ২২.৪ শতাংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা শীর্ষ ১৫টি পণ্য মোট রপ্তানির ৬৩ শতাংশ ছিল।

ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ডলারের ভবিষ্যত

 প্রতিবেদনে ক্রিপ্টোকারেন্সির বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছে। ভার্চুয়াল ডিজিটাল অ্যাসেটস (ভিডিএ), বিশেষত ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং স্টেবলকয়েন নিয়ে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে, তাতে মার্কিন প্রশাসনের আমেরিকাকে ক্রিপ্টো রাজধানী বানানোর এজেন্ডা ডলারের প্রতি আস্থা হারানোর সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে। ডলার বিশ্বের রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে একটি সংকটজনক পর্যায়ে পৌঁছতে চলেছে বলে মনে হচ্ছে, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অংশীদার দেশগুলির সাথে বাণিজ্য চুক্তিগুলির মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর