tsunami in russia

ব্যুরো নিউজ ১ আগস্ট : চলতি বছর যেন ভূমিকম্পের আতঙ্ক নিয়েই শুরু হয়েছে। একের পর এক দেশ কেঁপে উঠেছে শক্তিশালী কম্পনে। সেই তালিকায় এবার নাম লেখাল রাশিয়া। ৩০ জুলাই ভোররাতে রাশিয়ার কামচাটকা                                                           উপদ্বীপের কাছে ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে, যা বিগত এক দশকে দেশের অন্যতম ভয়াবহ কম্পন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে, ফলে সুনামির আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের একাধিক দেশে।

 বিশ্বজুড়ে ছড়াল সুনামির আতঙ্ক

রাশিয়ায় কম্পনের ঠিক পরপরই একাধিক উপকূলবর্তী অঞ্চলে সুনামির প্রথম ঢেউ দেখা দেয়। রাশিয়ার কামচাটকা, সের্গেই, লেবেডেভ অঞ্চলে জলস্তরের তীব্র ওঠানামা, রাস্তায় চওড়া ফাটল এবং ঘরবাড়ি জলে ডুবে যাওয়ার দৃশ্য আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। এখনো পর্যন্ত ২০০-র বেশি মানুষ বিপন্ন, তবে বড়সড় প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে, ভূমিকম্পের তীব্রতা এতটাই ছিল যে তাৎক্ষণিকভাবে জারি করা হয়েছে সুনামি সতর্কতা। সুনামির সতর্কতায় রয়েছে জাপান, আমেরিকা, নিউজিল্যান্ড, পেরু, চিলি, ফিলিপিন্স, দক্ষিণ কোরিয়া, চিনসহ একাধিক দেশ। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে জারি হয়েছে সতর্কতা বার্তা। বিশেষ করে জাপানের হোক্কাইডো, যেখানে প্রায় ১.৩ ফুট উচ্চতার প্রথম ঢেউ এসে পৌঁছেছে।

 বিপুল পরিমাণ বাসিন্দাকে সরানোর নির্দেশ

জাপানের উপকূলবর্তী এলাকা থেকে ইতিমধ্যেই প্রায় ৯ লক্ষ মানুষের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। স্থানীয় আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, জাপানের উত্তর ও পূর্ব উপকূলে এখনো বড় ঢেউ আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১১ সালের স্মরণীয় সুনামি-ভূমিকম্পের দুঃস্বপ্নের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রশাসন কোনও ঝুঁকি নিচ্ছে না।

১ অগস্ট থেকে কমল বাণিজ্যিক এলপিজির দাম

আরও উদ্বেগের বিষয়, জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্রে তেজস্ক্রিয়তার সম্ভাবনা ঘিরেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অতীতে পারমাণবিক চুল্লির ক্ষতি ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছিল, তাই এবার আগেভাগেই ব্যবস্থা নেওয়ার তৎপরতা চলছে।

 আমেরিকায় সতর্কতা, ৩–৪ ফুট ঢেউয়ের সম্ভাবনা

সুনামির প্রভাব পড়তে পারে আমেরিকার পশ্চিম উপকূলেও। ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস, সান ডিয়েগোর উপকূলীয় এলাকায়। সমুদ্র উপকূলের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, সামোয়া, পাপুয়া নিউগিনি, নিউ ক্যালেডোনিয়া, কিরিবাতি, ফিজি— এমনকি দক্ষিণ আমেরিকার চিলি, পেরু ও কোস্টারিকা-তেও সুনামির সম্ভাবনা রয়েছে। এইসব অঞ্চলে সমুদ্রের ঢেউ ৩–৪ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে বলে জানাচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুনামি সতর্কতা কেন্দ্র (PTWC)।

হাজির নন রাজ্যের প্রধান আইনজীবী, ছাত্র সংসদ মামলায় !

 ভূমিকম্প-সুনামির চেইন রিঅ্যাকশন?

বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ায় এই প্রবল ভূমিকম্প একটি “মেগাথ্রাস্ট” ইভেন্ট, যার ফলে সমুদ্রতলের বিশাল অংশ এক মুহূর্তে স্থানচ্যুত হয়। এর ফলেই তৈরি হয় সুনামির ঢেউ। এই ধরনের ভূমিকম্প সচরাচর ঘটে না এবং যখন ঘটে, তখন তা বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বর্তমানে ভূমিকম্প বিজ্ঞানীরা বিশ্বব্যাপী সিসমোডেটা পর্যবেক্ষণ করছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, একই টেকটোনিক প্লেট সিস্টেমে থাকা একাধিক দেশে এই কম্পনের প্রভাব পরবর্তী কয়েক দিনে দেখা দিতে পারে। ফলে, নতুন করে কম্পনের সতর্কতা জারি হতে পারে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, এমনকি ভারতের আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জেও।

 কী করবেন এই পরিস্থিতিতে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা সুনামি-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করেন, তাদের উচিত:

  • প্রশাসনের দেওয়া সুনামি সতর্কতা মেনে চলা

  • উচ্চভূমিতে সরে যাওয়া

  • ব্যাগে প্রাথমিক ওষুধ, খাবার, জল ও টর্চ সঙ্গে রাখা

  • মোবাইল ও পাওয়ার ব্যাংক চার্জে রাখা

  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর গুজব এড়িয়ে চলা

এই পরিস্থিতিতে প্রতিটি দেশের প্রশাসনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলায় যতটা সম্ভব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করাই একমাত্র উপায়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর