ব্যুরো নিউজ ৩১ জুলাই ২০২৫ : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ আর মারকোস জুনিয়র ৪ থেকে ৮ আগস্ট ভারত সফরে আসছেন বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রেসিডেন্ট মারকোসের সঙ্গে ফার্স্ট লেডি লুইস আরানেটা মারকোস, মন্ত্রিসভার সদস্য, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বেশ কয়েকজন ব্যবসায়িক প্রতিনিধিও থাকবেন।
২০২২ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি প্রেসিডেন্ট মারকোসের ভারতে প্রথম আনুষ্ঠানিক সফর। এই সফরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে তাঁর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। প্রেসিডেন্ট মারকোস রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গেও দেখা করবেন এবং বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সফরের অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ফিলিপাইনে ফেরার আগে বেঙ্গালুরু পরিদর্শন করবেন।
৭৫ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ক ও ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্ব
ভারত ও ফিলিপাইনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ১৯৪৯ সালের নভেম্বরে স্থাপিত হয়েছিল। বিগত বছরগুলোতে এই অংশীদারিত্ব বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, সামুদ্রিক সহযোগিতা, কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত হয়েছে। দুটি দেশ আঞ্চলিক স্তরেও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বজায় রাখে, বিশেষ করে আসিয়ান-এর সঙ্গে ভারতের ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বের মাধ্যমে।
ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনের সঙ্গে সম্পর্ক
ফিলিপাইনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তার ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’, ‘ভিশন মহাসাগর’ এবং বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উল্লেখ্য, এই উচ্চ পর্যায়ের সফরটি দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বার্ষিকীর সঙ্গে মিলে যাচ্ছে, যা উভয় পক্ষকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গভীর করার এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে ঐকমত্যে পৌঁছানোর একটি মূল্যবান সুযোগ করে দিচ্ছে।
ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার ও ভ্রমণ আগ্রহ বৃদ্ধি
ভিসা প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যাটফর্ম অ্যাটলাইসের মতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ভিসা-মুক্ত প্রবেশের ঘোষণা করার পর ভারত থেকে ফিলিপাইনে ভ্রমণের অনুসন্ধানের পরিমাণ ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফিলিপাইন সম্প্রতি ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ১৪ দিন পর্যন্ত থাকার জন্য ভিসা-মুক্ত প্রবেশের ঘোষণা করেছিল। এর আগে, ফিলিপাইন ভারতীয় ভ্রমণকারীদের মধ্যে অ্যাটলাইস প্ল্যাটফর্মে অষ্টম সর্বাধিক অনুসন্ধানকৃত দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় গন্তব্য ছিল।
PM Modi : ভারতীয় জননেতা এবং ব্রিটিশ রাজার কথোপকথন, ‘এক পেড় মা কে নাম’ , ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে ইংরেজি বার্তা !
ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব: দক্ষিণ চীন সাগর ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা
উল্লেখযোগ্যভাবে, ফিলিপাইন দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির মধ্যে একটি। এছাড়া জাপান, কোরিয়া এবং তাইওয়ানও এই অঞ্চলে অবস্থিত। এই সমস্ত দেশ প্রধানত চীনের আধিপত্যের বিরোধী। কোরিয়ার উত্তর অংশ যদিও বাম স্বৈরাচারে চলে এবং চীনের মিত্র, কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া পশ্চিমা-পন্থী। ফিলিপাইন চীন বিরোধী হওয়ায় পশ্চিমা দেশগুলির কাছে বাণিজ্যিক এবং সামরিক সুরক্ষার আশায় থাকে, তবে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকার কারণে, বলিষ্ঠ সাহায্যের ব্যবস্থা করে উঠতে পারে না। ইদানীং, ভারতের মোদি সরকারের আমলে ফিলিপাইনকে বিপুল পরিমাণে সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো শুরু করেছে ভারত এবং তা সেই দেশটির সামর্থ্যের মধ্যে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে ব্রাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম সংস্করণ, যা ফিলিপাইনের মতো দেশের জন্য তার নিকটতম সংকট চীনকে মোকাবিলায় যথেষ্ট। এরপরেও, আরও বহুমুখী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আশায় এবং ভারতের দক্ষিণ চীন সমুদ্রে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করেই ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টের এই দেশে যাত্রা, বলে মনে করা হচ্ছে।